সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
খুলনার পি ডব্লিউ ডি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে প্রধান শিক্ষকের পরিবারসহ বসবাস  দৈনিক খুলনা টাইমস এখন ৬ষ্ঠ বর্ষে খুলনা ডিএনসির অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার খুলনার সবজির বাজারে দামে স্বস্তি;কমেছে গোশ ও মাছের দাম  নির্বাচনের ট্রেন চলছে, কেউ থামাতে পারবে না : ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা আমাকে এমপি না, জনতার সেবা করতে পাঠিয়েছেন : এস এম কামাল হোসেন ডলারের দাম আরও কমলো খুলনায় কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিকী প্রদর্শন খুলনা—১ আসন: জনগণের জন্য কাজ করতে চান সাবেক এমপি ননী গোপাল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অব:) এর খুলনা সফরসূচি

পদ্মা সেতু বিশ্বের কাছে সক্ষমতার নবতর উন্মোচন : অধ্যাপক ডাঃ মো. মাহবুবুর রহমান

মোঃ শহীদুল হাসান :
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২
  • ১২৯ পড়েছেন

পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, একটি স্বাধীন দেশের স্বনির্ভরতা ও সক্ষমতার চ্যালেঞ্জ। পদ্মা সেতু বাঙালি জাতির গৌরবের প্রতীক। একইসাথে বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের তথা বাঙালি জাতির স্বপ্ন। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের আগে দক্ষিনাঞ্চলের সাথে রাজধানীসহ অন্য অঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল প্রমত্তা এ নদী। এই প্রতিবন্ধকতার কারণেই এই দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও যোগাযোগসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তুলনামূলক পশ্চাৎপদ ছিল। যে কারণে রাজধানীসহ অন্য অঞ্চলের সাথে উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিপুল ব্যবধান যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি আঞ্চলিক বৈষম্য ছিল প্রকট।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এবং দেশের প্রতিটি মানুষকে সমানভাবে ভালবাসেন। তিনি যেমন দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন চান তেমনি পূর্ব ও উত্তর অঞ্চলেরও একই মাত্রার উন্নয়ন চান। তিনি বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চলের সমস্ত মানুষের একযোগে সুষম উন্নয়ন চান। প্রধানমন্ত্রী নিজেও দক্ষিনাঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন। তিনিও তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-দূর্দশা ও কষ্টের বিষয়ে অবগত আছেন। তাই একটি বিশাল অঞ্চলকে অবহেলিত রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই চিন্তা থেকে তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য পদ্মা সেতুর কার্যক্রম শুরু করেন। তখন অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকাসহ দাতাসংস্থাগুলো সাথে যোগাযোগ করেন। সংস্থাগুলো পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের রাজি হয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি করে। কিন্তু স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এখন পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। বঙ্গবন্ধু যেমন সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এই ষড়যন্ত্রকারী চক্র যারা চায় না দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকুক। যারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে না, তারাই এসব ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত। এসব ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতু প্রকল্পে দূর্নীতি হচ্ছে বলে দাতা সংস্থা গুলোর নিকট ব্যাপক অপপ্রচার চালায়। এক পর্যায়ে অপপ্রচারে সফলকামও হয় ওই গোষ্ঠী। ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দাতা সংস্থাগুলো পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ চুক্তি বাতিল করে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়চিত্তে ২০১৩ সালের মে মাসে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে সংকল্প ব্যক্ত করেন। দেশবাসীও তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসে। বাঙালি জাতিকে দূর্নীতিবাজ হিসেবে যে কালিমা লেপন করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী তা থেকে বেরিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। তখন কুচক্রী মহল সহ অনেকেই চিন্তা করতে পারেনি যে শেখ হাসিনার সরকার পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারবে। তারা ভুলে গিয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু কন্যা। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে যা যা করা দরকার নিজস্ব অর্থায়নে করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দেশী-বিদেশী সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশের মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মান শুরু করেন। অবশেষে সবার সম্মিলিত প্রয়াসে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। অচিরেই বাংলাদেশের মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করবে। এই একটি মাত্র সেতু বাস্তবায়নের ফলে বহির্বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা রাখে পদ্মা সেতু তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। একই সঙ্গে এটি শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল, সাহসিকতা ও সক্ষমতার পরিচায়ক। পশ্চিমা বিশ্বের কাছে প্রতীচ্যের পূর্বতন সক্ষমতার নবতর উন্মোচন। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে নেতৃত্বদানকারী গৌরবান্বিত দেশের মর্যাদাসীন। নিজেদের শক্তি, সক্ষমতা ও ভূগোল নিজেদের মতো করে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে এ বহুমুখী সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে। দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশকে বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং এরমধ্য দিয়ে দেশের এতদিনকার অভ্যন্তরীণ দূরত্ব লাঘব হবে। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তথা সব খাতে প্রভূত গতি সঞ্চার হবে। দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদীর ওপর নিজস্ব অর্থায়নে বিশালাকৃতির সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে এটি বাংলাদেশের জাতীয় আকাঙ্খা, প্রতীক ও চেতনায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, তেমনি তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কোন অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করেনি। বঙ্গবন্ধু দেশকে নিয়ে যে স্বপ্নের বীজ রোপন করেছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। তবে তাঁর সুযোগ্য কন্যা সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর মননে, চিন্তা ও চেতনায় রয়েছে কিভাবে বাঙালি জাতিকে উন্নত সমৃদ্ধশালী জাতিতে পরিণত করা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সেভাবে তিনি সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, হেনরী কিসিঞ্জারের তলা বিহীন ঝুড়ি থেকে কিভাবে একটি উন্নত জাতিতে পরিনত হলো তা এখন সারা বিশ্বে কাছে বিস্ময়। আর এসব সম্ভব হয়েছে বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। সেভাবে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ দেখতে পান। ভবিষ্যতে এ জাতি কোথায় যাবে তা তিনি কল্পনা করতে পারেন। তাই তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই একটি মাত্র সেতুর বাস্তবায়ন আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। কখনও যদি আমরা বিদেশে যাই আমরা মাথা উচু করে বলতে পারবো আমরা বাঙালি জাতি চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে জানি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন বিদেশে যান তাকে সবাই ঘিরে রাখে। তাঁর সাথে পরিচিত হয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে অবগত হতে চান কিভাবে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান। তিনি কিভাবে এত কিছু করছেন। এসব থেকেই বুঝা যায় আমরা জাতি হিসেবে কোথায় পৌছে গেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই স্বপ্নই দেখেছিলেন। আমরা যেন আ‏ত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করি। নিজেদের সম্পদ ও সামর্থ্য দিয়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নয় করতে পারি।

পদ্মা সেতু ২৫ জনু উদ্বোধন উপলক্ষে সারাদেশে এখন উৎসব মুখর একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যারা পদ্মা সেতু বিরোধীতা করেছে তারও উৎসবে শামিল হতে চাইছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষো জন্য একটি অকল্পনীয় ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের শিক্ষার ক্ষেত্রে নজর দিয়ে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করেছেন। এতদিন যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতার কারণে মেধাবী ছাত্ররা এ অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে আসতে পারছিল না। মেধাবী ছাত্ররা এ অঞ্চলে এসে তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গবেষণায় আরো বেশি অবদান রাখবে। ফলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতুর কারণে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবস্যা বানিজ্য সহজ হবে। এ অঞ্চলে যে সব ফসল উৎপাদন হয় তা স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে। কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন হলে সর্বপরি অন্যদেরও আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে। বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ। সে দিনের অপেক্ষায় রয়েছে পুরো জাতি। কাজেই নিজেদের ভাগ্যান্বেষন, আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যের তাগিদে বাঙালি নয়- বৃহৎ প্রতিবেশীসহ বিদেশীরাও তাদের শিক্ষা ও চাকুরীর জন্য বাংলাদেশে আসবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কার্যক্রম এবং কৌশল নিয়ে গবেষণা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ চিকিৎসাবিদ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu