• E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

×

খাদ্য ব্যবসাকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পদক্ষেপ

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪
  • ২৩ পড়েছেন

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
সবার জন্য বাধ্যতামূলক নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করতে চায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। আর নিবন্ধন দেয়ার ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে চায় সংস্থাটি। এরই মধ্যে তারা এ-বিষয়ক একটি খসড়া প্রবিধানমালা খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন নেয়া ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে অন্তত ২০টি নির্দেশনা মানতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য স্থাপনা নোংরা পরিবেশমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে অবস্থিত হতে হবে; খাদ্য স্থাপনায় পর্যাপ্ত জায়গা থাকতে হবে; পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের পাশাপাশি থাকতে হবে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চলাচলের পর্যাপ্ত জায়গা; ব্যবহৃত পানি নিরাপদ হতে হবে।নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব হলো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন, আমদানি, রফতানি ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে বিএফএসএ থেকে নিবন্ধন নিতে হয় না। এ কারণে এ ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরছে না বলে মনে করছে বিএফএসএ। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (খাদ্য ভোগ ও ভোক্তা অধিকার) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘নিবন্ধন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নীতিগত সিদ্ধান্ত শেষে এ-বিষয়ক একটি প্রবিধানমালা খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় কিছু বিষয় জানতে চেয়েছে। আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা গেলে খাদ্য ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফেরানো সহজ হবে।’ গত ১০ মার্চ পর্যন্ত প্রবিধানমালার বিষয়ে অংশীজনদের মত নেয়া হয়। খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ও জড়িত হতে আগ্রহী সব ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে প্রবিধান অনুযায়ী নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া কেউ খাদ্য ব্যবসা করতে পারবে না। ২০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর নিবন্ধন দেয়া হবে সাত কর্মদিবসের মধ্যে। নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য না হলে সেটিও সাত কর্মদিবসের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হবে। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে তিন বছর। নিবন্ধনের এক বছরের মধ্যে ব্যবসা শুরু না হলে নিবন্ধন বাতিল হবে। নিবন্ধন হস্তান্তর বা পরিবর্তনযোগ্য নয়। বিএফএসএর এক সদস্য বলেন, ‘প্রয়োজনে বিনামূল্যে নিবন্ধন দেয়া হবে। তার পরও খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। লাইসেন্সের আওতায় আনার বিষয়টিও প্রবিধানমালায় ছিল। কিন্তু অন্যান্য অনেক কর্তৃপক্ষ এর বিরোধিতা করেছে। তাই আমরা আপাতত নিবন্ধন নিশ্চিত করতে চাই।’

বিএফএসএ চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া বলেন, ‘খসড়া অনুমোদন হয়েছে। তবে নিবন্ধনের বিকল্প চিন্তাও হয়তো আমাদের করতে হবে। আমরা একটি সমন্বিত লাইসেন্স দিতে চাচ্ছি। আমার জানামতে কারো ফুড লাইসেন্স নেই; অন্য লাইসেন্স হয়তো আছে। সেজন্য আমরা ফুড লাইসেন্সও দিতে চাই। নিবন্ধন ও লাইসেন্স দুটো দুই জিনিস। ছোটখাটো খাদ্য ব্যবসার জন্য নিবন্ধন এবং অন্যদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স দেয়ার প্রবিধান হতে পারে। এখনো বলা যাচ্ছে না, চূড়ান্ত হলেই জানা যাবে।’ প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, বসে খাওয়ার সুবিধা নেই, এমন সব ধরনের খাবারের দোকান, সব ধরনের ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান, সব ধরনের মোড়কজাত খাবারের দোকান, সব ধরনের চা ও কফি স্টল, সব ধরনের ফলের শরবত, পানীয় ইত্যাদি বিক্রির দোকানকে এ
নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিতে হবে সব ধরনের আইসক্রিম ও দুগ্ধজাত পণ্য খুচরা বিক্রির দোকান, উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত খাবারের দোকান, দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার নাড়ু, কদমা, মুরালি, মুড়ি, খই, চিড়া ইত্যাদি উৎপাদনকারী, মোড়কবিহীন খাদ্যপণ্য বিক্রেতা, মিষ্টি তৈরি ও বিক্রির একক কারখানা কিংবা দোকানসহ সব ধরনের খুচরা খাদ্য ব্যবসায়ীকে।বিএফএসএ সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) ড. মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘আমরা খাদ্য নিরাপদ রাখার পাঁচ চাবিকাঠি—পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা; কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখা; সঠিক তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে খাবার রান্না করা; নিরাপদ তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ করা এবং নিরাপদ পানি ও খাদ্য উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই। এ পাঁচ চাবিকাঠি মেনে চললে খাদ্য শতভাগ নিরাপদ হবে। নিবন্ধনের আওতায় এনে এসব বিষয় বাস্তবায়ন করা হবে।’তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অধীনে নিবন্ধন দেয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার। তিনি বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ অধিদপ্তর হতে চাচ্ছে কেন? এটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো পদক্ষেপ। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ হলো অ্যাপেক্স বডি। তারা তো “রুল অব দ্য গেম” ঠিক করে দেবে। তার মাঠে নামতে চাচ্ছে কেন?’সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিবন্ধন দিতে গিয়ে এখন বরং আইন ভঙ্গ হবে। নিবন্ধন ফি ২০০ টাকা আদায় করতে গিয়ে ২ লাখ টাকার একটা পথ তৈরি হচ্ছে। তারা এখন বাস্তবায়ন সংস্থা হতে চায়। অথচ কথা ছিল তারা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে।’তবে বিএফএসএর সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলে স্ট্রিট ফুডের মতো ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরবে। আর নিবন্ধন দেয়াটা বিএফএসএ আইন অনুযায়ী ঠিক আছে।’জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘এটা ভোগান্তির আরেকটা জায়গা তৈরি হচ্ছে। ঘাটে-ঘাটে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে সব কর্তৃপক্ষ একটা সিঙ্গেল উইন্ডো থেকে সেবা দিক; নতুন করে নিবন্ধনের দরকার নেই; যাদের অধীনে নিবন্ধিত, তাদের সঙ্গেই সমন্বয় করুক।’

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA