• E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন

×

শত কোটি টাকার ফুটপাতের সুফল বঞ্চিত নগরবাসী : কেসিসি ও পুলিশের নজরদারির অভাবে দখলদারদের কবলে

  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৮৯ পড়েছেন

খুলনা মহানগরীর প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটপাতের সুফল বঞ্চিত নগরবাসী। নগরীকে দৃষ্টিনন্দন করতে ফুটপাত নির্মান করা হলেও তা ব্যবসায়ী, হকার ও বাড়ীওয়ালাদের দখলে চলে গেছে। এতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্মিত ফুটপাত নগরবাসীর কোন কাজেই আসছে না। উপরোন্তু দখলদারদের জন্য এটি নগরীর মানুষের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত নির্মানে কেসিসি’র মূূল উদ্দেশ্য। ফুটপাত দখলমুক্ত করে নগরবাসীর সহজ চলাচলসহ সৌন্দর্য বর্ধনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেসিসিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ।  

কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা ক্রমান্বয়ে স্থায়ী রূপ নেয়। এতে নগরবাসী বছরের প্রায় অর্ধেক সময় ধরে চরম দূর্ভোগের শিকার হয়। প্রতি বছর কেসিসি কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসনে ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যক্রম হাতে নিলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। এমতাবস্থায় গত ২০১৮ সালে কেসিসি নির্বাচনে বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে নগরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দেয়। নির্বাচনের পর সরকারের প্রধানমন্ত্রী কেসিসি মেয়রের দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেন। সে প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে নগরীতে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ৬০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মেরামত প্রকল্পের কাজ চলছে। এতে প্রায় ৩০ কিমি রাস্তা এবং ৩৫ কিমি ড্রেন মেরামত ও উন্নয়ণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান সড়কের পাশে ড্রেন এবং ড্রেনের ওপর সøাব দিয়ে ২০ কিলিমিটারেরও অধিক প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। দাতাসংস্থাও এই কাজে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউ, আহসান আহমেদ রোড, রতন সেন স্মরণি ও ক্লে রোডসহ বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে ফুটপাত নির্মাণ শেষ হয়েছে। নগরীর আরো বেশ কিছু সড়ক ও এলাকার ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে বলে কেসিসি সূত্র জানায়।

কিন্তু নগরীতে কেসিসি’র দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ণ হলেও সেগুলো নগরবাসীর কোন কাজেই আসছে না। যেসকল এলাকায় ফুটপাত নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে সে এলাকাগুলোতে স্থানীয় ব্যবসায়ী, দোকানদার, হকার ও বাড়ির মালিকরা দখল করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। কেসিসি নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত দখলদারদের কারণে হারিয়ে গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর ডাকবাংলো মোড় থেকে তুলাপট্টি পর্যন্ত ক্লে রোডের দুই পাশে ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। পথচারীদের হাঁটার জন্য ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে লাগানো হয়েছে টাইলস। ২০২১ সালের আগস্টে পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ফুটপাত। কিন্তু কোটি টাকার এই ফুটপাতে এক সপ্তাহও হাঁটতে পারেননি পথচারীরা। উন্মুক্ত করার ৭ দিনের মধ্যে দখল হয়ে যায় ফুটপাতের পুরোটাই।

শুধু ক্লে রোডই নয়; নগরীর অধিকাংশ সড়কেরই একই দশা। পথচারীদের হাঁটার জন্য প্রায় পৌনে একশো কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটারের অধিক ফুটপাত নির্মাণ করা হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া নগরীর স্যার ইকবাল রোড, কেডি ঘোষ রোড, ক্লে রোড, হেলাতলা রোড, পুরাতন যশোর রোড, পিকচার প্যালেস মোড় থেকে হাদিস পার্ক পর্যন্ত, কালীবাড়ী রোড, কেডিএ এ্যাভিনিউ, ফারাজী পাড়া মেইন রোড, মজিদ সরণি, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে গল্লামারী পর্যন্ত, গল্লামারী বাইপাস রোড, খালিশপুরের বিআইডিসি রোড, কদমতলা মোড় থেকে গাবতলা পর্যন্ত, দৌলতপুরের বিএল কলেজ মোড় থেকে মহসিন স্কুল মোড় পর্যন্ত, বিজেএ ভবণ সম্মুখ, সড়কের দুই পাশে ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে ব্যবসা খুলে বসেছেন এক শ্রেনীর ব্যবসায়ীরা।

নগরীর বড়বাজার এলাকার ক্লে রোড, হেলাতলা রোড, স্টেশন রোড, পুরাতন যশোর রোড ও কেডি ঘোষ রোডের দুই পাশের সড়কের ফুটপাত এবং ফুটপাতসংলগ্ন সড়কের ওপর কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল, বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র, ফলের দোকান, মনিহারি সামগ্রী, টি-স্টল, খাবারের দোকান, ঘড়ির বিক্রয় বা মেরামতের দোকান, মাছ-তরকারিসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে ফুটপাত দখল করে দিব্যি ব্যবসা চলছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড়, খুলনা প্রেস ক্লাবের পাশে বেনী বাবু রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, ইসলামপুর রোড, দোলখোলা মোড়, বয়রা রায়ের মহল জলিল সরণী, বয়রা শেরের বাড়ী মোড়, নতুন রাস্তা কবির বটতলাসহ নগরীর বিভিন্ন সড়কের ফুটপাত জুড়ে মাছ নিয়ে বসেছে কিছু ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া খালিশপুরের ব্যস্ততম সড়ক বিআইডিসি রোডসহ দৌলতপুরস্থ খুলনা যশোর মহাসড়কের দুই পাশে স’মিল মালিকরা ফুটপাত দখল করে গাছের গুঁড়ি ও কাঠ রেখে ব্যবসা করছেন। গাবতলা মোড় থেকে নতুন রাস্তা মোড় পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে ব্যবসা করছেন। দৌলতপুরে বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়কের ফুটপাত দখল করে চলেছে নানা ধরনের ব্যবসা। ব্যস্ততম এসব সড়কের ফুটপাত ও সড়কের অংশবিশেষ দখল হওয়ায় যানবাহন ও পথচারী চলাচলে মারাত্মক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

নগরীর এসব সড়ক অত্যন্ত ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হিসেবে বিবেচিত। এ সড়কগুলো দিয়ে খুলনা গুরুত্বপূর্ন দপ্তর, পরিদপ্তর, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনই শতশত বিভিন্ন যানবাহন ও হাজারো পথচারী চলাচল করে। ফুটপাতগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীরা সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে, যানজটে পড়ছে নগরবাসী।

কেসিসির ক্ষতিগ্রস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা মেরামত প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান জানান, নগরীর প্রতিটি প্রধান সড়কের পাশে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু ফুটপাতের কাজ শেষ হয়েছে। আপার যশোর রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, ট্যাংক রোড, শামসুর রহমান রোড, ফারাজিপাড়া সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলছে। অধিকাংশ সড়ক ও ফুটপাতের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি ড্রেন ও সড়কের সঙ্গেই ফুটপাত নির্মাণের জন্য পৃথক ব্যয় ধরা রয়েছে। প্রকল্পের সব ড্রেনের ওপর স্লাবসহ ফুটপাত ও টাইলস যোগ করে ফুটপাতের জন্য আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

নগরীর ক্লেরোডে ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী জলিল শেখ জানান, আমরা ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা সামনের বা পেছনের বড় দোকানমালিকদের প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছি। গরীব হিসাবে এটাই অনেক প্রাপ্তি। বর্তমানে টাকা হলেও জায়গা মেলেনা। আমাদেরও তো ছেলে মেয়ে নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচতে হবে।

নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা বেসরকারী চাকুরীজীবি মো. আমিরুল ইসলাম জানান, খুলনা মহানগরীতে সিটি কর্পোরেশন সাধারণ জনগণের টাকায় শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাযক্রম করছে। কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে এর সুফল নগরবাসী ভোগ করতে পারছে না। নগরবাসীর নিরাপদ হাঁটাচলার জন্য নগরীর বিভিন্ন সড়কে দৃষ্টনন্দন ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ ফুটপাত দখল করে রেখেছে। তারা সরকারের সব অর্জনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আর এসব ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বর্তমান সরকারের নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি চক্র সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এবং সরকারের উন্নয়ন কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইচ্ছাকৃতভাবে এসব এহেন কাজ করছে। এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে অচিরেই সিটি কর্পোরেশনের এবং জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

নগরীর ক্লে রোড দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম মাহফুজুল ইসলাম বাবলু জানান, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথে রাস্তা এবং ফুটপাত দখল করে অসাধু ব্যবসায়ী এবং ভ্রাম্যমান হকারদের ব্যবসা করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। এসব হকাররাও তাদের ইউনিয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী করেছে তারা কোথায় যাবে। তাই এখানে প্রশ্ন এসে যায় এসব হকারদের পূনর্বাসন করার। আমরাও চাই এসব হকারদের পূনর্বাসন করা হোক। কারণ সাধারণ ব্যবসায়ীদের যেমন সংসার আছে তাদেরও সংসার আছে। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবে। এসব বিবেচনায় এসব ভ্রাম্যমান হকারদের নগরীর ফেরীঘাট বাসস্টান্ডে পূনর্বাসনের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের কাছে প্রস্তাব রেখেছি। তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পুনর্বাসিত করলে নগরবাসীসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে। সেই সাথে নগরীতে যেসব ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের নিকট যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানানো হয়েছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, স্থায়ী ব্যবসায়ীরাও ফুটপাত দখল করে তাদের মালামাল রাখছে এটা সত্য। কারণ একজন স্থায়ী ব্যবসায়ী যখন দেখছে তার দোকানের সামনে রাস্তা দখল করে ভ্রাম্যমান হকার মালামাল রেখে ব্যবসা করছেতখন দোকানদাররা তাদের মালামাল ফুটপাতের সামনে দিয়ে রাখে যাতে হকাররা বসতে না পারে।  এসব ব্যবসায়ীরা যদি তাদের মালামাল সামনে না রাখে তাহলে শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের লোকজন এসে এখানে হকারদের বসিয়ে দেয়। সে সময়ে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমরা বাধ্য হয়ে তাদের বসতে দিতে হয়। তাই নগরবাসী ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভ্রাম্যমান হকারদের অতি দ্রততম সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পুনর্বাসনের দাবি জানা এ ব্যবসায়ী নেতা।

এ বিষয়ে খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জানান, ব্যবসায়ীরা সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের সকল সংস্থার সকল নিয়মকানুন মেনে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা করছে। সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্সসহ অন্যান্য সকল ফি পরিশোধ করছে। অথচ হকারদের কারণে ঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারছে না। খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের সামনের সড়ক ফুটপাতসহ ডাকবাংলা এলাকার সকল সড়ক ও ফুটপাত এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এবং হকারদের দখলে। এদের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন মিটিংয়ে এসব বিষয় সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে বলেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এসব হকারদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এ থেকে নিস্তারের কোন পথ জানা নেই। খুব শীঘ্রই প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়ের সুরাহা না করলে কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক মো. মফিদুল ইসলাম টুটুল জানান, সাধারণ  ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট, ট্যাক্স, দোকানভাড়া ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় সরকারের অনুমতি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। খুলনা মহানগরী জুড়ে হকাররা সেসব ব্যবসায়ীদের ব্যবসা এবং সাধারণ জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। নগরীর কোন সড়ক ও ফুটপাত দখল করে হকাররা ব্যবসা করুক এটা কেউই চায় না। কারণ সিটি কর্পোরেশন প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয় করে নগরবাসীর চলাচলের জন্য বিভিন্ন সড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত নির্মাণ করেছে। সে ফুটপাত দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারবে না তা কোন ভাবেই হতে পারে না। বিভিন্ন সময়ে এসব হকারদের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নিলেও আবারও তারা সড়ক দখল করে ব্যবসা করে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মার্কেটের মালিক ও দোকানদের সচেতন হতে হবে যাতে করে হকাররা তাদের দোকানের সামনে বসতে না পারে। সেই সাথে কোন স্থায়ী দোকানদার যাতে করে ফুটপাত ও রাস্তায় মালামাল না রাখে সে বিষয়ে চেম্বারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  চেম্বার এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে হকারদের ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংকের পর থেকে ফেরীঘাট পর্যন্ত ফাঁকা জায়গায় বসার জন্য বলা হয়েছে। হকাররা ঐসব এলাকায় বসলে ডাকবাংলা এলাকায় নগরবাসীর চলাচলের ভোগান্তি কমে যেত। সেই সাথে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রেলওয়ের যেসব পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে সেসব স্থানে এসব হকারদের স্থায়ীভাবে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে নগরবাসী উপকৃত হবে বলে জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।

খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন জানান, ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এটা যারা করে তাদের মূল্যবোধের অভাব। কারণ সড়কদিয়ে সাধারণ মানুষ সহ যানবহন চলাচল করে। কোনো অবস্থাতেই জনগনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। আমরা প্রতিনিয়ত এসব হকার্স এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এদেরকে তাড়িয়ে দিলেও আবার এরা ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে তাদের দোকান নিয়ে বসে। বিষয়টি সুরাহার জন্য আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

খুলনা সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মমতাজুল হক জানান, জানা মতে কোথাও ফুটপাতের ওপর দোকানপাট নেই, থাকলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ট্রাফিক এবং পেট্রোল পুলিশ আছে তারা সরিয়ে দেয়। আর যেটাকে সরানো যায় না তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ব্যবস্থাটি নিয়মিত করা হয়। সেই সাথে সিটি কর্পোরেশনের লোকজনও ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকে। তবে দেখা যায় যে, এরা আদালতে সামান্য জরিমানা দিয়ে আবারও এসে বসে। আবারও তাদেরকে সরিয়ে দিতে হয়। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ ও প্রসিকিউশন বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করলে ভালো হয় বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শামছুজ্জামান মিয়া স্বপন জানান, ২১নং ওয়ার্ডে ডাকবাংলা এবং ক্লেরোড এলাকায় হকারদের উৎপাত বেশি। বিভিন্ন সময়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ করার পর আবারও এরা ফুটপাত এবং রাস্তায় দোকান সাজিয়ে বসে। কিছু কিছু দোকানদাররাও তাদের দোকানের সামনের ফুটপাত দখল করে দোকানের মালামাল রাখে। এদের উচ্ছেদের ক্ষেত্রে পুলিশের অবহেলা রয়েছে। উচ্ছেদের পর যদি পুলিশ তাদেরকে বসতে না দেয় তাহলে তারা কোনভাবেই বসতে পারে না। সাধারণ পথচারী এবং ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ লাঘবে আবারও নগরীতে খুবই শীঘ্রই বড় ধরণের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা জানান, নগরীকে যানজটমুক্ত ও অবৈধ ফুটপাত দখলাদারদের উচ্ছেদে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। যানজটমুক্ত আর নিরাপদ-পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেওয়াই ট্রাফিক বিভাগের প্রধান লক্ষ্য। যেহেতু নগরীতে ফুটপাত দখলের দৌরাত্ম বেড়েছে, তাই অচিরেই কেসিসি’র সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এক্ষেত্রে আমাদের ট্রাফিক বিভাগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার থানারও দায়িত্ব রয়েছে। তারা কঠোর পদক্ষেপ নিলে হকাররা বা ফুটপাত দখলকারীরা কোনভাবেই রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে রাখতে পারবে না বলে জানান তিনি।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, প্রায় সাড়ে ৪৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের খুলনা মহানগরীতে মানুষের হাটার জায়গা খুবই কম। নগরীর ফুটপাতগুলোর অবস্থা ছিলো রুগ্ন দশা। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নগর পরিকল্পনাবিদ ও নাগরিক নেতারা প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ এবং হাঁটার জায়গা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। ২০১৮ সালে বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক দায়িত্বগ্রহণের পর সড়ক ও ড্রেন সংস্কার এবং ফুটপাত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। তারই ধারাবাহিকতায় নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু কতিপয় কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে এসব ফুটপাতের সুফল নগরবাসী পাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে ভ্রাম্যমান হকারদের পাশাপাশি সাধারণ স্থায়ী ব্যবসায়ীরা এমনকি কিছু বাড়ীর মালিকেরা ফুটপাত দখল করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। জনগণের টাকায় সিটি কর্পোরেশন যে উন্নয়ণ কার্যক্রম করছে তার সুফল নগরবাসী এসব কতিপয় অসাধু ব্যবাসায়ীদের কারণে ভোগ করতে পারছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্র্র্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এ নাগরিক নেতা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. খুদরত ই খুদা জানান, নগর উন্নয়নে এবং সাধারণ জনগনের হাটাচলার জন্য ফুটপাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফুটপাতের উন্নয়ন হওয়া উচিত। তবে নগরীল ফুটপাত যে মান হওয়া উচিত সে মানের হচ্ছে না। ঠিকাদাররা নিম্ন মানের কাজ করছে। সিটি কর্পোরেশনের যেভাবে মনিটরিং করা উচিত সেভাবে করছে না। মাঝে মাঝে সিটি মেয়র ঝটিকা পরিদর্শন করলেও রেগুলার মনিটরিং করছে না। ফুটপাত তখনই দখলমুক্ত থাকবে যদি ভ্রাম্যমান হকারদের আলাদাভাবে পুনর্বাসন করা যায়। বর্তমান সিটি মেয়রের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো ফুটপাত দখলমুক্ত করা এবং হকারদের পুনর্বাসন করা। সেই কাজটি কিন্তু হয়নি। যার ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফুটপাত করা হচ্ছে উন্নয়নের নামে টাকা খরচ করা হচ্ছে কিন্তু জনগনের কল্যানে আসছে না। তিনি আরও জানান, খুলনা মহানগরীতে নিরবিচ্ছিন্ন কোন ফুটপাত নেই। দেখা গেছে ১ কিলোমিটার ফুটপাতের পরে আর ফুটপাত নাই, রাস্তা দিয়ে হাটতে হচ্ছে। তারমানে কিছু সময় ফুটপাত দিয়ে হাটলাম আর কিছু সময় রাস্তা দিয়ে হাটলাম। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফুটপাত করার কোন দরকার নেই। একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা ওয়ার্ডে নিরবিচ্ছিন্ন ফুটপাত নির্মান হওয়া উচিত যেটা হবে খুলনার রোল মডেল। যেখানে শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীরাও যাতে চলাচল করতে পারে। এভাবে যদি পরিকল্পনা করে ফুটপাত তৈরি না করা হয় তাহলে জনগণ সুুফল পাবে না। এতে শুধু উন্নয়নের নামে অর্থের অপচয় হবে কিন্তু সাধারণ নগরবাসীর কোন কাজে আসবে না।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, নগরীতে অবৈধভাবে ফুটপাত দখলকারীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কেসিসি’র নিয়মিত অভিযান অব্যহত রয়েছে। তবে এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আরও তৎপর হওয়া উচিত বলে তিনিু মনে করেন। তিনি আরও জানান, সিটি কর্পোরেশনের লোকজন গিয়ে ফুটপাত দখলকারীদের উচ্ছেদ করলেও ২-৩ দিন পর আবারও সড়ক ও ফুটপাত দখল করে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী তাদের মালামাল রাখে। এক্ষেত্রে পুলিশ তাদের কাজ যথাযথভাবে পালন করলে এ ভোগান্তি থেকে সাধারণ ব্যবসায়ী ও নগরবাসী পরিত্রাণ পাবে। সেই সাথে ভ্রাম্যমান হকারদের নগরীর একটি নির্দিষ্ট স্থানে পুনর্বাসন করার চিন্তা ভাবনা চলছে। উপযুক্ত জায়গা পেলে তাদেরকে সেখানে পুনর্বাসন করে  নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত ও চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে জানান তিনি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA