রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
খুলনা ডিএনসির অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার খুলনার সবজির বাজারে দামে স্বস্তি;কমেছে গোশ ও মাছের দাম  নির্বাচনের ট্রেন চলছে, কেউ থামাতে পারবে না : ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা আমাকে এমপি না, জনতার সেবা করতে পাঠিয়েছেন : এস এম কামাল হোসেন ডলারের দাম আরও কমলো খুলনায় কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিকী প্রদর্শন খুলনা—১ আসন: জনগণের জন্য কাজ করতে চান সাবেক এমপি ননী গোপাল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অব:) এর খুলনা সফরসূচি বিএনপি নেতার ভাইয়ের ইন্তেকালে শোক মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নোবেল

চিকিৎসক কর্তৃক কলেজ ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের লেনদেন : অবশেষে মামলা

দেশ প্রতিবেদক:
  • প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩
  • ৬৭৯ পড়েছেন

♠দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের।

খুলনা নগরীতে পিরোজপুরের এক কলেজ ছাত্রীকে যৌন হয়রানী ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় অবশেষে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকায় ‘নগরীতে ডাক্তারের চেম্বারে কলেজ ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এতে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের। ঘটনার দুইদিন পর বৃহস্পতিবার কলেজ ছাত্রীর মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় এ মামলা (নং-০২/২৩, তারিখ ০৮-০৬-২০২৩) দায়ের করেন। এর আগে পুলিশ বৃহষ্পতিবার রাতে ওই কলেজ ছাত্রীকে তার বাড়ী থেকে নিয়ে এসে সোনাডাঙ্গা থানা সংলগ্ন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে। শনিবার ভুক্তভোগীকে আদালতে পাঠিয়ে তার জবানবন্দী গ্রহন করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শান্তুনু কুমার।

এদিকে, একাধিক সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তা এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার নামে ব্লাকমেলিং করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নগরীর রয়েল মোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারী হাসপাতালে একজন চিকিৎসক নেতার চেম্বারে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়ার রফাদফা হয়। এই দফারফায় চিকিৎসক নেতা, স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক, ঘটনাটি ফেসবুক পেইজে লাইভ প্রচার করা সাংবাদিক, একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক, স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকার সাংবাদিক ও খুলনা মেডিকেল প্রতিনিধি এবং একজন নারী কর্মকর্তাসহ পুলিশের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ঠ ছিলেন বলে সুত্র জানিয়েছে। যেখানে খুলনার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অভিযুক্ত চিকিৎসকের শ্বশুর উপস্থিত ছিলেন। চিকিৎসক নেতার চেম্বারে বসে ফেসবুকে পেইজে প্রচারিত লাইভ অপসারণ, স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ বন্ধ ও পুলিশকে ম্যানেজ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ও লেনদেনের সমঝোতায় হয়। এক্ষেত্রে কাউকে ৮শ ডলার বা তার সমপরিমান অর্থ প্রদান এবং অন্য সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কয়েক লক্ষ টাকায় ম্যানেজ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। পরে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শ্বশুরসহ মধ্যস্থতাকারীরা সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে চূড়ান্ত রফাদফা করে ওই কলেজ ছাত্রীকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী সমঝোতার বিষয়টি অস্বীকার করে মামলার জন্য তার মায়ের কাছ থেকে সাদা কাগজে পুলিশ স্বাক্ষর নিয়েছে বলে জানায়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জুন সন্ধ্যায় নগরীর শেখপাড়া এলাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পিরোজপুরের কলেজ ছাত্রী খুলনা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিপ্লব কুমার দাসের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিতে এসে। এসময় অভিযুক্ত চিকিৎসক ছাত্রীকে পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি করে। এ সময় জোরপূর্বক চিকিৎসকের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে ওই ছাত্রী চেম্বার থেকে বেরিয়ে অঝরেই কাঁদতে থাকেন। এতে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। ঘটনার পরপরই চিকিৎসক বিপ্লব কুমার চেম্বার থেকে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ ঘটনাটি ফেসবুক পেইজে লাইভ প্রচার করে এক সাংবাদিক। এ সময়ে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীকে তাদের হেফাজতে নেয়। ঘটনাটি নিয়ে নগরী জুড়ে তোলপাড় শুরু হলে অভিযুক্ত চিকিৎসক, সাংবাদিক ও পুলিশের ত্রিমুখী সমঝোতার মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়। এক্ষেত্রে নগরীর রয়েল মোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসক নেতার চেম্বারে লাইভ প্রচারকারীকে ৮শ ডলার বা তার সমপরিমান অর্থ প্রদান এবং অন্য সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কয়েক লক্ষ টাকা লেনদেনে সমঝোতা হয়। টাকা পেয়ে ঘটনাটি লাইভে প্রচার করা সাংবাদিক তার পেইজ থেকে ভিডিওটি অপসারণ করে। সেই সাথে জড়িত অন্য সাংবাদিকরা তাদের গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রচার করা থেকে বিরত থাকে। পরে থানায় অবস্থানরত ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর মায়ের কাছ থেকে অভিযোগের নাম করে কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে তাদেরকে বাড়ী পাঠিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী বৃহষ্পতিবার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, পপুলার ডায়াগনস্টিক থেকে পুলিশ সোনাডাঙ্গা থানা নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে আমাদেরকে বসিয়ে রাখে। পরে আমার মা নাজমা বেগমকে খবর দিয়ে আনা হয়। রাতে কয়েকজন সাংবাদিক আমাদের সাথে কথা বলতে চাইলেও পুলিশ কথা বলতে দেয়নি। রাতে আমার সাথে এসপি ম্যাডাম (সোনালী সেন) কথা বলেন। এছাড়া আমার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে থানা পুলিশ কাগজে অভিযোগ লেখে। এ সময় ওসিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয়। কিন্তু পরের দিন বুধবার সকালে আমার মায়ের কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আমাদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তখন ওই ডাক্তার বিপ্লব দাসের আত্মীয় পরিচয়ে লোকেরা ও পুলিশ আমাদের কাছে টাকা পয়সা না থাকায় এসপি ম্যাডামের নাম বলে আমাদেরকে ৫’হাজার টাকা দেয়। একই সাথে আমাদের প্রাইভেট কারে করে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থার কথা জানায়। কিন্তু আমরা প্রাইভেট কারে যেতে রাজি না হয়ে পাবলিক গাড়ীতে করে বাড়ীতে ফিরে আসি। বাড়িতে এসে জানতে পারি পুলিশ মামলার জন্য আমার মায়ের কাছ থেকে কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছিলো কিন্তু কোন মামলা রেকর্ড করেনি। এটি হয়ে থাকলে পুলিশ কর্মকর্তারা আমার সাথে খুবই অন্যায় করেছে। সে আরো জানায়, আমি ডাক্তার বিপ্লব দাসের অনৈতিক আচরণ ও যৌন হয়রানিমূলক কর্মকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা যেন অন্যকোন মেয়ের সাথে না ঘটে। একইসাথে যে সাংবাদিক এ ঘটনাটি ফেসবুক পেইজে লাইভ প্রচার করে আমার সম্মানহানী ঘটিয়েছে এবং পরে টাকা নিয়ে আবার ভিডিওটি অপসারণ করেছে আমি তাদেরও বিচার চাই।

ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর মা নাজমা বেগম মুঠোফোনে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সাদা পোশাকে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের এস আই শান্তুনু ও একজন ইউনিফ্রম পরিহিতা মহিলা পুলিশসহ ৫ জন পুলিশ আমাদের বাড়ীতে উপস্থিত হয়। পরে তাদের অনুরোধে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে তারা আমার মেয়েকে খুলনায় নিয়ে যায়। রাতে আমার মেয়ের সাথে ডাক্তারের অনৈতিক আচরণের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে বলে জেনেছি।

ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সমঝোতার নামে ব্লাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত চিকিৎসক বিপ্লব কুমার দাসের মুঠোফোন নম্বরে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি তার চেম্বারে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সমঝোতার বৈঠকে উপস্থিত অভিযুক্ত চিকিৎসকের শ্বশুর সাবেক শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান, এ বিষয়টি নিয়ে তিনি খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। পত্র পত্রিকায় কোন সংবাদ প্রকাশ না করতেও তিনি এ প্রতিবেদকে অনুরোধ করেন।

কেএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) সোনালী সেন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর সাথে আমার কোন কথাই হয়নি। কাজেই তাকে টাকা দেয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। এটি সম্পূর্ণ অসত্য ও ভিত্তিহীন কথা। এ ধরনের কোন কাজের সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও জানান তিনি।

খুলনার নাগরিক আন্দোলনের নেতা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর খুলনা সভাপতি এ্যাড. কুদরত এ খুদা বলেন, চিকিৎসকের মতো একটি মহান পেশার লোক একটি কলেজ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তার চেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো ভুক্তভোগী মেয়েটির অভিযোগ না আমলে না নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে সাংবাদিক নেতা, চিকিৎসক ও পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা জড়িত। একটা মেয়ে যখন অভিযোগ করে তখন তার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল না হওয়া, কোন মেডিকেল না করে বা উভয় পক্ষকে মুখোমুখি না করে ছেড়ে দেয়া আইনের প্রয়োগের যথেষ্ট ব্যাত্যয় ঘটেছে। বিষয়টি এখানে একেবারেই স্পষ্ট যে, ঘটনাটি ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভ প্রচার করার পর আবারও সেটি পেইজ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এখানে অনৈতিক লেনদেন হয়েছে এ ঘটনায় তাই প্রমাণিত হয়। এমনকি ঘটনায় কোন মামলা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের আইনগত অধিকারকে খর্ব করেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উভয় পক্ষের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে তবেই কোন ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। যা পুলিশের আইনগত ও মানবিক কাজ হতো। কোনরূপ তদন্ত না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মবহির্ভূত কাজ বলে তিনি মনে করেন। তিনি এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান।

সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো: মমতাজুল ইসলাম শুক্রবারে এ  প্রতিবেদকে জানান, গত ৬ জুন ঘটনাটি জানার পর ভিকটিম কলেজ ছাত্রীকে পুলিশের হেফাজতে আনা হয়। পরবর্তীতে ৭ জুন ভিকটিমের মা নাজমা বেগমকে খবর দিলে তিনি খুলনায় আসেন। ঐদিন ভিকটিম কলেজ ছাত্রী কোন অভিযোগ না করায় মামলা হয়নি। পরবর্তীতে গত বৃস্পতিবার (৮ জুন)  রাতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। কলেজ ছাত্রী বর্তমানে সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছে। শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দী গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu