• E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন

×

বিএনপির সমাবেশ থেকে রেল স্টেশনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২২
  • ২৪৭ পড়েছেন

Ω জড়িতদের গ্রেফতার ও তদন্তে অবহেলার অভিযোগ

খুলনায় আধুনিক রেলওয়ে স্টেশনে বিএনপি’র সমাবেশ থেকে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার তিন সপ্তাহ পার হলেও মামলার দৃশ্যমান কোন অগ্রগ্রতি নেই। সরকারী এ প্রতিষ্ঠানের কয়েক লক্ষ টাকার সম্পদ নষ্ট হলেও সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউই ক্ষতিপূরণ বা দ্রুত দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপের উদ্যোগ নেয়নি। তবে পুলিশ বলছে তদন্ত চলমান রয়েছে দ্রুত দায়ীদের সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে সচেষ্ট রয়েছে। এদিকে তদন্তে ধীরগতি ও জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় নগরবাসীর মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে। অন্যদিকে, সরকারী সম্পদ বিনষ্টের ঘটনায় জড়িত যেই হোক সঠিক তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।

রেল স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশে ১০ জেলার নেতাকর্মীরা যোগদান করে। যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও অন্য স্টেশন থেকে নেতাকর্মীরা খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে বিএনপি’র পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তারা হুড়োহুড়ি করে ট্রেন থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে রেলকর্মীরা তাদের বাধা দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে বের হওয়ার অনুরোধ জানান। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে রেলকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এসময়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা রেল স্টেশনের দরজা জানালাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এতে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়াও এ ঘটনায় রেলের ২০ জন কর্মচারী-কর্মকর্তা আহত হয়। এ ঘটনায় ঐদিন রাতে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে বিএনপি’র অজ্ঞাতনামা ১৭০ জন নেতা-কর্মীর নামে রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

খুলনা রেলওয়ের স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার জানান, গত ২২ অক্টোবর বিএনপির গণসমাবেশে আসা অনেক নেতা-কর্মী রেলস্টেশনের ভেতরে ঘোরাঘুরি করছিলেন। পুলিশ তাদেরকে বাইরে যাওয়ার অনুরোধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে দুপুরে তারা মেইন গেট, বুকিং কাউন্টার ও সার্ভার রুমের গ্লাস ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। তবে এখনও মামলায় কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি বলে তিনি জানান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই তরিকুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, গত ২২ অক্টোবর বিএনপি‘র মহাসমাবেশের দিন খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনে ভাঙচুরের মামলার তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। তবে এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্টেশনের বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। তবে স্টেশনের ভিতরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা পেয়েছি। ফুটেজ দেখে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। যদিও দূর দুরান্ত থেকে লোকজন এসেছিলো তাই তাদের শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন। যারা এ ঘটনায় জড়িত তদন্তের মাধ্যমে অচিরেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

খুলনা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা মো. খবির আহমেদ মুঠোফোনে জানান, খুলনা রেলস্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনায় গত ২২ অক্টোবর রাতে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে বিএনপির অজ্ঞাতনামা ১৭০ জন নেতা-কর্মীর নামে রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় রেলওয়ে থানার এস আই তরিকুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিলো। তদন্ত কাজ জোরেশোরেই চলছে। রেলওয়ে স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত এ মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।

খুলনা রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত ২২ অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশের দিন যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও অন্য স্টেশন থেকে কিছু লোক খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে বিএনপি’র পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তারা হুড়োহুড়ি করে ট্রেন থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে রেলকর্মীরা তাদের বাধা দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে বের হওয়ার অনুরোধ জানান। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে রেলকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় ২০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের করেন। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এ পর্যন্ত এ মামলায় রেলওয়ে থানা পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এতদিন হয়ে গেলেও তাদের তদন্ত কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। তদন্তে নেই দৃশ্যমান কোন অগ্রগ্রতি। আমরা রেলওয়ে পুলিশের তদন্তে অবহেলা দেখতে পাচ্ছি। রেলওয়ে স্টেশনে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। যেসব দুর্বৃত্তরা ভাংচুর চালিয়ে রেলওয়ের লাখ লাখ টাকার সরকারী সম্পদ নষ্ট করেছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান এ শ্রমিক নেতা।

রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. রবিউল হাসান মুঠোফোনে জানান, খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে হামলার ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আমরা তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি চলমান রয়েছে। দূর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তবে এখনও এ মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা জানান, গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশের দিন খুলনার দৃষ্টিনন্দন আধুনিক রেলওয়ে স্টেশনে তাদের নেতাকর্মীরা ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ হামলায় রেলওয়ের ২০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী আহত হয়। এ হামলার পর মামলা হলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ হামলাকারীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। যারা এ হামলার সাথে জড়িত তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান এ আওয়ামী লীগ নেতা।

খুলনা উন্নয়ণ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আশরাফ উজ জামান জানান, খুলনার মানুষের দীর্ঘদিনের বহু আন্দোলন সংগ্রামের ফসল খুলনার আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র আন্তুরিক প্রচেষ্টায় খুলনাবাসীর দাবি পূরণে এ রেলওয়ে স্টেশন নির্মিত হয়। এটা রাষ্ট্রের তথা জনগণের সম্পদ। জনগণই হলো রাষ্ট্রের মালিক। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দৃষ্টিনন্দন এ রেলওয়ে স্টেশনের ভাংচুর চালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারী সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। এর সঠিক তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবি জানান এ নাগরিক নেতা।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA