• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

×

অর্থবছরের সাত মাস বাণিজ্যিক ব্যাংকের ডলার রিজার্ভ কমেছে ১ বিলিয়নের বেশি

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২২ মে, ২০২৪
  • ৭৫ পড়েছেন

বিশেষ প্রতিবেদক :
দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমদানি দায় ও ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের বিদেশী হিসাবে (নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট) ডলার জমা রাখে। গত অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা ডলারের রিজার্ভ বেড়েছিল ৬ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরে তা ক্রমেই নি¤œমুখী। বিশেষ করে গত সাত মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ কমেছে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকগুলোর দায় পরিশোধের তুলনায় ডলার প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া সোয়াপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার সরবরাহের কারণেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত এপ্রিল শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা ডলারের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫০৪ কোটি ৭৩ লাখ, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৪৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ডলার স্থিতি ছিল ৫৯০ কোটি ৫ লাখ। এর পরের মাস আগস্টে তা কিছুটা কমে ৫৮০ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি ৬১৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার ছিল। এরপর থেকে তা ক্রমেই কমতে থাকে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে ৫৯২ কোটি ৪০ লাখ, নভেম্বরে ৫৯৭ কোটি ৯ লাখ, ডিসেম্বরে ৫৫৫ কোটি ৯৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৫৮৪ কোটি ৪২ লাখ, ফেব্রæয়ারিতে ৫৫৩ কোটি ৪৫ লাখ ও মার্চে ৫৪৩ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের রিজার্ভ ছিল দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে। জুলাই-মার্চ সময়ে ৪৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল ৫৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আমদানি কমার বিপরীতে এ সময় অবশ্য দেশের রফতানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রফতানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৪৫ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের। সে হিসাবে এ সময়ে রফতানি বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ উৎস রেমিট্যান্স আহরণও কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ১৯ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৭ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স। আমদানি কমার বিপরীতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও দেশের রিজার্ভ ক্রমেই নি¤œমুখী। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসারে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ গত এপ্রিল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভ ক্ষয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক হিসাবের ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এ ঘাটতি ৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক হিসাবে এ ঘাটতিকে উসকে দিয়েছে রফতানির অপ্রত্যাবাসিত অর্থ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে নিট ট্রেড ক্রেডিট ছিল ঋণাত্মক ১২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। দেখা যাচ্ছে, রফতানির পরিমাণ বাড়লেও এর বড় একটি অংশ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাচ্ছে, যার প্রভাবে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বাড়ছে ও রিজার্ভে ক্ষয় হচ্ছে। সরকার বর্তমানে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়ার চেয়ে পরিশোধ করছে বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে নিট বিদেশী ঋণ ছিল ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা সত্তে¡ও দায় মেটাতে ব্যাংকগুলোকে কিছু ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। অন্যদিকে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত মাত্রায় ডলার আসছে না। এ কারণেই ব্যাংকগুলোর ডলারের রিজার্ভ কমে গেছে। কমেছে তাদের দায় শোধের সক্ষমতাও। যদিও দায় সামনে আরো বাড়বে।’ এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দূরদর্শী নীতি গ্রহণ জরুরি জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘ডলারের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, কোনো কারণে যেন এ থেকে পিছিয়ে না আসা হয়। তবে এটি একটি মধ্যবর্তী পন্থা, শেষ পর্যন্ত আমাদের পুরোপুরি বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের দিকেই যেতে হবে। এতে হয়তো একলাফে ডলারের দাম বেড়ে যাবে, কিন্তু পরিস্থিতি উত্তরণে এটি সহ্য করতে হবে আমাদের। ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হয়ে গেলে রফতানি অর্থ প্রত্যাবাসনে গতি আসবে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যদি ডলারের প্রবাহ বাড়ে তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’ এদিকে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এতে উৎসাহ দিচ্ছে। প্রবাসীদের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ উৎসাহিত করতে বর্তমানে দেশের ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। ডলার সংকটের মধ্যে একসঙ্গে এত ব্যাংক এমডির বিদেশ সফর নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা-সমালোচনাও চলছে বেশ। তাই এ বিষয়ে ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিবি) এক বিবৃতি দিয়েছে। সংগঠনটির চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন স্বাক্ষরিত সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিজ (ডিওজে) ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি সংলাপের আয়োজন করেছে। ২০-২৩ মে আয়োজিত এ ষষ্ঠ বার্ষিক ইউএস-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ব্যাংকিং সংলাপে বাংলাদেশের ২৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে অংশ নিতে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ডিওজের এ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর অগ্রণী, ব্র্যাক, সিটি ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডিরা নিউইয়র্কে অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট প্রোডাক্টসের প্রসারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। চার ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ডলার ডিপোজিট আহরণের এ প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসির মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের ব্যাংকিং সংলাপটির কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আমন্ত্রণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। পাশাপাশি চার ব্যাংক মিলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ কার্যক্রমকে প্রসারিত করতে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে ৩০০-৩৫০ বাংলাদেশী ও বিদেশীরা থাকবেন। দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে।’

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA