পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী সৃষ্টি ও স্থাপত্য শিল্পের মাইল ফলক। পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বিশ্ব দরবারে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মোঃ মফিদুল ইসলাম টুটুল।
আগামী ২৫জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীকে ঘিরে সারা দেশে যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও মানবতার নেত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দৃঢ়তার ফলে পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একুশটি জেলার জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও দাবি ছিল পদ্মা সেতুর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর মতো একজন ভিশনারি লিডার। তিনি পদ্মা নদীর ওপর সেতুর শুধু স্বপ্নই দেখেননি তার বাস্তব সৃষ্টিও দেখতে চেয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি পদ্মা সেতুর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেন। ১৯৯৮-১৯৯৯সালে বিশেষজ্ঞ দল দ্বারা সেতুর সম্ভাব্যতা বা ফিজিবিলিটি স্টাডি করান। ২০০১সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর নির্মাণের বাস্তব ও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারপরেও বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কথা বিস্মৃত হননি। ২০০৮সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইস্তেহারে পদ্মা সেতু নির্মানে জনগনকে স্বপ্ন দেখান ও প্রতিশ্রুতি দেন। দেশের মানুষ শেখ হাসিনার পদ্মা সেতুর স্বপ্নের উপর আস্থা রেখে নির্বাচনে বোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে। নির্বাচনে জয় লাভের পর সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইস্তেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেন। সরকারের পরিকল্পনা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।
২০১১ সালের ২৮এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চুক্তি সই হয়। এছাড়া ১৮ মে জাইকার সঙ্গে, ২৪ মে আইডিবির সঙ্গে এবং ৬ জুন এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই বছর অর্থাৎ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণচুক্তি বাতিল করে। প্রথম থেকেই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতু নির্মাণে বিরোধিতা করে আসছিলো। ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপাকে ফেলতে। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে সরকারের জনপ্রিয়তা কমানোর পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে বরাবরের মতই বৈষম্যের বেড়াজালে আটকে রাখতে পদ্মা সেতু নির্মান বন্ধ করাই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। বাস্তবে তার উল্টোই হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কর্তৃক ঋণচুক্তি বাতিল বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদই হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি স্থগিত করলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন পদ্মা সেতু অবশ্যই হবে। তবে তা নিজস্ব অর্থায়নেই।অন্যের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা এনে পদ্মা সেতু করবেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা শত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করেন। বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর মতো একটি বৃহৎ বহুমুখী সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত করতে সক্ষম হয়েছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ২৫শে জুন ফিতা কেটে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন এটা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। পদ্মা নদীর উপরে শুধু একটি সেতু নয়-এটি একটি লালিত স্বপ্নের সফলতা। পদ্মা বহুমুখী সেতু শুধু যোগাযোগ নেটওয়ার্ক-এর বিপ্লব ঘটাবে না। এ সেতু সতেরো কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ২ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বৈষম্য কমার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। ভোমরা, বেনাপোল বন্দরসহ ভারতের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি পাবে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের দ্বিখন্ডিত বাংলাদেশকে সড়কপথে ঐক্যবদ্ধ করবে। এই সেতু সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগের মাধ্যমে তড়িৎ অগ্রগতি সাধিত হবে। পণ্য পরিবহন, ব্যবসা বাণিজ্য শিক্ষা চিকিৎসা শাস্ত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
তিনি প্রত্যাশা করে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে মানুষের যাতায়াত সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২দশমিক ৩শতাংশ। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের নুতন দ্বার উন্মোচিত হবে। তবে শুরুতেই বড় গতিশীলতা আসবে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে। সেতুর কারণে সব ধরণের কৃষিপণ্য তাদের সবচেয়েৎকাঙ্ক্ষিত বাজারে দ্রুত যেতে পারবে। শুধু ঢাকা নয়, বরং বড় বড় জেলায়শহরগুলোতেও তাদের পণ্য যাওয়ার সুযোগ পাবে। পদ্মা সেতুর প্রাথমিক প্রভাবয়পড়বে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি খাতে আর দীর্ঘমেয়াদী সুফল আসবে ভারী শিল্পখাতে। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও খানজাহান আলী মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। যা বাংলাদেশকে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় পর্যটন শিল্পের দেশে রুপান্তরিত করবে বলে মনে করেন। এই ব্যবসায়ী নেতার প্রত্যাশা পদ্মা সেতু যোগাযোগের বড় দিগন্ত উন্মোচন করবে। সে বিষয়ে তার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই যোগাযোগ সুবিধাকে অর্থনৈতিক সুবিধায় রূপান্তর করতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস, বিদ্যুতসহ অন্য অবকাঠামোতেও নজর দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা সম্পাদক: আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক,মেয়র, খুলনা সিটি কর্পোরেশন। সম্পাদক: মো: মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ। আইটি ইনচার্জ : মোঃ নাঈমুজ্জামান শরীফ । প্রকাশনা, বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ: "জাহান মঞ্জিল" ৪০, সিমেট্টি রোড (বেণী বাবু রোড), ফুলমার্কেট, খুলনা। dailydeshsanjog@gmail.com, sohagkhulna@gmail.com, online.deshsanjog.news@gmail.com যোগাযোগ করুন: info@deshsanjog.com</p>
দৈনিক দেশ সংযোগ