• E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

×

কোটিপতিরা অনাস্থায় ব্যাংক ছাড়ছেন!

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪
  • ৩০ পড়েছেন

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থারঘাটতি তৈরি হয়েছে। এত দিন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষআস্থাহীনতার কারণে ব্যাংক ছেড়েছেন। এবার তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কোটিপতিরাও। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে কোটি টাকার আমানতকারীদের ব্যাংকঅ্যাকাউন্ট কমেছে এক হাজারের বেশি। পাশাপাশি কোটিপতি অ্যাকাউন্টের আমানতও কমে গেছে। গত তিন মাসে আমানতকমার পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ  ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।দেশে প্রকৃত কোটিপতির সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব থেকেকোটিপতির সংখ্যা নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়। যদিও এসব হিসাবের সবগুলোই কোটিপতি নাগরিকদের তাও নয়। কারণ ব্যাংকের কোটিপতির হিসাবধারীদের মধ্যে ব্যক্তি যেমন আছেন,তেমনি রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবও। সংশ্লিষ্টরা জানান, কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা কমার পেছনে মূলকারণ,অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট বৃদ্ধি। এছাড়া দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ আতঙ্কেও কোটিপতিরা হিসাব গুটিয়ে ফেলতে পারেন। আবার দেশ থেকেঅর্থপাচার বৃদ্ধির কারণেও কোটিপতিদের ব্যাংক হিসাব কমতে পারে।

প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে তথ্য বলছে,গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর হিসাব ছিল১৫ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ২২৭টি। এসব হিসাবের বিপরীতেআমানত জমা হয়েছে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ওপরে এসব ব্যাংক হিসাবে মোট জমা আছে ৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটিটাকার বেশি আমানতের ব্যাংক হিসাব ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। ওই সময় এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ১৮। একই সময়ে এসব হিসাবের বিপরীতে জমা টাকার পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪৭ দশমিক ১০ শতাংশই জমা করেছেন কোটি টাকার হিসাবধারীরা।প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৬২৩টিতে, যেখানে আমানত জমা ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৪৪৬টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৮ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৩৯৬টি,১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৯৬১টি, ২০কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ২২১টি এবং ২৫কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৮৭৫টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০১টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৬০টি, ৪০কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাবসংখ্যা ৬৮১টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮২৬টি।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল মাত্র ৪৭টি, যা ২০১৫ সালেবেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৫১৬টি। করোনা মহামারির শুরুতে ২০২০ সালের মার্চে এই সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫, যা বর্তমানে ১লাখ সাড়ে ১৫ হাজার ৮৯০টিতে দাঁড়িয়েছে।অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ব্যাংক খাত চরম ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

সোমবার নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(নোয়াব) এবং সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। অর্থনীতির সবচেয়ে সংবেদনশীল আর্থিক খাত এখন নিয়ন্ত্রণহীন ও অরক্ষিত অবস্থায় চলে গেছে। বিভিন্ন অনুগতস্বার্থগোষ্ঠীকে ব্যাংক থেকে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে, যার সঙ্গে ক্ষমতার রাজনীতি সম্পৃক্ত। এ ধরনেরপরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে, বিনিয়োগেরপরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সৎ উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হন। পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে আর্থিক খাতসহ কিছু সংবেদনশীল খাতকেক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সুদহারের নয়ছয়ের (ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ) বেড়াজাল নীতি দিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করেছি। সমস্যা এক দিনে তৈরি হয়নি, তাইসমাধানও এক দিনে হবে না। ব্যাংক খাত নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক খাত থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার টাকা পাচ্ছে না, ব্যবসায়ীরাও পাচ্ছেন না। কেন পাচ্ছে না? এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা?বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ মডেলই এখন দেশের জন্য বিজনেস মডেল হয়ে গেছে। আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন, আর ফেরত দেবেন না। এই মডেল চলছে।চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA