রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
খুলনা ডিএনসির অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার খুলনার সবজির বাজারে দামে স্বস্তি;কমেছে গোশ ও মাছের দাম  নির্বাচনের ট্রেন চলছে, কেউ থামাতে পারবে না : ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা আমাকে এমপি না, জনতার সেবা করতে পাঠিয়েছেন : এস এম কামাল হোসেন ডলারের দাম আরও কমলো খুলনায় কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিকী প্রদর্শন খুলনা—১ আসন: জনগণের জন্য কাজ করতে চান সাবেক এমপি ননী গোপাল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অব:) এর খুলনা সফরসূচি বিএনপি নেতার ভাইয়ের ইন্তেকালে শোক মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নোবেল

খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র : উপপ্রকল্প পরিচালকের দুর্নীতির রাজত্ব

মো. শহীদুল হাসান :
  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২
  • ২৭৭ পড়েছেন

খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, শিশু-কিশোরদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূত অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অনিয়ম, দূর্নীতি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব কুমার সাহা। ফলে অনাথ শিশু কিশোরদের জন্যে সরকারের গড়ে তোলা এ মানবিক প্রতিষ্ঠান ধংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। ইতিমধ্যেই উপপ্রকল্প পরিচালকের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, সচিব, সমাজসেবা অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পরিচালক সৈয়দ মো. নুরুল বাসির খুলনা কেন্দ্রের নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব সাহার আর্থিক অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ের সত্যতা পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কনিষ্ঠ সন্তান ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই শেখ রাসেলের নামে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সারাদেশের ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুলনার গল্লামারীতে ও বটিয়াঘাটায় ছেলে মেয়েদের জন্য পৃথক দুটি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা উপপ্রকল্প পরিচালক হিসেবে বিপ্লব কুমার সাহা ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর যোগদান করেন। গত আড়াই বছরে তার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিগত সময়গুলোতে তার এসব কুর্কীতি বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ও বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে জানানো হলেও উক্ত দফতর থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। উপপ্রকল্প পরিচালকের এসব দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সম্প্রতি এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, সচিব, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), পরিচালক প্রতিষ্ঠান সমাজসেবা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত), দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত), সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, সমাজকল্যান মন্ত্রীর একান্ত সচিব, শেখ রাসেল শিশু প্রর্শিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মসূচি পরিচালক, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয় খুলনার পরিচালক, খুলনার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), বাটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

বিভিন্ন দপ্তরে দাখিলকৃত অভিযোগের তথ্য হতে জানা গেছে, বিপ্লব কুমার সাহা খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অতিরিক্ত সুযোগসুবিধা দিয়ে নিজের একক রাজত্ব কায়েম করে দূর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বিপ্লব সাহা।

অভিযোগে বলা হয়েছে ভবন ও স্থাপনা মেরামত খাতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক বরাদ্দকৃত ১৭ (সতের) লক্ষ, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ৫ (পাঁচ) লক্ষ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে বরাদ্দকৃত ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা এবং স্থানীয় দাতা সংস্থা শায়ল ক্লাব থেকে ৪,০০,০০০/= (চার লক্ষ) টাকা সহ মোট ৩১,০০০০০/= (একত্রিশ লক্ষ) টাকার অনুকুলে ভুয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বিপ্লব কুমার সাহা। তিনি টেন্ডার কার্যক্রম সঠিক নিয়মে সম্পন্ন করেননি। তিনি এ দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে ২টি দোলনা, ১টি হিপার ২টি লোহার বেঞ্চ ও কেন্দ্রের অভ্যন্তরে খুবই নিম্নমানের রাস্তা মেরামত করেন। এছাড়াও কেন্দ্রের অভ্যন্তরের ৫০০ ফুট রাস্তার মধ্যে পূর্বের ডিপিডি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩০০ ফুট তৈরি করেন বাকি ২০০ ফুট রাস্তার জন্য ডিপিডি বিপ্লব কুমার সাহা ৩১,০০,০০০/= (একত্রিশ লক্ষ) টাকা খরচ দেখান। তিনি তৈরিকৃত সম্পূর্ণ রাস্তা নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে সব টাকা আত্মসাৎ করেন। কেন্দ্রের বিদ্যমান কর্মীদের ২০২০-২১ অর্থ বছরে ইন-হাউজ প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকার উপর প্রশিক্ষণ বাবদ ২,৫০,০০০/= (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা বরাদ্দ আসে। উক্ত বরাদ্দের টাকা নামমাত্র খরচ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রশিক্ষণ দুটি তিন দিনব্যাপী হবার নির্দেশনা থাকলেও উপপ্রকল্প পরিচালক তা একদিনেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে ডিপিডি বিপ্লব কুমার সাহা খুলনা কেন্দ্রে যোগদানের পর থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এ আত্মসাৎকৃত টাকা দিয়ে বটিয়াঘাটা মৌজায় ১৬ কাঠা, জিরোপয়েন্ট গল্লামারী মৌজায় ৫ কাঠা এবং পল্লী বিদ্যুৎ মৌজায় ১০ কাঠা জমি ক্রয় এবং নিজ ও স্ত্রীর নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে এফডিআর করেছেন। এছাড়া পুঁজিবাজারে লক্ষ লক্ষ টাকার শেয়ার ক্রয় করা আছে তার। উপপ্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানে ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ এই তিন অর্থ বছরে আপ্যায়ন ব্যয়, ষ্টাম্প ও সিল, অন্যান্য মনিহারী, কম্পিউটার মেরামত, মোটরযান মেরামত, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি এবং অফিস সরঞ্জামাদি মেরামত বাবদ ২৬,০০,০০০/= (ছাব্বিশ লক্ষ) টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব সাহা কোন কিছু মেরামত না করে ভুয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে এ অর্থ আত্মসাৎ করে।

অডিটের আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে খুলনা ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের’ উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব সাহা বলেন, অডিটের বিষয়টি আসলে সম্পূর্ণ ডিপাটমেন্টাল বিষয়। অডিটের অভিযোগের বিষয়ে আমি এর উত্তর দিয়েছি। আমার উত্তর সন্তোষজনক না হলে তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। এটা সম্পূর্ণ অফিসিয়াল ব্যাপার। অফিসের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে আমি কথা বললে অফিসের আইন লঙ্ঘন করা হবে। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মচারীরা যে অভিযোগ দিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব অভিযোগের বিষয়ে অবগত নই। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।

খুলনার ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব সাহার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক খান মোতাহার রহমান বলেন, সরকারী কার্যালয়ে অডিট একটি নিয়মমাফিক কাজ। সে মোতাবেক গত বছর খুলনার ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে কিছু আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়লে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে চিঠির মাধ্যমে আপত্তি দেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালক সে চিঠির জবাবও দিয়েছেন।

কর্মচারীদের নিকট হতে একটি অভিযোগ এসেছে সেটার বিষয়ে সরকারী দৃষ্টি ও বাকশ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক আবিদ হাসানকে তদন্ত করার এবং ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা আবিদ হাসান জানান, কর্মচারীরা অভিযোগ দিয়েছে। আমি কয়েকবার সেখানে গিয়েছি এবং কথা বলেছি। আসলে কেউ যখন বেশি সুবিধা চেয়ে পায়না তখন তারা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে থাকে এটাই সাধারণ ব্যাপার। আর এখানে সে বিষয়টি ঘটেছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব সাহা কর্মচারীদের অনিয়মের বিষয়ে তাদেরকে শোকজ করায় কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এ অভিযোগগুলো করেছে। খুব শীঘ্রই আমি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো।

অভিযোগের বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ নুরুল বাসিরের মুঠোফোনে (০১৭১১-৪৬৬৩৩৫) কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তার অফিসের ল্যান্ডফোনে কল করা হলে জানানো হয় তিনি প্রশিক্ষণে বিদেশে রয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলামের মুঠোফোন (০১৩১২-৭৩৬৩১১) এবং ল্যান্ডফোন (০২৫৫০০৭০২৪) কল করা হলে এবং মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu