শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
খুলনার সবজির বাজারে দামে স্বস্তি;কমেছে গোশ ও মাছের দাম  নির্বাচনের ট্রেন চলছে, কেউ থামাতে পারবে না : ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা আমাকে এমপি না, জনতার সেবা করতে পাঠিয়েছেন : এস এম কামাল হোসেন ডলারের দাম আরও কমলো খুলনায় কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিকী প্রদর্শন খুলনা—১ আসন: জনগণের জন্য কাজ করতে চান সাবেক এমপি ননী গোপাল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অব:) এর খুলনা সফরসূচি বিএনপি নেতার ভাইয়ের ইন্তেকালে শোক মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নোবেল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নড়াইলের নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

খুলনায় চিকিৎসক কর্তৃক কলেজ ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ

দেশ প্রতিবেদক:
  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩
  • ৪৬৮ পড়েছেন

♠ ফেসবুক পেইজে লাইভ করে চিকিৎসককে ব্লাকমেইল

♠ ডলারে সাংবাদিক-টাকায় পুলিশ ম্যানেজ

♠ নগরী জুড়ে আলোড়ন

খুলনায় ডা. বিপ্লব কুমার দাস কলেজ ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন ও হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নগরীর কেডিএ এভিনিউস্থ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখার অন্তরালে চিকিৎসক এ যৌন হয়রানি করে। খবর পেয়ে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক পালিয়ে যায়। উদ্ধারকালে যৌন হয়রানির সত্যতা মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনাটি খুলনার একটি ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কতিপয় সাংবাদিককে ডলারে এবং পুলিশের সাথে টাকায় রফাদফা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ফলশ্রুতিতে এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি। সাথে সাথে ফেসবুক পেইজে লাইভ সম্প্রচারিত ভিডিওটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে ওই সাংবাদিক। এ ঘটনায় নগরীতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।  

ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী জানায়, তার বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি। বয়স তার ১৮। কিছুদিন আগে মাইগ্রেনের সমস্যায় চিকিৎসা নিতে খুলনায় আসে। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ বিপ্লব কুমার দাসের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসক তাকে শেখপাড়া এলাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে দেখেন। পরে এমআরআই সহ কয়েকটি পরীক্ষা দেন। মঙ্গলবার (০৬ জুন) ছোট বোনকে নিয়ে পিরোজপুর স্বরূপকাটি থেকে খুলনায় রিপোর্ট দেখাতে আসেন ওই কলেজ ছাত্রী। বিকেলে রিপোর্ট দেখাতে গেলে চেম্বারের সকলকে বের করে দিয়ে কলেজ ছাত্রীকে একা থাকতে বলেন চিকিৎসক। পরে শরীরের পরীক্ষার অযুহাতে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় চিকিৎসক। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক তাকে পেশেন্ট বেডে শয্যাশায়ী (শুয়ায়ে) করে যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি করে চিকিৎসক বিপ্লব। কলেজ ছাত্রী চিকিৎসকের রুম থেকে চিৎকার করে জোরপূর্বক কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসে। এ সময় সেখানে উপস্থিত অন্য রোগী ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। তখন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য পরীক্ষা রিপোর্ট খারাপ এসেছে বলে ভয়ে রোগী কান্নাকাটি করছে বলে সবাইকে জানায়। লজ্জা ফেলে ক্ষিপ্ত হয়ে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে কলেজ ছাত্রী যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনাটি উপস্থিত সকলকে বলেন।

এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সোনাডাঙ্গা পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হয়। এ সময় কলেজ ছাত্রী ও তার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট বোন ঘটনাটি সকলকে জানান। এসময়ে কেউ বোঝার আগেই একজন সাংবাদিক ফেসবুক পেইজে লাইভ করে। সাথে সাথে ঘটনাটি নগরী ছাড়িয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফেসবুক পেইজে লাইভ করে চিকিৎসক ও কলেজ ছাত্রীকে ব্লাকমেইল করে ওই সাংবাদিক। অপরদিকে ৯৯৯ ফোন দিয়ে জানানো হয়েছে বলে থানায় মামলা নেয়া হবে এমন কথা জানায় পুলিশ। পরবর্তীতে গভীর রাত পর্যন্ত এক চিকিৎসক নেতার মধ্যস্থতায় সাংবাদিকের সাথে ডলারে এবং পুলিশের সাথে টাকায় সমঝোতা করা হয় বলে সূত্র জানায়।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর ছোট বোন বলেন, “আমার আপার মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে। এখানে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু আপুকে রুমের ভিতরে রেখে ডাক্তার সবাইকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। অনেকক্ষণ পরে আপু বাইরে এসে খুব কান্না করছিল। আপুকে কি হয়েছে জানতে চাইলে সে বলল- ডাক্তার তাকে জড়িয়ে ধরে ও বিচানায় শুইয়ে খারাপ কিছু করেছে। আপু খুব কান্না করছে।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এস.আই শান্তনু কুমার বলেন, প্রাথমিকভাবে কলেজ ছাত্রীর অভিযোগ শুনেছি। থানায় নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ডা: বিপ্লব দাসকে চেম্বারে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মোঃ সোহেল চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি শুনতে পেয়ে আমি নিচে এসে দেখি একটি মেয়ে কান্নাকাটি করছে। অন্য রোগীদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় মেয়েটি চেম্বার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার বিপ্লব কুমার দাসকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন মেয়েটির মাথাব্যথা আছে এবং শ্বাসকষ্ট আছে এরআগেও মেয়েটি আমার কাছে এসেছে। পরবর্তীতে পুলিশ এবং সাংবাদিকরা আসে। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ মেয়েটিকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। এ সম্বন্ধে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। যদি যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এর বিচার হওয়া উচিত বলে তিনি জানান। সেজন্য যত ধরনের সহায়তা প্রয়োজন সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. বিপ্লব কুমার দাস বলেন, বলার কিছু নেই সম্পূর্ণ বিষয়টি সাজানো। কারণ এত দ্রুত কিভাবে একটি মেয়ে কান্নকাটি করার সাথে সাথেই পুলিশ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত হলো। মেয়েটি এরআগেও আমার কাছে এসেছে চিকিৎসা নিতে। রোগীর মাথা ব্যথার সমস্যা রয়েছে। আমি তাকে এ বিষয়গুলো নিয়ে জিজ্ঞাসা করছিলাম। আর আমার চেম্বারের দরজা খোলাই ছিল। অন্য রোগীরাও উপস্থিত ছিল। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব কিছু সাজানো হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। তবে কেন তিনি ঘটনাস্থলের চেম্বার থেকে পালিয়ে গেলেন সে বিষয়ে কোন উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে জানতে সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মমতাজুল ইসলামের অফিসিয়াল মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বুধবার রাতে প্রতিবেদকরে সাথে নগরীর শামীম স্কয়ার মার্কেটের আওয়ামী লীগ অফিসে কথা হয়। এসময়ে তিনি জানান, ভুক্তভোগী কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিব।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার মো: তাজুল ইসলাম জানান, নগরীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একজন চিকিৎসা কর্তৃক নারী রোগীর যৌন হয়রানির বিষয়ে শুনেছি। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাকে পুলিশে হেফাজতে আনে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়নি। ভুক্তভোগীকে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে কেন মামলা করা হলো না সে বিষয়ে তিনি কোন উত্তর দেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu