ঘের দস্যুদের কবল থেকে নিজেদের জমি দখলমুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা, মেদেরচর, পদ্ম পুকুর, হলুদ বুনিয়া, বীনাপানি গ্রামের ভুক্তভোগী স্থানীয়রা। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারী) দুপুরে চরামুখা গ্রামে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে জমি দখলমুক্ত করাসহ ঘের দস্যুদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন ভুক্তভোগীরা।
ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রনজিত কুমার মন্ডল, প্রশান্ত মন্ডল, সুকুমার মন্ডল, আকবর মুন্সী, অর্চনা রানী মন্ডলসহ অন্যান্যরা বক্তৃতা করেন। এসময়ে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ঘের দস্যু মাসুদ রানা, আবুল হাসনাত রিজভী, বাবু, মামুন, হরিদাস, রহমত উল্লাহ, প্রাণ গোপাল, ইব্রাহিমসহ দস্যু বাহিনীরা স্থানীয়দের প্রায় ৪৫০ বিঘা ঘের দখল করে রেখেছে। ঘের দস্যু মাসুদ রানাসহ অন্যান্যরা ঘের মালিকদের পৈত্রিক জমি ঘের করার জন্য লিজ নিলেও দীর্ঘদিন ধরে জমি মালিকদের লিজের টাকা দিচ্ছে না। জমির মালিকেরা ঘেরের জমি ফেরত চাইলেও মাসুদ রানা ও তার লোকজন মালিকদের ঘেরের কাছে যেতে দিচ্ছে না। ঘের দস্যুরা ঘেরের জমির মালিকদের প্রতিনিয়ত জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে হয়রানি। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঘের জমির মালিকদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে চিহ্নিত দস্যুরা। এমনকি পুলিশকে দিয়েও বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। স্বাধীন দেশে রেকর্ডভুক্ত পৈতৃক সম্পত্তি কতিপয় ঘের দস্যুদের জন্য ভোগ করতে পারছে না তারা। চিহ্নিত ঘের দস্যুরা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়নবাসীর জীবন জীবিকার শেষ সম্বল সামান্য জমিটুকুও দখল করে রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে এবং এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক নেতাদের নিকট অভিযোগ জানিয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন ইউনিয়নবাসীরা। জেলার সর্ব দক্ষিণের সুন্দরবন ঘেষা নদী ভাঙন কবলিত ইউনিয়ন উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার অসহায় নিরীহ মানুষদের জিম্মি করে ঘের দখল করে ঘের দস্যুরা সন্ত্রাসীর রাজত্ব কায়েম করেছে। এসময়ে এলাকাবাসী ঘের দখলমুক্ত করাসহ ঘের দস্যুদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
তবে স্থানীয়দের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে অভিযুক্ত মাসুদ রানা জানান, এলাকার ১৯৬ জন জমির মালিকের নিকট থেকে লিখিতভাবে লিজ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে ঘেরে মাছ চাষ করছেন তিনি। অধিকাংশ জমির মালিকেরা সময়মত এসে তাদের জমির লিজের টাকা নিয়ে যায়। ২-৩ জন জমির মালিক রয়েছে যাদের জমির পরিমান খুবই সামান্য তারা লিজের টাকা নিতে আসে না। তারাই এলাকার কতিপয় দূষ্কৃতিকারীদের সহায়তায় এসব অপপ্রচার ও চক্রান্ত করছে। তারা মিথ্যা মামলা দিয়েও হয়রানি করছে তাদের। জমির মালিক যারা টাকা নিতে আসবে তাদের সকলকেই লিজের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। জমির মালিকদেরও জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।