রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
খুলনা ডিএনসির অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার খুলনার সবজির বাজারে দামে স্বস্তি;কমেছে গোশ ও মাছের দাম  নির্বাচনের ট্রেন চলছে, কেউ থামাতে পারবে না : ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা আমাকে এমপি না, জনতার সেবা করতে পাঠিয়েছেন : এস এম কামাল হোসেন ডলারের দাম আরও কমলো খুলনায় কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিকী প্রদর্শন খুলনা—১ আসন: জনগণের জন্য কাজ করতে চান সাবেক এমপি ননী গোপাল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অব:) এর খুলনা সফরসূচি বিএনপি নেতার ভাইয়ের ইন্তেকালে শোক মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নোবেল

কেসিসি’র ৬ কোটি টাকার ট্রাক টার্মিনাল এখন কাঁচা বাজার ও আবর্জনার স্তুপ : নগর জুড়ে অবৈধ পার্কিং

মো. শহীদুল হাসান :
  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ২৮২ পড়েছেন

খুলনায় কেসিসি’র ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ট্রাক টার্মিনালটি এখন কাঁচাবাজার ও আবর্জনার স্তুপ। এছাড়া টার্মিনালের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে পাইকারী কাঁচা বাজার স্থাপন করা হয়েছে। ফলে প্রায় দুই দশক ধরে টার্মিনালটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টার্মিনালের ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা। এতে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা টার্মিনাল ব্যবহার না করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে সড়ক দখল করে ট্রাক রেখে জনভোগান্তির সৃষ্টি করছে। নগরীতে এভাবে সড়ক দখল করে মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক রাখায় পুরো নগরী এখন ট্রাক টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। ফলে নগরজুড়ে যানজট লেগেই থাকছে। যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনদুর্ভোগ। ঘটছে নানা রকমের দূর্ঘটনা। ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন, তেমনি ভোগান্তি বাড়ছে নগরবাসীর। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে দ্রুত কাঁচা বাজার উচ্ছেদ ও ট্রাক টার্মিনাল চালুসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সুশীল সমাজ ও নগরবাসী।  

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের স্টেট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ট্রাক মালিক-শ্রমিক এবং নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে নগরীর ফেরীঘাট এলাকা হতে ট্রাক টার্মিনাল সরিয়ে ১৯৯৮ সালে নগরীর গল্লামারী-সোনাডাঙ্গা সড়কের পাশে ৬ একর জমির ওপর ট্রাক টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ২০০২ সালে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। প্রকল্পের মধ্যে ছিল-জমি অধিগ্রহণ, বাউন্ডারি, লোড-আনলোড সুবিধা, টিকিট কাউন্টার, ড্রেন, ৪৯টি ঘর, পাবলিক টয়লেট ইত্যাদি। এরপর ওই বছরই টার্মিনালটি চালু করা হয়। টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ২০০৩ সালে এমএসপি প্রকল্পের আওতায় আরও এক কোটি টাকা ব্যয়ে তিন তলাবিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনে রয়েছে ২০টি জানালা, দুটি কলাপসিবল গেট, বাতি, রড লাইট, বেসিন, হাতল ও হাতল ছাড়া চেয়ার, প্লাস্টিক, রিভলবিং ও লোহার ফিটিংস চেয়ার, কিচেন রুম, সিলিং ফ্যান, সেক্রেটারিয়েট টেবিল, ফাইল ক্যাবিনেট, খাট, চার্জার, আলমারি, ফায়ার সিলিন্ডার, বাথরুমসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। এরপরও টার্মিনালে ট্রাক রাখেন না মালিক ও চালকরা। নির্ধারিত ফি দিয়ে এখানে গাড়ি রাখার বিষয়ে আপত্তি মালিকদের। সারা নগরজুড়ে রাস্তার ওপরেই যত্রতত্র এসব গাড়ি রাখা হচ্ছে দেদার। এতে যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনদুর্ভোগ। ঘটছে নানা রকমের দূর্ঘটনা। এতে নাগরিক ভোগান্তি বাড়লেও ট্রাফিক বিভাগ ও খুলনা সিটি করপোরেশনের কাছে বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকা, খালিশপুর-দৌলতপুর, সোনাডাঙ্গা, রূপসা, কদমতলা, এম এ বারি সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধ ট্রাক রাখা রয়েছে। সেই সাথে নগরীর দেবেন বাবু রোড, শেখপাড়া, টুটপাড়া, বাগমারা, বসুপাড়া এলাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দখল করে রাখা রয়েছে ট্রাক। ট্রাকসহ পণ্যবাহী এসব পরিবহণের কারণে বিভিন্ন জায়গায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ নগরবাসী।
নগরীর ৪নং ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী মো. রিপন শেখ অভিযোগ করে জানান, কদমতলা এলাকায় রাত-দিন সবসময় ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়। সকালে এলাকার স্কুল-কলেজগামী বাচ্চাদের নিয়ে বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে যানজট লেগে থাকে। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। নগরীতে ট্রাক টার্মিনাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাক মালিকরা এখানে ট্রাক রেখে এলাকার বাসিন্দাদের হয়রানি করছে। এ বিষয় নিয়ে কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জানিনা কে এসব ভোগান্তি থেকে আমাদের নিস্তার দিবে।

নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুর রশীদ জানান, নগরবাসীর ট্যাক্সের টাকায় সিটি কর্পোরেশন ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। নগরীর ট্রাকগুলো ট্রাক টার্মিনালে সুশৃঙ্খলভাবে থাকবে। এতে করে নগরীর যানজট কমবে, মানুষের ভোগান্তীর লাঘব হবে। কিন্তু আমরা দেখছি তার উল্টোটা। ট্রাক টার্মিনালে ট্রাক রাখা হচ্ছে না, সেখানে তৈরি করা হয়েছে পাইকারী কাঁচাবাজার। যার ফলে টার্মিনাল ফাঁকা রয়েছে। এর ট্রাকগুলো যত্রতত্র প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে রাখা হয়েছে। এমনকি নগরীর অনেক আবাসিক এলাকার রাস্তাগুলোতেও ট্রাক পাার্কিং করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। আমরা আমাদের নাগরিক সুবিধা না পেয়ে আরও জিম্মি হয়ে যাচ্ছি।
নগরীর জিরো পয়েন্ট, দৌলতপুর ও কদমতলা এলাকায় প্রতিবেদকের কথা হয় ট্রাক চালক মো. জহিরুল ইসলাম খান, ইমরান হোসেন ও মো. সজলের সাথে তারা জানান, ট্রাক টার্মিনালটি নগরীর মাঝখানে হওয়ায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে মালামাল আনলোড করে যখন ট্রাক টার্মিনালে রাখতে যাই তখন পুলিশ আমাদের যেতে দেয় না। অন্যদিকে, ট্রাক টার্মিনাল থেকে ট্রাক নিয়ে বের হওয়ার সময় বিভিন্ন যায়গায় পুলিশকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে পুলিশ বিভিন্নভাবে আমাদের গাড়ি আটকিয়ে হয়রানি করে। সেই সাথে ট্রাক টার্মিনালে ট্রাক বা এ ধরণের পরিবহন রাখার পর্যাপ্ত যায়গা নেই। টার্মিনালের সামনে পাইকারী কাঁচাবাজার থাকার কারণে অনেক সময় টার্মিনালের ভিতরে আমরা প্রবেশ করতে পারি না। এসকল কারণে ট্রাক চালকেরা টার্মিনালে ট্রাক রাখতে আগ্রহী নয় বলে জানান তারা।
খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সেলিম হোসেন জানান, একটি সময় খুলনার ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের দাবি ছিলো খুলনা মহানগরীতে একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের। সেই দাবির প্রেক্ষিতে মহানগরীর সোনাডাঙ্গায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৩ সালে ট্রাক টার্মিনাল নির্মিত হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এতো টাকা ব্যয় করে টার্মিনাল নির্মিত হলেও এর কাঙ্খিত সুফল আমরা পাচ্ছি না। বিভিন্ন অসুবিধার কারণে অধিকাংশ ট্রাকমালিক ফি দিয়ে টার্মিনালে ট্রাক রাখতে চায় না। রাস্তা বা গ্যারেজেই তারা গাড়ি রাখে। এখানে মালিকরা আমাদের যেখানে ট্রাক রাখতে বলবে আমরা সেখানেই ট্রাক বা যানবাহন রাখবো। তিনি আরও জানান, ট্রাক টার্মিনালটি অপরিকল্পিতভাবে শহরের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে। সেই সাথে এখানে যে ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে সেগুলোও অপরিকল্পতিভাবে জায়গাটির মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে খুব সামান্য কিছু জায়গায় ট্রাক রাখার সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে ট্রাক ট্রার্মিনালে খুলনা সিটি কর্পোরেশন পাইকারী কাঁচাবাজার বসিয়েছে। এর ফলে পুরো ট্রাক টার্মিনালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাক টার্মিনাল থেকে কাঁচাবাজার সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ কাঁচা বাজারের কারণে ট্রাক টার্মিনালে ট্রাক রাখার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে খুলনা মহানগরীতে ট্রাক বা এ ধরণের যানবাহন প্রবেশের বিষয়ে বিধি নিষেধ রয়েছে। তাই যখন যানবাহনগুলো মালামাল নিয়ে ঢুকছে সেগুলো আনলোড করে গাড়ীগুলো ট্রাক ট্রার্মিনালে যেতে চাইলে পুলিশের বাঁধার সম্মুখিন হতে হয়। সেই সাথে ট্রাফিক পুলিশদের দাবি করা চাঁদার টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই এসব ঝাঁমেলার কারণে ট্রাক মালিক এবং চালকরা ট্রাক টার্মিনালে ট্রাক রাখতে আগ্রহী নন। অনেক সময় বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ট্রাফ পুলিশকে টাকা না দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তার পাশে ট্রাক দাঁড় করে রাখে। প্রত্যেক পদে পদে বছরের পর বছর আমরা পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আর কোন ভাবেই এ থেকে নিস্তার পাচ্ছি না। বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ট্রাক টার্মিনাল ট্রাক বা এধরণের যানবাহন আসার পরিবেশ আগে সৃষ্টি করতে হবে। ট্রাক টার্মিনালের ভিতরের  যেসব স্থাপনা রয়েছে  সেগুলো সরিয়ে টার্মিনালের বাউন্ডারীর সাথে দিলে ট্রাক রাখার আরও ভাল পরিবেশ হবে। পুলিশের হয়রানি বন্ধ, কাঁচাবাজার সরিয়ে ফেলা এবং ট্রাক টার্মিনালের পরিবেশ ভালো করলে সমস্ত মালিকরা এখানে ট্রাক রাখবেন বলে জানান এ শ্রমিক নেতা।
খুলনা সোনাডাঙ্গা পাইকারী কাঁচাবাজার মালিক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনালটি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকায় সিটি কর্পোরেশন ২০০৮ সালে নগরীর নিরালা এলাকা থেকে অস্থায়ীভাবে কাঁচা বাজারটি ট্রাক টার্মিনালে স্থানান্তর করা হয়। কাঁচা বাজারটি অস্থায়ীভাবে আমাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা এখানে আসার আগে প্রতিদিন ৫শত টাকাও রাজস্ব সংগ্রহ হতো না। এর এখন কাঁচাবাজার থেকে প্রতিদিন ১৮-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব আদায় করছে। তিনি আরও বলেন, কাঁচা বাজারের কারণে টার্মিনালের পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি সপ্তাহে ৩দিন এসে এখানকার আবর্জনা নিয়ে যায়।

খুলনা জেলা ট্রাক-ট্রাঙ্কলরী-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ অহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের অনেক দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তৈয়েবুর রহমান প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৩ সালে সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করেন। কিন্তু এতো টাকা ব্যয়ে নির্মিত টার্মিনালটির কোন সুফল আমরা ট্রাক মালিকরা পাচ্ছি না। কারণ অপরিকল্পিতভাবে শহরের মাঝখানে ট্রাক টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছে। ট্রাক টার্মিনালে যেতে পরিবহনগুলোকে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। আর এখানেই বাধে বড় বিপত্তি। দিনের একটি সময় শহরের মধ্যে প্রবেশে বাধানিষেধ রয়েছে। কোনভাবেই ট্রাফিক পুলিশ ট্রাকগুলোকে টার্মিনালে প্রবেশ করতে দেয় না। সেই সাথে রয়েছে পুলিশের হয়রানি। অন্যদিকে আমাদের জোর আপত্তি সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশন ট্রাক টার্মিনালের অর্ধেক জায়গা জুড়ে পাইকারী কাঁচা বাজার তৈরি করেছে। কাঁচাবাজার করার ফলে টার্মিনালের জায়গা যেমন কমে গেছে সেই সাথে কাঁচাবাজারের ময়লার কারণে এর পবিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, অনেকদিন ব্যবহার না করার কারণে ট্রাক টার্মিনালের ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে অন্যান্য স্থাপনাগুলো নির্মাণের ফলে এবং কাঁচা বাজারের কারণে খুলনার পণ্যবাহী সকল ট্রাক রাখার জায়গার সংকুলান হয় না। এসব কারণে ট্রাক মালিকরা টার্মিনালে ট্রাকগুলো রাখছে না। তবে আমরা আমাদের এসব সমস্যা নিয়ে মালিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে মিটিং করেছি কিন্তু এর কোন সুরাহা হচ্ছে না। ট্রাক টার্মিনালটি শহরের বাইরে কোথাও নির্মাণ করা উচিত ছিলো। ট্রাক টার্মিনালটি যদি বাইপাস সড়কের পাশে করা হতো তাহলে এ সমস্যা গুলো থাকতো না। তাই অচিরেই ট্রাক টার্মিনালটি শহরের বাইরে স্থানান্তর করার দাবি জানান এ পরিবহন মালিক সমিতির এ নেতা।

সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, ট্রাক টার্মিনালে ট্্রাক রাখার জন্য মোবাইল কোর্ট, ট্রাকচালককে জরিমানাসহ নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু টার্মিনালটি সম্পূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। বেশির ভাগ ট্রাক দৌলতপুর, খালিশপুর, জিরোপয়েন্ট, বারী সড়ক, রেলস্টেশন সংলগ্ন কদমতলাসহ বিভিন্ন স্থানে মালামাল আনলোড করে সেখানের সড়কেই অবস্থান করে। টার্মিনালে তারা যেতে চায় না। এছাড়া পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, ট্রান্সপোর্ট, ট্রাকমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদেরও যথেষ্ট অবহেলা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে তিনি কেসিসি রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ট্রাক টার্মিনালে মালিকরা ট্রাক না রাখার কারণে সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছিল। পরে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নগরীর পাঁচটি প্রবেশ পথে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা জানান, খুলনা নগরীর ট্রাকগুলো নির্ধারিত টার্মিনালে না রেখে যত্রতত্র সড়কে বিশৃঙ্খলভাবে রাখার বিষয়ে ট্রাক মালিক এবং শ্রমিক নেতাদের সাথে আমরা আলোচনা করেছি। তারা বলছে ট্রাক টার্মিনালে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যতগুলো ট্রাক রাখা সম্ভব ততগুলো ট্রাক যেন টার্মিনালে রাখা হয়। এছাড়া নগরীর সড়কে ট্রাক না রাখার বিষয়ে মালিক ও শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়েছে। কোন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ট্রাক পার্কিং যেন না করা হয় এবং যানজটের সৃষ্টি না সে বিষয়ে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, খুলনার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে কেসিসি ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় ৬ একর জমি নিয়ে ট্রাক টার্মিনাল নির্মিত হয়। সেখানে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে তিন তলাবিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবনও নির্মাণ করা হয়। তবে দুঃখের বিষয় নগরবাসীর ট্যাক্সের টাকা দিয়ে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ট্রাক টার্মিনাল নির্মিত হয়েছিল তা দুই দশকেও পূরণ হয়নি। কারণ ট্রাক টার্মিনালে ট্রাকমালিক ও শ্রমিকরা ট্রাক রাখতে আগ্রহী নন। এর পরিবর্তে তারা নগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়কে এমনকি আবাসিক এলাকার সরু রাস্তায়ও যানবাহনগুলো পার্র্কিং করে রাখে। এতে একদিকে যেমন শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে কেসিসি। আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। আমাদের খুলনা মহানগরীর রাস্তাগুলো খুব বেশি প্রশস্ত নয়। সেই রাস্তাগুলোতে ট্রাক বা এধরণের পরিবহন রাখার ফলে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এখানে যেমন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের গাফিলতি রয়েছে। তেমনি খুলনা সিটি কর্পোরেশনসহ ও পুলিশ প্রশাসনের অবহেলা রয়েছে। বর্তমান ট্রাক টার্মিনালটি শহরের বাইরে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা উচিত। যা অনেক সময়ের ব্যাপার। তবে সবপক্ষ মিলে আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান টার্মিনালটির সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টি করলে বর্তমান সমস্যা থেকে উত্তরণ হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এ নাগরিক নেতা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. খুদরত ই খুদা জানান, দুই দশক হয়ে যাওয়ার পরেও খুলনার ট্রাক টার্মিনালটি সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করা যাচ্ছে না এটা খুবই দুঃখজনক। এর প্রধান কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাব ছিল। প্রথমতঃ ট্রাক টার্মিনালটি বর্তমানে যেখানে রয়েছে সেটি যৌক্তিক জায়গা না। টার্মিনালটি নগরীর বাইরে স্থাপন করা উচিত ছিল। ট্রাক টার্মিনালটি নগরীর মধ্যখানে হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ কেন দুই দশকে ট্রাক টার্মিনালটিকে পরিপূর্ণ রূপে ব্যবহার করা গেল না। এখানে প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ট্রাক টার্মিনাল করেছে, তবে তারা এটা ব্যবহারের সুষ্ঠ পরিবেশ তারা কখনও তৈরি করে দেয়নি। ট্রাক চালক এবং শ্রমিকদের টার্মিনালে যেসব সুযোগ সুবিধা থাকা উচিত সেগুলো সেখানে নেই। নগরীর প্রধান সড়কগুলো দিয়েই কিন্তু ট্রাকগুলোকে বের হতে হয়। এখানে বিকল্প কোন সড়ক রাখা হয়নি। তৃতীয়তঃ ট্রাক টার্মিনালে একটি পাইকারী কাঁচাবাজার তৈরি করা হয়েছে। যেসব কারণে ট্রাক টার্মিনাল তার ব্যবহার উপযোগীতা হারিয়ে ফেলেছে। সর্বোপরি এটা সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাব। এসব ক্ষেত্রে কোন জবাবদিহিতা নেই, কোন দায়বদ্ধতা নেই। যার কারণে এসব উন্নয়ণ কোন কাজে আসছে না।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, খুলনার ট্রাক টার্মিনালটি শহরের বাইরে অন্যত্র সরিয়া নেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ট্রাক মালিকরা টার্মিনালটি ব্যবহার না করার কারণে নগরবাসীর সুবিধার্থে অস্থায়ীভাবে টার্মিনালটিতে পাইকারী কাঁচা বাজার স্থাপন করা হয়েছে। ট্রাকগুলোকে টার্মিনালে রাখার ব্যাপারে আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি। ট্রাক মালিকদের সাথে আমরা আলোচনা করেছি। তারপরও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। এ বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, ট্রান্সপোর্ট, ট্রাকমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদেরও যথেষ্ট আন্তরিকতার অভাব রয়েছে । তারা আন্তরিক হলে ট্রাক টার্মিনালে ট্রাক রাখা সম্ভব হবে। তবে ট্রাক টার্মিনালের পাশাপাশি পাইকারী কাঁচাবাজার নগরীর বাইরে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত স্থান খোঁজা হচ্ছে। উপযুক্ত জায়গা পেলে এগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu