• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ অপরাহ্ন

×

ফিরে দেখা খুলনা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় : নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা পরিদর্শক বাড়ছে অনিয়ম ও দুর্নীতি, সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য নষ্ট হচ্ছে- বাড়ছে ক্ষোভ

  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩
  • ২৯৬ পড়েছেন

খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ওএমএস এর চাল-আটা বিক্রয় কার্যক্রমে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছে। ফলে মহানগরীর ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য বিক্রির কার্যক্রমের যথাযথ তদারকি হচ্ছে না। ওএমএস ডিলাররা নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে থাকায় তাদেরকে পাত্তা না দিয়ে খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রি নিয়ে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এমনকি ওএমএসের বরাদ্দকৃত চাল ও আটা হতদরিদ্রদের না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করারও অহরহ অভিযোগ রয়েছে। এতে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় ওএমএসের চাল-আটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্ররা। ফলে বর্তমান সরকারের খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে নেয়া কমমূল্যে খাদ্য বিক্রয় কর্মসূচীর মহতি উদ্যোগ খাদ্য বিভাগের অবহেলা এবং ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম দূর্নীতির কারণে নষ্ট হচ্ছে। এতে সরকারের প্রতি ওএমএসের খাদ্য ক্রয় বঞ্চিত হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ খাদ্য বিভাগের যথাযথ মনিটরিং ও তদারকিতে উদাসীনতা এবং ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সরকারের হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী সফল করার তাগিদ দিয়েছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, বর্তমান সরকারের নেয়া খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় খুলনা মহানগরী এলাকায় মোট ওএমএস ডিলারের মধ্যে প্রতিদিন ৩৭ জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল-আট খোলা বাজারে বিক্রয় করা হয়। তার মধ্যে ২৪ জন ডিলার স্থায়ী দোকানে দেড় টন চাল ও ১ টন আটা এবং ১৩ জন ডিলার ট্রাক সেলের মাধ্যমে শুধুমাত্র ২ টন আটা খোলা বাজারের বিক্রয় করে। ওএমএসের প্রতিটি স্থায়ী দোকানে এবং ট্রাক সেলের জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে বিক্রয় কার্যক্রম তদারকি করতে ১জন করে তদারকী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তারা ওএমএস ডিলার সঠিক নিয়মে ও সুষ্ঠুভাবে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে কিনা সে বিষয়ে তদারকি করে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত খাদ্য পরিদর্শক এবং উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা তদারকির দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু খাদ্য বিভাগের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে খাদ্য পরিদর্শক ও উপ-খাদ্য পরিদর্শকদের স্থলে ২০তম গ্রেডের নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে তদারকির কাজ করানো হচ্ছে। এতে করে ওএমএস এর চাল-আটা বিক্রিতে ডিলাররা এধরণের তদারকি কর্মকর্তাকে পাত্তা না দিয়ে যথেচ্ছ অনিয়ম ও দূর্নীতি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রতিদিনের ওএমএসের চাল-আটা বিক্রয় কার্যক্রম ও তদারকির কর্মকর্তার তালিকা থেকে জানা গেছে, গত ১৬ মার্চ পুরাতন রেল স্টেশন সংলগ্ন স্থানে ওএমএস ডিলার মেসার্স অঞ্জন ট্রেডার্সের বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে নিরাপত্তা প্রহরী আব্দুর রশীদ গাজীকে, রায়পাড়া ক্রসরোড মুসলমানপাড়া পয়েন্টে মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকি কর্মকর্তা গাড়ী সহকারী মো. মিজান শেখ, বানগাতী বাজারে মেসার্স মঞ্জুয়ারা এন্টারপ্রাইজের ও চানমারী বাজারে মেসার্স রুমানা ট্রেডার্সের বিক্রয় কার্যক্রমে পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. সেলিম উদ্দিন, ভৈরব স্ট্যান্ড রোডে মেসার্স শারাফাত এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী শেখ আসাদ উল ইসলাম, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী এলাকায় মেসার্স ইকবাল এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী হারান চন্দ্র বিশ্বাস, নুর নগরমোড় ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন মেসার্স রহিমা ট্রেডার্স বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী আবু হোসেন অপু, সোনাডাঙ্গা তেলের পাম্প সংলগ্ন এলাকায় মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রহরী অহিদ মোল্লাকে তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। একই ভাবে চলতি মার্চ মাসের অন্যান্য দিনের বিক্রয় কার্যক্রমের তালিকায় নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও গাড়ী সহকারী সহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দিয়ে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রির তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। নগরীর ওএমএস ডিলাররা যেখানে খাদ্য পরিদর্শক, উপ-খাদ্য পরিদর্শক ও সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের তদারকি কার্যক্রমের তোয়াক্কা না করে অনিয়ম-দুর্নীতি করার অভিযোগ রয়েছে। সেখানে তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের তদারকি কতোটা কাযকরী তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই গত ৬ মার্চ ওএমএস ডিলার মেসার্স শান্ত এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিএল কলেজ দ্বিতীয় গেটে কাশিপুর এলাকায় ওএমএস’র সম্পূর্ণ চাল বিতরণ না করে বাহিরে বিক্রয় করায় ১৫ জন প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষরিত ১ টি অভিযোগ খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেয়া হয়। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এসব নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের তদারকির কোন অভিজ্ঞতা না থাকার দরুন কিছু কিছু ডিলাররা অনিয়ম করার সুযোগ পাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একজন খাদ্য পরিদর্শক জানান, ওএমএসের বিক্রয় কার্যক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের তদারকী কর্মকর্তা নিয়োগ করায় আমরাও বিব্রত বোধ করছি। কারণ এসব কাজে তাদের কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় মাঝে মধ্যেই নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তাজুল ইসলাম জানান, আমরা নিরুপায় হয়ে অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করাচ্ছি। প্রত্যেকটি ডিলার পয়েন্টে আমরা তদারকি কর্মকর্তা দিচ্ছি। খাদ্য বিভাগে পরিদর্শক কর্মকর্তা পদের এতো লোক আমাদের নেই। বতর্মানে আমাদের মঞ্জুরিকৃত পদই অনেক কম আছে। তবে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে প্রত্যেকটি ডিলার পয়েন্টে ১জন করে তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) দেয়া হচ্ছে। আমরা কোন পয়েন্ট কোনভাবেই খালি রাখতে পারছি না। তাই এসব কর্মচারীদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে অচিরেই নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন পরিদর্শক আসবে। তখন হয়তো এ সমস্যা থাকবে না।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, খাদ্য বিভাগের যথাযথ মনিটরিং ও তদারকিতে উদাসীনতা রয়েছে। আর এ কার্যক্রম কোনভাবেই এ শ্রেণীর কর্মচারীদের দিয়ে করানো উচিত নয়। কারণ এতে করে ওএমএস ডিলাররা অনিয়ম ও দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্ররা। এসব বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সরকারের হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী সফল করার তাগিদ দিয়েছেন এ নাগরিক নেতা।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA