মোস্তাফিজুর রহমান, কোটচাঁদপুরঃ
পবিত্র ঈদুল আযহার বাকি আর মাত্র ১০ দিন। মধ্যপ্রাচ্চের চাঁদ দেখা অনুযায়ী এবং দেশের চাঁদ দেখা অনুয়াযী আগামী ১৭ জুন হতে পারে পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কামার শিল্পের কারিগররা। কোরবানির পশু জবাই করা ও মাংস কাটার জন্য চাপাতি ছুরি, বটির কদর বেড়েছে। তাই এসব সরঞ্জাম তৈরি, মেরামত ও বিক্রিতে সরগরম কামারপাড়া।
কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাতুড়ির টুং টাং শব্দে সরগরম করে তুলেছেন বিভিন্ন জায়গায় কামাররা। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, ছুরি, কুড়াল, বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রপাতি। কেউ এসেছেন পুরাতন দা, ছুরি, বটি, মেরামত করতে, কেউবা ধার দিতে আবার কেউ কিনছেন নতুন এসব সরঞ্জাম। কামাররা বলছেন, সারা বছর তাদের তেমন আয় রোজগার থাকেনা। কোরবানির ঈদের আগে তাদের আয় বাড়ে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে কামারদের দম ফেলার সময় নেই। পশু জবাই করার সরঞ্জাম বানাতে দিন-রাত চলছে কাজ। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি কাজের জন্য রেখেছেন অতিরিক্ত লোক। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানি উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পের কারিগররা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত চলবে কামারদের এই ব্যস্ততা।
উপজেলার প্রতান্ত অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী কামাররা লোহা থেকে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র। কেউ কেউ ছুরি, চাপাতি, দা ও বটিতে শান দিতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ লোহার টুকরো গরম করে হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন ছুরি, চাপাতি, দা-বটি। কামারদের ঘামে ভেজা শরীরে যেন ক্লান্তি নেই।
কথা হয় কানাই কর্মকারের সঙ্গে। তিনি জানান, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস কয়লা, লোহা এবং ফাইলের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অথচ তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে। কুরবানির ঈদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অর্ডারের পর এখন ডেলিভারি শুরু হয়েছে। এ কারণে তাদের ব্যস্ততাও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, কাজের চাপ বেশি থাকলেও মাঝে মাঝে বিদ্যুতের সমস্যার কারণে ঠিক সময়ে কাজ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া যন্ত্র তৈরির জ্বালানি কয়লার দামও বাড়তি। বর্তমানে ১ মণ কয়লার মূল্য ১ হাজার’ টাকার বেশী। যন্ত্রপাতি তৈরির কাঁচামাল কিনতে হয় প্রতি কেজি ৭০০ টাকা। ১ কেজি লোহার তৈরি একটি দা বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১০০০টাকায়। পৌর এলাকার কলেজ স্টান্ড সরকারি কে এম এইচ কলেজ রোডের স্বপন কর্মকার জানান, ঈদকে ঘিরে শুরু হয়েছে ছুরি, চাপাতি, দা, বটি ও চাকু তৈরির কাজ। গত বছরের তুলনায় এ বছর কয়েকগুণ বেশি বেচাকেনার সম্ভাবনা দেখছেন কামার কারিগরা।তিনি আরও জানান জানান প্রায় দুই যুগ ধরে বাপ-দাদাদের পেশায় কাজ করছেন। ঈদ এলেই কর্মব্যস্ত বেড়ে যায়। আমরাও ঈদের অপেক্ষায় থাকি। ঈদের আয়-রোজগারের টাকায় আমাদের সংসার চলে সারাবছর।
পৌর এলাকার সলেমানপুর গ্রামের অজয় কর্মকার জানান, এ পেশায় পরিশ্রমের চেয়ে মুনাফা অনেক কম। দিনরাত সারাক্ষণ আগুনের পাশে বসে কাজ করতে হয়। তারপরেও গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে দিনরাত একাকার করে কাজ করে চলছি। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হলেও তাদের পৈত্রিক পেশাকে এখনো বুকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তবে ভবিষ্যতে সন্তানদের এ পেশায় জড়াতে চাচ্ছেন না। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
পালপাড়ার মন্টু কর্মকার জানান, ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। তিনি জানান বড় মাপের একটি চাপাতি ১০০০–১২০০ টাকা এবং ছোট মাপের একটি কাটারি ৬০০–৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বড় মাপের একটি বটি ৫০০–৭০০ টাকা এবং ছোট মাপের একটি বটি ৩৫০–৪০০টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ছুরি বড়ো ছোট বুঝে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়।
এক মাসের কাজের উপর তাদের পরিবারের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া জামা-কাপড় সহ বছরের খোরাকি নির্ভর করে। যদিও কামার শিল্পের আনুসাঙ্গিক কয়লা ও লোহার দাম লাগামহীন ভাবে উঠানামা করতে থাকে। তাই কামাররা বাপ-দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে কয়লা ও লোহার দাম নিয়ন্ত্রণ ও সহজ শর্তে ঋনের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। জালাল পুর গ্রামের ক্রেতা আতিয়ার রহমান বলেন, কোরবানির গরুর মাংস কাটার জন্য নতুন চাপাতি কিনতে এসেছি। তৈরি করা তেমন ভালো চাপাতি পাচ্ছি না। তাই দুই কেজি ইস্পাত কিনে নতুন চাপাতি বানাতে দিলাম। আগের চেয়ে দাম দ্বিগুণ।
বলুহর গ্রামের সাবেক মেম্বর মন্টু বলেন, আমার এলাকা কামারের দোকান নেই তাই শহরে এসেছি, এবছর চাপাতি,ছুরি সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দাম অনেক বেশি সাধারণত মানুষের নাগালের বাইরে। তাই পুরাতন তা ধার কাটিয়ে নিলাম।