• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

×

শিমুল ভূঁইয়া দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের মূর্তমান আতংকের নাম

  • প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪
  • ১০৭ পড়েছেন
ছবি সংগ্রহীত

কাজী অনিরুদ্ধ :
# আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির রূপকার মোফাখ্খারুলের হাত ধরেই সন্ত্রাসী জগতে প্রবেশ।
# তিন থানায় হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরকসহ মোট ৮টি মামলার রেকর্ড।
# আধ্যিপত্য নিয়ে একই পরিবারের তিন চেয়ারম্যানকে হত্যা করা হয়।
# গোটা ফুলতলা ভূইয়া পরিবারের নিয়ন্ত্রণে।
# রাজনৈতিক শেল্টারে থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছেন এই শীর্ষ চরমপন্থী।
# শিমুল ভুঁইয়ার ফুফাতো ভাই প্রবাসী আক্তারুজ্জামান পলাতক।
# কখনো আমানুল্লাহ সাঈদ, শিহাব কখনো ফজল মোল্লা বহুরূপী শিমুল ভুঁইয়া।

ঝিনাইদহ—৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থী শিমুল ভূঁইয়ার নাম এখন সকলের মুখে মুখে। এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে যশোর সদর, অভয়নগর ও ফুলতলা থানায় হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরকসহ মোট ৮টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের মূর্তমান আতংক এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেম, তার বড় ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদল ও ছোট ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন প্রার্থী ও একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেনকে হত্যা করে লাইম লাইটে আসে শিমুল ভূঁইয়া। এছাড়া শীর্ষ চরমপন্থী ইমান আলী ও গণেশসহ অসংখ্য হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে ভূঁইয়া পরিবারের কথায় চলে ফুলতলা উপজেলা প্রশাসন। এলাকার রাজনীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ এখন ভূঁইয়া পরিবারের হাতে। ঝিনাইদহ—৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন শিমুল ভূঁইয়া, তার স্ত্রী সাবিনা মুক্তা এবং ভাইপো তানভীর ভুইয়া। এরপরই এই পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে এলাকাবাসী। যেভাবে শিমুল ভূইয়ার উত্থান চাচা প্রয়াত হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ছিলেন ওয়ার্কার্স পিার্টর শীর্ষ নেতা। খুলনার বিএল কলেজে এবং রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার কথা পরিবারের থেকে বলা হলেও ছোটবেলা থেকে তিনি সন্ত্রাসী এবং অনেক মামলার আসামি। তার ঘনিষ্টজনেরা জানান, শিমুল ভূঁইয়া প্রথমে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাজনীতি করতেন এবং তিনি বাংলায় অনার্স, মাস্টার্স শেষ করেন। তার ছোট ভগ্নিপতি ছিলেন আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির অন্যতম রূপকার ও পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল) এবং ভাগ হয়ে যাওয়া জনযুদ্ধের প্রতিষ্ঠাতা তাত্ত্বিক নেতা মোফাখ্খারুল ইসলাম। তার হাত ধরেই তিনি আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতির সঙেগ জড়িয়ে পড়েন এবং পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এম এল) বিভাগীয় শামরিক শাখার প্রধান হন। ১৯৯১ সালে যশোর জেলার অভয়নগর থানা এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী গণেশকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে লাইম লাইটে আসেন শিমুল ভূঁইয়া। এ মামলায় তিনি দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। ২০০২ সালে তিনি ইমান আলী নামে আরেক র্শীষ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেন। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে মোফাখ্খারুল ইসলামের নির্দেশে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এম এল) ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির (এম এল জনযুদ্ধ) আত্মপ্রকাশ করে। তখন জনযুদ্ধের বিভাগীয় সামরিক শাখার দায়িত্ব পান শিমুল ভূঁইয়া। তার সেকেন্ড ইন কমান্ডকরা হয় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে দাদা তপনকে। সংগঠনটি ‘প্রচারই প্রসার’ স্লোগানকে সামনে রেখে হত্যা, চাদাবাজি করে দায় স্বীকার করার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে। একই বছর ২৫ আগষ্ট খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমামকে নিজ বাড়ীর অদুরে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে শিমুল ভূঁইয়া ও দাদা তপনের নাম ছড়িয়ে পড়ে। শিমুল ভূইয়ার হাতে একই পরিবারের তিন চেয়ারম্যান খুন ঃ খুলনার ফুলতলায় উপজেলার কর্তৃত্ব নিয়ে ভূইয়া পরিবারের সাথে সরদার পরিবারের বিরোধ প্রায় তিন যুগ ধরে। এ উপজেলায় সরদার পরিবারের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আধিপত্যের কারণে ১৯৯৮ সালের ১৮ আগষ্ট হত্যা করা হয় উপজেলার দামোদর ইউপির চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা সরদার আবুল কাশেমকে। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে বসে থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী শিমুল ভূইয়া তার ক্যাডার বাহিনি নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজেই মাথায় গুলি করে হত্যা মিশন সফল করেন। এরপর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তারই বড় ছেলে সরদার আবু সাঈদ বাদল। ২০১০ সালের ১৬ আগষ্ট নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে সরদার আবু সাঈদ বাদলকে হত্যা করা হয়। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেন শিমুল ভূইয়া ও তার ক্যাডার বাহিনী। এদুটি হত্যা মামলার বাদী ছিলেন সরদার আবুল কাশেমের ছোট ছেলে সরদার আলাউদ্দিন মিঠু। তিনি বিপুল ভোটে ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ২০১৭ সালের ২৬ মে রাতে নিজ অফিসে বসে থাকা অবস্থায় সরদার আলাউদ্দিন মিঠুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ডিবি পুলিশের পোশাক পড়ে হত্যাকারীরা কিলিং মিশনে অংশ নেয়। এ হত্যা মামলায় পুলিশী তদন্তে নেপথ্যের গড ফাদার হিসেবে ফুলতলার বর্তমান নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফুলতলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন এবং শিমুল ভূইয়ার ছোট ভাই দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান শরিফ মোঃ শিপলু ভূইয়ার নাম আসে। অভিযোগ রয়েছে ভূইয়া পরিবারের গড ফাদার হয়ে বর্তমানে কাজ করছেন ফুলতলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন। ভূইয়া পরিবারের আধিপত্য  একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মৃত নাসির ভুইয়ার ৬ ছেলে ও ২ মেয়ে। পুলিশে চাকরিজীবী একজন বাদে সব ছেলেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। মেজ ছেলে বকুল ভূইয়া ফুলতলায় ইজিবাইক, সিএনজি ও অন্যান্য পরিবহন খাত থেকে নিয়মিত থেকে চাঁদা আদায় করেন। সেজ ছেলে মুকুল ভূঁইয়া ওরফে হাতকাটা মুকুল ২০০৪ সালে ক্রসফায়ারে নিহত হন। এই শীর্ষ সন্ত্রাসী বেচেঁ থাকাকালে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে দুই হাত হারায়। কিন্তু হাতের কনুই দিয়ে অস্ত্র চালাতে পারতেন। তার লক্ষ্যভ্রষ্ট ছিল নির্ভুল। টার্গেট মিস হতো না। এরপর রয়েছেন বর্তমান দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়া। তার পরেই আরেক সন্ত্রাসী টিপলু ভূইয়া। ছোট ছেলে শরিফ মোহাম্ম শিপলু ভূঁইয়া দামোদও ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু হত্যার সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। রাজনৈতিক শেল্টারে শিমুল ভূইয়া ঃ দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থীদের আধ্যিপত্য এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। জনযুদ্ধের প্রতিষ্ঠাতা তাত্ত্বিক নেতা মোফাখ্খারুল ইসলাম, বিভাগীয় সামরিক শাখার প্রধান এবং পরবর্তী পার্টি প্রধান আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে দাদা তপন, আবির হাসান, অমিত হাসান, শোয়েব, সুমন, ইকবাল হোসেন সৈকত, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পাটির (এম এল) আব্দুর রশিদ, নিউ বিপ্লবি কমিউনিষ্ট পার্টিও প্রধান মৃণালসহ অসংখ্য র্শীষ সন্ত্রাসী ক্রসফায়ার, একে অপরের গুলিতে নিহত হলেও শীর্ষ সন্ত্রাসী শিমুল ভূইয়া রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার অনুগত সন্ত্রাসীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। জাতীয় পার্টির শাসনামল থেকে বিভিন্ন সরকার পরির্বতন হলেও শিমুল ভূঁইয়াকে কেউ আঘাত করতে পারেনি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় বড় অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শিমুলের বিরুদ্ধে ৮ মামলার রেকর্ড- ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শিমুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যশোর সদর, অভয়নগর ও ফুলতলা থানায় এ পর্যন্ত ৮টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। এরমধ্যে দুটি হত্যা এবং চাদাঁবাজি, অপহরণ ও বিস্ফোরক আইনে মামলা রয়েছে। এছাড়া আরো মামলা আছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। খুলনার পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমান বলেন, শিমুল ভূঁইয়ার গ্রেফতারের বিষয়ে আমাদের কোন জানা নেই। শিমুল ভুঁইয়ার ফুফাতো ভাই প্রবাসী আক্তারুজ্জামান পলাতক ।  এদিকে ফুলতলার দামোদর গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশের কাছে চিহ্নিত পলাতক আমেরিকা প্রবাসী মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন সম্পর্কে শিমুল ভুঁইয়ার ফুফাতো ভাই। তবে, পুলিশ এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। কলকাতার নিউ টাউনে যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি এই আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করেছিলেন। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই। বহুরূপী শিমুল ভুঁইয়া ঃ সৈয়দ আমানুল্লাহ, আমানুল্লাহ সাঈদ, শিহাব, ফজল মোল্লা ও ফজলসহ বিভিন্ন ছদ্মনাম রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী শিমুল ভুঁইয়ার। হত্যাকাণ্ডসহ শিমুল ভুঁইয়ার সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ছোট ভাই দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ মোহাম্মদ ভুঁইয়া শিপলু ও বড় ভাই হানিফ মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে লাকি ভুঁইয়ার ছেলে তানভীর ভুঁইয়ার। একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘ দুই যুগের ওপর বাড়ি ছাড়া শিমুল ভুঁইয়া। প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন কেউ তার খবর জানে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামে শিমুল ভুঁইয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘর তালাবদ্ধ। যেন শুনসান নিরবতা। ছোট ভাই শিপলু ভূঁইয়ার বাড়িতেও কারো সাড়া পাওয়া যায়নি। পাশের আরেকটি বাড়িতে বড় ভাই হানিফ মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে লাকি ভুঁইয়া। লাকি ভুঁইয়ার ছেলে তানভীর ভূঁইয়াও সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। লাকি ভুঁইয়ার বাড়িরটিও তালাবদ্ধ। জানালার কপাট খোলা থাকলেও ঘরের মধ্যে কারো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় গিয়েছে— সেটিও জানেন না প্রতিবেশীরা।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA