• E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন

×

গণহত্যা দিবস পালন করেনি খুলনা বিএনপি, ক্ষোভ-নিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ও নাগরিক নেতাদের : গণহত্যা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না দাবি সচেতন মহলের

  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩
  • ৩২৯ পড়েছেন

দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাক বাহিনী ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা চালায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। এ গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে প্রতি বছর শ্রদ্ধা জানায় রাজনৈতিক দলসহ পুরো জাতি। কিন্তু এবারের ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে শহীদের প্রতি কোন শ্রদ্ধা জানানো এবং তাদের স্মরণে কোন স্মরণসভা বা কোন কর্মসূচী পালন করেনি খুলনা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো। ভয়াল এ কালরাত্রিকে স্মরণ করে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ২৫ মার্চের প্রথম প্রহরে খুলনার গল্লামারী বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়নি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং এর কোন অংগ ও সহযোগী সংগঠনকে। এমনকি ২৫ মার্চ সারাদিন বিএনপি এবং তাদের অংগ সংগঠন কোন কর্মসূচীও পালন করেনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার দলের নেতৃবৃন্দ সবসময় বিএনপিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করে আসছে। কিন্তু ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ কোন কর্মসূচী পালন না করায় সমালোচনার ঝড় বইছে খুলনা জুড়ে। বিএনপির এমন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন একাত্তরের রনাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা, নাগরিক নেতা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিরীহ বাঙ্গালীদের ওপর ইতিহাসের ন্যক্কারজনক গণহত্যায় বিশ্বাস করে না দলটি এবং এর অংগ সংগঠনগুলো। এমনকি বিএনপি ’৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর নিরীহ বাঙ্গালীদের নির্বিচারে হত্যাকে স্বীকারও করে না। যে দলটি বাংলাদেশের গণহত্যায় বিশ্বাস করে না তারা কখনও স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠন হতে পারে না। তারা দেশের সার্বভৌমত্বেও বিশ্বাস করে না বলে বলেও মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ২৪ মার্চ রাত ১২:০১ মিনিটে অর্থ্যাৎ ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে আওয়ামী লীগ ও তার অংগ সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল খুলনার গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে গণহত্যায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও দেখা যায়নি খুলনা বিএনপি ও তার কোন অংগ সংগঠনকে। এমনকি ২৫ মার্চ সকালেও গল্লামারী শহীদ স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেনি দলটি ও তাদের কোন অংগ সংগঠন। এছাড়া গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভাসহ অন্য কোন কর্মসূচীও নেয়নি খুলনা বিএনপি। ২৪ মার্চ মহানগর ও জেলা বিএনপি’র ইমেইলের মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলোতে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গণহত্যা দিবসের কোন কর্মসূচীর বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে মহানগর বিএনপি মহান স্বাধীনতা দিবস এবং আগামী ৩১ মার্চ তাদের ইফতার মাহফিল সফল করার লক্ষে এবং জেলা বিএনপি মহান স্বাধীনতা দিবস পালন ও ইফতার মাহফিল আয়োজনসহ সাংগঠনিক বিষয়ের প্রস্তুতি সভার কথা জানিয়েছিল। বিএনপির প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকেই গণহত্যা দিবসে তারা কোন কর্মসূচী নেয়নি সেটা প্রতিয়মান হয়।

এ বিষয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম তুহিন জানান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের কোন কর্মসূচী নেই। তবে ২৫ মার্চ (শনিবার) রাতে যেটিকে কালরাত বলা হয় সেই মূর্হূতকে ধরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। কোন আলোচনা সভার কর্মসূচী আমাদের ছিলো না। তবে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে মহানগর বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভাসহ বিস্তারিত কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। গণহত্যা দিবসে কেন কোন কর্মসূচী নেই সে বিষয়ে তিনি কোন উত্তর দেননি।

খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী জানান, রমজানের কারণে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে কোন কর্মসূচী নেয়া হয়নি। আমরা ২৬ মার্চ রাতে গল্লামারী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে দলের পক্ষ থেকে রাতে শ্রদ্ধা জানাতে যাবো। এবং রবিবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা কর্মসূচী রয়েছে। তবে বিএনপি স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল দাবি করলেও কোন গণহত্যা দিবসে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কোন কর্মসূচী রাখেনি সে বিষয়ে তিনি ভুল স্বীকার করেন। এবং এ বিষয়টিতে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা জানান, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দলের কোন কর্মসূচী না থাকা অত্যন্ত লজ্জাজনক। বিএনপি সবসময় দাবি করে তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু গণহত্যা দিবসে তারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়নি এমনকি কোন কর্মসূচী পালন করেনি। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবস পালন করবে না, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে না এমনটি জাতি তাদের কাছ থেকে আশা করেনা। তারা ৩০ লক্ষ শহীদদের প্রতি অবজ্ঞা করেছে। শহীদদের প্রতি অবজ্ঞা করা দেশের স্বাধীনতার প্রতি অবজ্ঞা করা, স্বাধীনতার ইতিহাসকে অবজ্ঞা করা। আমরা তাদের এ জঘন্য কর্মকান্ডকে ধিক্কার জানাই।

সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক) খুলনার সভাপতি এ্যাড. খুদরত-ই-খুদা জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অন্যতম অংশ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা। এটা অস্বীকার বা অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। বিএনপি’র মতো একটি বড় রাজনৈতিক সংগঠন এ গণহত্যা দিবসে কোন কর্মসূচী পালন করবে না এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ হতে পারে, মত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু গণহত্যা, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এগুলো সবার। এখানে কোন বিভেদ থাকতে পারে না। ’৭১ সালে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি দলমত নির্বিশেষে সকলের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। অনেক বিষয় নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু ইতিহাস নিয়ে কোন বিতর্ক থাকতে পারে না। যারা গণহত্যায় বিশ্বাস করে না তারা কখনও স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠন হতে পারে না এবং তারা দেশের সার্বভৌমত্বেও বিশ্বাস করে না। তাদের এধরণের কাজ নিন্দনীয় বলে তিনি মনে করেন।

খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার অধ্যা. আলমগীর কবির জানান, যারা এদেশে জন্ম গ্রহণ করেছে, এদেশে বেড়ে উঠেছে তারা ’৭১ সালের গণহত্যাকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে না। সেই সাথে কোন বিবেকবান মানুষ এ গণহত্যাকে সমর্থন জানাতেও পারে না। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে এ গণহত্যাকে সমর্থন দেয়। কারণ গণহত্যায় অংশ নেয়া অনেক নেতাকর্মী তাদের দলে রয়েছে। এছাড়া গণহত্যায় সরাসরি জড়িত জামায়াতে ইসলামের সাথে তাদের দীর্ঘ দিনের সখ্যতা রয়েছে। তাই এ ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবসে দলটি কোন কর্মসূচী দেয়নি। যে দলের মহাসচিব রাজাকারের সন্তান সে দলতো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী হতে পারে না। তাদের পক্ষে দেশের জন্য জীবন দেয়া ৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি, গণহত্যা দিবসের শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব নয়। কারণ তারা পাকিস্তানীদের দোসর হিসেবে এখনও রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এধরণের কর্মকান্ডে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিন্দা ও ধিক্কার জানান তিনি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA