সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
খুলনার পি ডব্লিউ ডি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে প্রধান শিক্ষকের পরিবারসহ বসবাস  দৈনিক খুলনা টাইমস এখন ৬ষ্ঠ বর্ষে খুলনা ডিএনসির অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার খুলনার সবজির বাজারে দামে স্বস্তি;কমেছে গোশ ও মাছের দাম  নির্বাচনের ট্রেন চলছে, কেউ থামাতে পারবে না : ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা আমাকে এমপি না, জনতার সেবা করতে পাঠিয়েছেন : এস এম কামাল হোসেন ডলারের দাম আরও কমলো খুলনায় কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিকী প্রদর্শন খুলনা—১ আসন: জনগণের জন্য কাজ করতে চান সাবেক এমপি ননী গোপাল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অব:) এর খুলনা সফরসূচি

খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের অনিয়ম-দূর্নীতি : শিশু নিবাসে গরুর খামার, দূর্নীতি ঢাকতে শিশু ও কর্মচারীদের উপর চলে অত্যাচার-নির্যাতন

মো. শহীদুল হাসান :
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২
  • ৩২৯ পড়েছেন

খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, শিশু-কিশোরদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নিবাসে সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে গবাদি পশু পালন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূত অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অনিয়ম, দূর্নীতি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব কুমার সাহা। ফলে অনাথ শিশু কিশোরদের জন্যে সরকারের গড়ে তোলা এ মানবিক প্রতিষ্ঠান ধংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। ইতিমধ্যেই উপপ্রকল্প পরিচালকের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, সচিব, সমাজসেবা অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পরিচালক সৈয়দ মো. নুরুল বাসির খুলনা কেন্দ্রের নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব সাহার আর্থিক অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ের সত্যতা পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কনিষ্ঠ সন্তান ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই শেখ রাসেলের নামে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সারাদেশের ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুলনার গল্লামারীতে ও বটিয়াঘাটায় ছেলে মেয়েদের জন্য পৃথক দুটি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা উপপ্রকল্প পরিচালক হিসেবে বিপ্লব কুমার সাহা ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর যোগদান করেন। গত আড়াই বছরে তার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিগত সময়গুলোতে তার এসব কুর্কীতি বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ও বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে জানানো হলেও উক্ত দফতর থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। উপপ্রকল্প পরিচালকের এসব দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সম্প্রতি এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, সচিব, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), পরিচালক প্রতিষ্ঠান সমাজসেবা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত), দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত), সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, সমাজকল্যান মন্ত্রীর একান্ত সচিব, শেখ রাসেল শিশু প্রর্শিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মসূচি পরিচালক, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয় খুলনার পরিচালক, খুলনার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), বাটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

বিভিন্ন দপ্তরে দাখিলকৃত অভিযোগের তথ্য হতে জানা গেছে, বিপ্লব কুমার সাহা খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অতিরিক্ত সুযোগসুবিধা দিয়ে নিজের একক রাজত্ব কায়েম করে দূর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বিপ্লব সাহা। যোগদানের পর থেকে ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ এই তিন অর্থ বছরে নিবাসীদের পোষক খাতে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হারে তিন অর্থ বছরে মোট ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। অথচ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বরাদ্দ সেই টাকা দিয়ে সামান্য কিছু পোশাক ক্রয় করে স্টোরে মজুদ রাখেন এবং কেন্দ্রে নিজেদের পছন্দ মাফিক কিছু নিবাসীকে সামান্য কিছু পোষাক দিয়ে বিতরণ রেজিষ্টার আপডেট করিয়ে নেন। বিগত দুই বছরে খুলনা কেন্দ্রের নিবাসীদের স্যান্ডেল, কেডস্, মোজা, ছেলেদের ফুল-প্যান্ট, চিরুনী, স্কুল ব্যাগ ও স্কুল ড্রেস তেমন কিছুই দেয়া হয়নি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব সাহা যোগদানের পর থেকে ২০১৯-২০ থেকে ২০২২ তিন অর্থ বছরে নিবাসীদের শিক্ষা ও প্রসাধনী খাতে মোট ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসলেও শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র খুলনার শিক্ষার মান পায়ই শূণ্যের কোটায়। বালক কেন্দ্রের নিবাসীরা মাধ্যমিক লেভেলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আর বালিকা কেন্দ্রের শিশুরা পরিবারের খরচে কেন্দ্রে থেকে লেখাপড়া করে। এ বিষয়ে অভিভাবকরা উপপ্রকল্প পরিচালককে অনুরোধ করলে শিশুদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও প্রদান করা অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে নিবাসের কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে চাকুরিচ্যুত ও বদলীর হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র খুলনার নিবাসীদের স্বাস্থ্যেসেবার জন্য গত তিন অর্থ বছরে নিবাসীদের স্বাস্থ্যেসেবার খাতে জন প্রতি ১০০ টাকা হারে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা যা বছরে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং তিন বছরে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এসব টাকায় ওষুধ ক্রয় না করে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে।

উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব সাহা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রকে নিজের পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন। তিনি শিশু নিবাসের মধ্যে পালন করছেন গবাদি পশু। যার সার্বক্ষনিক দেখভালে নিযুক্ত করেছেন সরকারী বেতনভূক্ত কেয়ার টেকার মজনুকে। নিবাসের শিশু-কিশোরদের দেখভালের কথা থাকলেও বিপ্লব সাহার নির্দেশে কেয়ারটেকার মজনু সবসময় গবাদি পশুকে পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকে। শিশু নিবাসের মধ্যে গরু পালনের কথা স্বীকার করেছেন কেয়ারটেকার মজনু।

এসব অনিয়মের বিষয়ে খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালক বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, আমার বিরুদ্ধে কারা অভিযোগ করেছে এ বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি কোন অনিয়মের অভিযোগ থাকে তাহলে তা আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বুঝবে। এটা আপনাদের কোন বিষয় না। আর এ বিয়য়ে আমি কোন কথা বলবো না।

শিশু নিবাসে গবাদি পশু পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা না করে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করুন। তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন বলে তিনি জানান।

শিশু-কিশোর কেন্দ্রের অভিযোগের বিষয়ে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মমিনুর রহমান বলেন, অভিযোগের অনুলিপিটি আমি এখনও দেখিনি। আমি এতদিন ব্যস্ত ছিলাম। তবে যাদের বরাবর অভিযোগটি করেছে তারাই ব্যবস্থা নিবে। অনুলিপি পেলেও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আমি অনুলিপিটা পেলে নিবাসে পরিদর্শনে যাবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক সমীর মল্লিক বলেন, লিখিত অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। আমাদের পরিচালক মহোদয় বিদেশে রয়েছেন তিনি দেশে ফিরে আসলে এ বিষয়ে আমরা তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে নাগরিক নেতা এ্যাড. বাবুল হাওলাদার বলেন, এরকম একটি স্পর্শকাতর জায়গায় এ ধরণের অনিয়ম কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারের বরাদ্দ দেওয়া সুবিধা বঞ্চিতদের টাকায় অনিয়ম করা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবিও জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu