• E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

×

জাতীয় ফুল শাপলা: বইয়ে আছে, বাস্তবে বিলুপ্তির পথে লাল-সাদা শাপলা

  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৬ পড়েছেন

কয়রা(খুলনা)প্রতিনিধিঃ

শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে জাতীয় ফুল শাপলা। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে এ ফুল। ছোট বড় সবার কাছে সমাদৃত। লাল কিংবা সাদা শাপলা ফুল দেখে মুগ্ধ হন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। এক সময় পুকুর, খাল, বিল ও জলাশয়গুলোতে তাকালেই বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে চোখে পড়ত লাল ও সাদা শাপলা। যে কোন ডোবা নালায় জন্ম নিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শাপলার সৌন্দর্য দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসত। বর্ষা থেকে শীত পর্যন্ত ওইসব জায়গাতে প্রাকৃতিকভাবে শাপলা জন্মাতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। অথচ অযত্ন ও অবহেলায় কয়রা উপজেলার খাল—বিল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে শাপলা। কিন্তু আফসোস! প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব , মানব সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় বিলুপ্ত হচ্ছে মুক্ত জলাশয় এবং হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। মানুষের প্রয়োজনে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর , মাছের ঘের বানানোর ফলে প্রাকৃতিকভাবে শাপলা জন্মানোর জায়গা কমে আসছে। তাছাড়া জমিতে আগাছা নিধনের নামে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার কারনে বিলুপ্তির পথে শাপলা। শাপলা ফুলের সেই সমারোহ আর চোখে পড়ে না। দিনে দিনে শালুক যেন একেবারে বিলুপ্তি হতে যাচ্ছে।

শাপলার রুপ দেখে জুড়িয়ে যেত চোখ। গ্রামের শিশু কিশোররা সকাল থেকে মাঠ ও বিল ঝিল থেকে সংগ্রহ করতো শাপলা ফুল। আর বাড়িতে এসে সেই শাপলা গলায় মালা হিসেবে ব্যবহার করতো। আবার গ্রামের অনেক পরিবারের খাদ্য তালিকায় যুক্ত ছিল শাপলা ফুল ও ডাটা। আবার শাপলার ঢ্যাপ দিয়ে অনেকেই খই বানিয়ে খেত। শালুক আগুনে পুড়িয়ে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। আগের দিনে শরতের শেষে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে বিল জুড়ে শালুক তোলার ধুম পড়ে যেত। শালুক পোড়া গন্ধ এখনো প্রবীনদের শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু এই চরিত্র এখন বিরল।

পঞ্চম শ্রেনির ছাত্রী পুষ্প জানায়, সে প্রথমে বইয়ে শাপলা ফুল দেখেছিল। ছোট বেলা থেকে মা বাবার সাথে ঢাকায় থাকত। বইতে পড়েছিল জাতীয় ফুল শাপলা কিন্তু তা দেখা হয়নি। এখন গ্রামে দাদা বাড়ি এসে বাস্তবে দেখছে, নিজের গ্রামেই এমন বাহারি শাপলা ফুল আছে, যা দেখে সে খুব খুশি। প্রতিদিন এখানে এসে শাপলা ফুল দেখে।

বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসান বলেন, সাধারণত শাপলা সাদা, হলুদ ও লাল তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাদা শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল শাপলা ঔষধি কাজে ব্যবহারিত হয়। সবজি হিসেবে শাপলার পুষ্টিগুণ অনেক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় আছে ১.৩ গ্রাম খনিজ পদার্ত, ৮.৭ গ্রাম অ্যা, ১৪২ কিলো খাদ্যপ্রাণ, ৩.১ গ্রাম ক্যালরি, প্রোটিন, ৩১.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৫২ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম, ফসফরাস ০.৩২, নাইট্রোজেন ৩৫.৪ সোডিয়াম ১.১৯ পটাশিয়াম ২.২৩ ভাগ।

শ্রীরামপুর গ্রামের আঃ হালিম বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে কুল তোলার খালে চারদিকে ফুটন্ত সাদা এবং লাল শাপলার সমারোহ । মনে হতো এ যেন শাপলা ফুলের জগৎ। আগে আমাদের বড় পকুর, কুল তোলা খাল, আবাদের বিল, যদুর বিলে ডোবা নালায় বাড়িতে থেকে দড়ি দিয়ে মা পাঠাতো শাপলা তুলে আনতে। তখন গ্রামের ছেলে মেয়েরা সাঁতার কেটে এ ফুল তুলে আনত। শাপলাকে দুভাবে কেটে কেটে মালার মত করে একজন আরেকজন গলায় পরিয়ে দিত। প্রায় দুপুরে গোসলের আগে খাল থেকে শাপলা তুলে আনতাম । মা ডাটা দিয়ে তরকারি আর ঢ্যাপ দিয়ে ভাত রান্না করত। খেতে খুবই মজা ছিল।

মহারাজপুর গ্রামের পরোপকারি মহিলা আকলিমা খাতুন। যাকে সবাই এক নামে ভদি বলে চেনে। তার কাজ এলাকার কোন বাড়িতে সমস্যা হল তাদের কি আনতে হবে কোথায় যেতে হবে। সেই সব কাজ বিনা স্বার্থে নিজ গরজে করত। ৭০ বছরের এই বৃদ্ধার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিয়ের পর শশুর বাড়িতে মানানতারের সময় তিন বেলা ভাত জুটত না। কোনো রকমে যদি দুডো ভাত হুতু তা তরকার হুতু না। কি করব ছ্যালি পিলি না খ্যায়ি থাকে তাই বিলি যাতাম ঢ্যাপ (শাপলার ফল) তুলতি। সেই ঢ্যাপ দিয়ে ভাত রানতাম আর শাপলা ফুলির নরম ডাটা দিয়ে তরকারি র‌্যান্দি খাতাম। শাপলা ফুল সবসময় তুলি আ্যানি তা লোকের দিতি দিতি আমার তা থ্যাকতু না। আমি আবার ঐ দুকুরি রোদি গিয়ে কুল তোলার খালে থেকে শাপলা ফুল , ঢ্যাপ আর ডাটা তুলি আনতাম। খুব ভাল ল্যাগদো। আচ্ছা বাছা একন আর সে শাপলা ফুল, ঢ্যাপ, শালুক দেকিনি। আগে য্যানে স্যানে থ্যাকতু।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এখন আগের মত বর্ষা হয় না। খাল বিল বিলীন, জমিিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক জলাভুমি ধ্বংসই এ সুস্বাদু শাপলা ও ঢ্যাপ বিলুপ্তির কারন। তিনি বলেন, শাপলার মাটির নিচের মূল অংশকে আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে। নভেম্বরে ডিসেম্বর মাসে বিলের পানি যখন কমে যায়তখন গ্রামের অনেক মানুষ শালুক তুলে বাজারে বিক্রি করতেন। প্রায় তখন বাজারে শাপলা ফুলের নরম ডাটা আটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করত। এখন গ্রামে বিক্রি করতে দেখা যায়না। তবে শহরে মাঝে মধ্যে বাজারে শাপলার ডাটা বিক্রি করতে চোখে পড়ে। খাল বিল শুকিয়ে যাওয়ার কারনে শাপলা জন্মানো ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA