খুলনাসহ সারাদেশে আত্মগোপন করে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, অপহরণ ও হত্যার দায় চাপাতে একটি চক্র অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে বিপাকে ফেলতে ও ভাবমূর্তি নষ্ট এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আত্মগোপন চক্র সংঘবদ্ধভাবে রাজনৈতিক সহকর্মী ও নিকটজনদের আত্মগোপনে রেখে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) র্যাব আত্মগোপন চক্রের একজনকে উদ্ধারের পর এ তথ্য জানা গেছে। শনিবার র্যাব-৬ প্রায় দেড় বছর আত্মগোপনে থাকা মোহাম্মদ রফিক হোসেন পল (৩০) কে কক্সবাজার থেকে উদ্ধার করার কথা জানায়। এদিন বেলা ১১টায় র্যাব-৬ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশতাক আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার রোড নং-১৪, বাড়ী নং-৩৩ এর বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ছেলে মো. রফিক হোসেন পল (৩২) ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারী স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যায় এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। রফিক নিখোঁজের পর পরিবারের পক্ষ থেকে খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। দীর্ঘদিন না পেয়ে তাঁকে অপহরণ করে গুম করা হতে পারে এমন গুজবও ছড়ানো হচ্ছিল। ব্যাপারটি তদন্তে নেমে র্যাব-৬ এর সদস্যরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে রফিকের অবস্থান শনাক্ত করেন। পরে গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে কক্সবাজারের শাহিন বিচ এলাকায় অভিযান চালিয়ে রফিককে উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিক জানিয়েছে চাকরি হারানোর পর হতাশা থেকে মুক্তির জন্য তিনি আত্নগোপন করেছিলেন। এ সময় তিনি প্রথমে ঢাকায় ৭ মাস মাস্ক বিক্রয় করেন। তিন মাস ঢাকা সদরঘাটে হকার হিসেবে খেলনা বিক্রি করেন। মুন্সিগঞ্জে ৯দিন হকারি করেছিলেন। নারায়নগঞ্জে ৫মাস টোকাই হিসেবে পুরোনো বোতল ও লোহা কুড়িয়ে বিক্রি করেন। সর্বশেষ কক্সবাজার শাহিন বিচের ইউনুসের চায়ের টং দোকানে মাসিক ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন।
তিনি আরো জানান, রফিক হোসেনের নিখোঁজের ঘটনায় ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি মোছা. মঞ্জুরা বেগম বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর বাড়ি ফেরেননি রফিক হোসেন। ওই সময় থেকে রফিকের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও তাঁরা রফিকের সন্ধান পাননি।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরো জানান, সারাদেশে আত্মগোপন করে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম ও অপহরণের দায় চাপাতে একটি চক্র অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে বিপাকে ফেলতে ও ভাবমূর্তি নষ্ট এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আত্মগোপন চক্র সংঘবদ্ধভাবে রাজনৈতিক সহকর্মী ও নিকটজনদের আত্মগোপনে রেখে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে।
খুলনার রফিক নিখোঁজ হওয়ার পর জিডি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাকে গুম বা অপহরণ করে মেরে ফেলা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালানো হয়। তবে তিনি কারো দ্বারা গুম বা অপহরণ হননি। তিনি চাকরি হারিয়ে পারিবারিক চাপে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। প্রায় দেড় বছর আত্মগোপনে থাকা রফিক নিজের বেশভূষা পরির্বতন করে পরিবারের সঙ্গে সকল ধরণের যোগাযোগ বন্ধ রাখে। এই আত্মগোপন চক্র পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক কর্মী ও নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে আত্মগোপনে রেখে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে ও দেশে-বিদেশে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এ চক্রকে কঠোরভাবে দমন করতে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করেছে বলে তিনি জানান।
আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রফিককে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান। ব্রিফিংয়ে সদর কোম্পানী কমান্ডার আল আসাদ বিন মাহফুজ ও সহ কমান্ডার লেঃ আজাদ, মিডিয়া উইং কর্মকর্তা এএসপি বজলুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
করোনাকালে নিজের চাকরি হারানো এবং পারিবারিক চাপে নিজেকে আত্মগোপন করা রফিক হোসেন পল নিজেরে ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে সুধরে নিতে চায়। তিনি জানান, আত্মগোপনে থাকাকালে ঢাকায় মাস্ক বিক্রি, শিশুদের খেলনা বিক্রি, নারায়ণগঞ্জ এলাকার পুরাতন বোতল, লোহা কুড়িয়ে বিক্রি এবং পরে কক্সবাজার এলাকায় একটি চায়ের দোকানে কাজ করে জীবন নির্বাহ করেছি।
সন্তানকে ফিরে পেয়ে রফিকের মা মঞ্জুরা বেগম তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, মহান আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আমি আমার সন্তান রফিককে ফিরে পেয়েছি। সেইসাথে র্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। র্যাবের প্রচেষ্টায় আমি আমার বুকের মানিক কে আমার কাছে ফিরে পেয়েছি।