বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন
দৈনিক দেশ সংযোগে সংবাদ প্রকাশের পরে খুলনা নিরালা আবাসিক এলাকায় সরকারি খালের উপর নির্মিত ভবন অপসারণ করেছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। গত ৯ মে দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকায় “নগরীতে কেডিএ সদস্যের নিয়ম বর্হিভূত ভবন নির্মান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের সূত্র ধরে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একাধিকবার সভা করেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরের সাথে আলোচনা শেষে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক সোমবার (২০ মে) সকালে কেডিএ’র পরিচালনা বোর্ডের স্থায়ী সদস্য শবনম সাবা ও অথরাইজড অফিসার জি. এম. মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম অবৈধ স্থাপনা ও নকশা বর্হিভুতভাবে নির্মিত ভবনের উচ্ছেদে অভিযান চালায়। এ সময় নিরালা আবাসিক এলাকার ১৮নং রোডের প্রকৌশলী শওকত আলীর ৩৫৫নং প্লটের পিছনে খালের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নির্মাণাধীন একতলা ভবনের দেওয়ালগুলো ভেঙ্গে অপসারন করা হয় এবং ছাদসহ ভবনের অবশিষ্ট অংশ অপসারন করে নেওয়ার জন্য ভবন মালিককে ১৫ দিন সময় প্রদান করা হয়। একই সাথে ভবিষ্যতে এ ধরণের স্থাপনা নির্মান থেকে সতর্ক থাকার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়।
এ উচ্ছেদ অভিযানের সময় কেডিএ’র বৈষয়িক অফিসার এম. কে সাদ, নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মোরতোজা আল মামুন, পরিকল্পনা অফিসার তানভীর আহমেদ ও ইমারত পরিদর্শকগণসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যগণ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও নিরালা আবাসিক এলাকাসহ নগরীতে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে তারা। সোমবার সকাল থেকে দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালনা করেন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
কেডিএ’র পরিচালনা বোর্ডের স্থায়ী সদস্য শবনম সাবা ও অথরাইজড অফিসার মো: মাসুদুর রহমান জানান, দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও অভিযোগের সূত্র ধরে কেডিএ’র চেয়ারম্যানের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করে নকশা বর্হিভুতভাবে ভবন নির্মানের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে ভবনের বর্ধিত অংশ অপসারনের জন্য ভবন মালিককে নোটিশ দেয় কেডিএ। কিন্তু সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় সোমবার কেডিএ কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে নিরালা আবাসিক এলাকার ৩৫৫নং প্লটের পিছনে খালের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নির্মাণাধীন একতলা ভবনের দেওয়ালগুলো ভেঙ্গে অপসারন করা হয় এবং ছাদসহ ভবনের অবশিষ্ট অংশ অপসানের জন্য ভবন মালিককে ১৫দিন সময় প্রদান করা হয়। এছাড়া উক্ত প্লটের ০৯তলা ভবনটির পিছন দিকের খেলাপী অংশ লাল রং দ্বারা চিহ্নিত করে তা অপসারনের জন্য সময় প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া কেডিএ’র মহাপরিকল্পনাধীন এলাকা খুলনা সদর থানার অর্ন্তগত বানিয়াখামার মৌজাধীন কেডিএ নিরালা আবাসিক এলাকার ১নং সড়কের ’কেডিএ থ্রী লিংক রোড’ প্রকল্পের আওতায় নিরালা দিঘীর পাড় সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা সেমিপাকা ২০টি দোকান ঘর উচ্ছেদ করা হয়। তারা আরও জানান, পরিকল্পিত নগরায়নের স্বার্থে ভবিষ্যতেও এ ধরণের অননুমোদিত, খেলাপী ও অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। তাই পরিকল্পিত খুলনা গড়ার প্রত্যয়ে ও ভবন মালিকগণের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পরিহারের লক্ষ্যে নকশা অনুমোদন ব্যতীত ও নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে এবং অবৈধ দখলদারিত্বের মাধ্যমে যে কোন নির্মাণ কাজ হতে বিরত থাকতে সকলকে আহবান জানান।
অভিযোগের সূত্রে ও সরেজমিন পরির্দশনে জানা গেছে, খুলনা নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডের নিরালা আবাসিক এলাকা ও নির্জন আবাসিক এলাকার মাঝখান দিয়ে একটি সরকারী খাল বয়ে গেছে। এ খালের পাশ দিয়ে নিরালা আবাসিক এলাকার ১৮ নম্বর রোডে কেডিএর কয়েকটি প্লটের বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এ সকল প্লটের মধ্যে ৩৫৫নং প্লট হোল্ডিংয়ের মালিক কেডিএ বোর্ড মেম্বার ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স) শেখ শওকত আলী। তিনি একটি ৯তলা ভবন নির্মাণ করছেন। তিনি ভবনটির পিছনের অংশে সরকারী খালের জায়গা ভরাট করে নকশা বর্হিভূত ও বেআইনিভাবে ভবনের বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কেডিএ’র বোর্ড মেম্বর শওকত আলীর নকশা বর্হিভূত ভবন নির্মানের দেখাদেখি অন্যান্যরা তাদের ভবনের পিছনের অংশে সরকারী খালের জায়গা দখল করে কেডিএর অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করছে। একই সাথে কেডিএ’র মতো সরকারের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্য হয়েও অনুমোদন ছাড়া সরকারী খালের জায়গা দখল ও নকশা বর্হিভূতভাবে ভবন নির্মাণ করায় এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একইসাথে কেডিএ বোর্ড মেম্বার প্রকৌশলী শেখ শওকত আলীসহ অবৈধ ভবন নির্মান ও খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবীও জানান এলাকাবাসী। এ বিষয়ে খুলনা নাগরিক সমাজের নেতা এ্যাড. কুদরত-ই খুদা ও খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত খাল দখল করে ও নকশা বর্হিভুতভাবে নির্মিত ভবন তদন্তপূর্বক উচ্ছেদের দাবী জানান।
কেডিএ’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস.এম মিরাজুল ইসলাম বলেন, কেডিএ’র আওতাভুক্ত এলাকায় কোন ভবন ও স্থাপনা নির্মান করতে হলে আইন ও বিধি বিধান মেনেই করতে হবে। যেই হোক না কেন ভবন নির্মানের নকশা ও বিধিমালা না মানলে ছাড় দেয়া হবে না। ##
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA