♦ গুদামের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশের অভিযোগ।
খুলনার সিএসডি গুদাম থেকে জমাটবাঁধা ও পোকা ধরা নষ্ট চাল জোর করে সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার ৭নং ঘাট সিএসডি গুদাম থেকে ঠিকাদারদের এসব চাল সরবরাহের সময় তাদের প্রতিনিধি ও গুদামের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বাক-বিতন্ডে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সিএসডি গুদাম এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় ঠিকাদার ও তাদের প্রতিনিধিরা চালে পানি মিশিয়ে ওজন বাড়ানো এবং পোকা চাল সরবরাহেরও অভিযোগ তোলেন। তারা জমাটবাঁধা ও পোকাচাল সরবরাহের ঘটনাল সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক জড়িতদের শাস্তিরও দাবি জানান।
সিএসডির চাল ক্রয়কারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তালুকদার এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি জামাল শিকদার জানান, বুধবার বিকালে ৭নং ঘাট সিএসডি গুদাম থেকে আমরা চাল ট্রাকে লোড করার সময় দেখতে পাই চালগুলো অনেক পুরানো এবং সেই সাথে চালগুলো ভেজা। বস্তার মধ্যে চাল পাথর খন্ডের মতো জমাটবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এসব চালে পানি মারা হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলে এর আদ্রতা মাপার জন্য বললে মেশিন দিয়ে মেপে চালের আদ্রতা ১৫.৫ শতাংশ পাওয়া যায়।
তিনি আরও অভিযোগ করে জানান, সিএসডি গুদামের লোকজন চুরি করে চাল বিক্রী করে দেয়। সেই চুরির চাল পূরণ করার জন্য গুদামের চালে পানি মিশিয়ে ওজন বাড়ায়। আর সেই ভেজা চাল আমাদেরকে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। আমাদের ঠিকাদার বলেছে এ চাল নেওয়া যাবে না। একথা জানালে গুদামের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে তর্কাতর্কি ও বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ঘাট এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি গুদামের কর্মচারী-কর্মকর্তারা এসব অনিয়মের সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করেন। এসব দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারী কর্মচারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তিনি দাবী করেন।
সিএসডি খাদ্য গুদামের চাল পরিবহনকারী ট্রাকের ড্রাইভার দেলোয়ার হোসেন জানান, ঠিকাদারদের অনেকদিন ধরেই চালে পানি মেশানো খারাপ চাল দেওয়া হচ্ছে। গত বুধবার আমরা এবং ঠিকাদারদের প্রতিনিধিরা চালের বস্তা পরিক্ষা করে জমাটবাঁধা চালের বিষয়টি ধরা পড়ে। আমরা তখন চাল ট্রাকে তুলতে অস্বীকার করলে গুদামের কর্মচারীরা জমাটবাঁধা চাল নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
সিএসডি গোডাউনের অনিয়ম সম্পর্কে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মজিদ সরদার জানান, গোডাউন থেকে প্রায়ই ভেজা চাল আমাদেরকে দেওয়া হয়। এমনকি গুদাম থেকে চাল নিয়ে যাওয়ার পর প্রায়ই চাল মেপে কম পাওয়া যায়। গত বুধবার বিকালে চাল ট্রাকের উঠানোর সময় বুঝতে পারি চালগুলোতে পানি মিশানো হয়েছে। কারণ চালগুলো পাথরের মতো জমাট বেঁধে রয়েছে। এসময়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে গুদামের কর্মকর্তা কর্মচারীরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখি আচরণ করে। এমনকি চালে যাতে পোকা না ধরে সেজন্য যে ওষুধ মেশানো হয় সে ওষুধও পর্যাপ্ত দেওয়া হয় না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
খুলনার ৭নং ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদল কুমার বিশ্বাস জানান, গত বুধবার ডিলারের লোকজন যে অভিযোগ করেছে সেটা সঠিক না। চালে কোন পানি মিশানোর প্রশ্ন্ই আসে না। চাল অনেকদিন গুদামে থাকলে আদ্রতা বেড়ে গিয়ে এমনিতেই চাল কিছুটা নষ্ট হতে পারে। এছাড়া কখনও কখনও নিচের দিকের বস্তার চাল জমাটবেঁধে যেতে পারে। তবে এরকম নষ্ট ও জমাটবাঁধা চাল আমাদের নজরে আসলে আমরা পরিবর্তন করে ভাল চাল সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া অনেকদিন চাল থাকলে চালে পোকাও হতে পারে সেক্ষেত্রে আমরা নির্দিষ্ট পরিমান ওষুধ ব্যবহার করে থাকি। তবে যে পরিমাণ ওষুধ সরকারী সরবরাহ করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে তিনি জানান। এছাড়া অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত বুধবার জমাটবাধা চাল নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে আমাদের নজরে আসলে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ঠিকাদার সমিতির নেতাদের মধ্যস্থতায় তা সমাধান করা হয়েছে।
খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সহকারী রসায়নবিদ মো. ইকরামুল কবির মুঠোফোনে জানান, চালে কোন ধরণের পোঁকার আক্রমন যাতে না হয় সেজন্য এ্যালুমুনিয়্যাম ফসফেট নামে ট্যাবলেট এবং ফ্যানিটটিসিওন নামে লিকুইড ব্যবহার করা হয়। লিকুইড ওষুধটি আগে ব্যবহার করা হয় যাতে চালে পোকা না ধরে। ট্যাবলেটটি চালে পোঁকা ধরার পর পোঁকা মারার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এ রসায়নবিদ জানান, সরকারীভাবে এসব ওষুধের সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। গুদাম গুলোর জন্য যে পরিমান ওষুধের চাহিদা দেয়া হয় সে পরিমান ওষুধ কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করে। এখানে ঘাটতির কোন প্রশ্নই আসে না।
চাল গুদামে রাখার পর পানি মেশানো ছাড়া ভিজে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইকরামুল কবির জানান, এমন কোন কিছুর হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই কারণ চাল কেনার সময় চালের আদ্রতা ১৪ শতাংশ আছে এমন পরিক্ষা করেই চাল কেনা হয়। এর বেশি হলে সে চাল সংগ্রহ করা হয় না।
খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুস সালাম মুঠোফোনে জানান, আমাদের যে কোন বিষয়ে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হয়। তাছাড়া আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। আর না জেনে তো কিছুই বলা যায় না। আপনারা আগামী রবিবার অফিস সময়ে আসেন তখন আপনাদের সাথে বিস্তারিত কথা বলবেন বলে তিনি জানান।