খুলনার দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় পত্রিকার সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে নগরীর বেনীবাবু রোড ফুল মার্কেট এলাকায় অবস্থিত দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা অফিসে এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। গত কয়েক মাস ধরে মহানগরীতে জুয়া, মাদক ও হোটেলুগলোতে দেহ ব্যবসা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে জুয়াড়ী ও মাদক কারবারীরা এবং এদের সুবিধাভোগী কিছু কথিত সাংবাদিকের পরিকল্পনায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পত্রিকা কতৃর্পক্ষ। হামলার খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তা, প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার প্রতিদিনের মত নগরীর ফুল মার্কেটে অবস্থিত দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার কাজ চলছিল। দুপুরের নামাজের সময় চারটি মটর সাইকেলে এসে ৬-৭ জন সন্ত্রাসী চাপাতি, রামদাসহ দেীশয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পত্রিকা অফিসে ঢুকে পড়ে। এ সময় পত্রিকার সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ নামাজ পড়ছিলেন। সন্ত্রাসীরা পত্রিকা অফিসে এসে গালিগালাজ ও হুমকি-ধামকি দিয়ে কুপিয়ে সম্পাদকের ঘরের জানালা ভেঙ্গে ফেলে। তখন সন্ত্রাসীরা সম্পাদক মাহবুব আলম সোহাগকে হত্যারও চেষ্টা চালায়। এ সময় পত্রিকা অফিসের অন্যরা বাইরে আসার চেষ্টা করলে তাদেরকে চাপাতি নিয়ে ধাওয়া করে সন্ত্রাসীরা। পরে পত্রিকা অফিসের পাশে কাকন প্রিন্টিং প্রেসের দরজার গ্লাসও ভাংচুর করে হুমকি-ধামকি দিয়ে দ্রুত চলে যায়।
দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার ম্যানেজার মো: শামীমুর আলম মান্দার বলেন, পত্রিকা অফিসে তারা কাজ করছিলেন। দুপুর একটার দিকে কয়েক লোক চাপাতি ও লোহার রডসহ অস্ত্র হাতে নিয়ে অফিসের কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ সবকিছু কুপিয়ে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে তারা সম্পাদকের অফিসের জানালা কুপিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। এ সময় নানা রকম হুমকি-ধামকি দিয়ে সম্পাদককে হত্যার চেষ্টা চালায়। তখন অফিসের লোকজন বাইরে আসার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও অস্ত্র হাতে ধাওয়া করলে ভয়ে অফিসের ষ্টাফরা রুমের মধ্যে গিয়ে আত্নরক্ষা করে। তখন সন্ত্রাসীরা পাশের একটি প্রেসের গ্লাসও ভাংচুর করে চলে যায়।
দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার সম্পাদক ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং খুলনা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ বলেন, তার পত্রিকার অফিসের পাশেই জামায়াত শিবির ও বিএনপিপন্থী কথিত কিছু সাংবাদিক প্রেসক্লাব খুলনার নাম দিয়ে সেখানে দিনরাত জুয়া ও মাদকের আসর বসায়। দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়ীর মালিকের পৃষ্ঠপোষকতায় নগরীর শীর্ষ জুয়াড়ীর নেতৃত্বে এ জুয়া ও মাদকের আসর চলছে। এরসাথে সুবিধাভোগী স্থানীয় কথিত সাংবাদিক প্রেসক্লাব খুলনার এক কর্মকর্তা, সরকারের অনুমোদনবিহীন অবৈধ অনলাইন পোর্টালের কথিত সাংবাদিকসহ ৭-৮ জনের একটি গ্রুপ এবং কিছু অসাধু পুলিশের সহযোগীতায় এ জুয়া ও মাদকের আসর পরিচালিত হয়। এ বিষয়ে গত ১৩ এপ্রিল থেকে দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকায় ‘জুয়ার নগরী খুলনা’সহ ধারাবাহিক কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়। এতে পুলিশ জুয়া ও মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি আবারও এই চক্রের সহায়তায় বেশ কয়েক স্থানে জুয়া ও মদের আসার চালু করা হয়েছে। এ সংবাদের সূত্র ধরে জুয়াড়ী ও মাদক ব্যবসায়ীরা এবং সুবিধাভোগী কথিত সাংবাদিকরা দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা ও আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। বিভিন্ন সময় পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও হুমকি দিতে থাকে। এ ঘটনায় তিনি খুলনা সদর থানায় সাধারন ডায়েরি করেন। সে কারনে জুয়াড়ী, মাদক ব্যবসায়ী ও দেহ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তরা এবং কথিত সাংবাদিকরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্যই এ হামলা চালিয়েছে। হয়তো সামনে পেলেই মেরে ফেলতো। এ ঘটনায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানান।
খুলনা সদর থানার ওসি মো: হাসান আল মামুন জানান, দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আপাতত দৃষ্টিতে কোন বিষয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দূবৃর্ত্তরা এ হামলা চালিয়েছে। তাকে হুমকির ঘটনায় তিনি ইতিপূর্বে জিডিও করেছেন। সেটির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা চেষ্টা করছি যারা হুমকি দিয়েছে এবং পত্রিকা অফিসে যারা হামলা করেছে তাদেরকে সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই অপরাধের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এখানে প্রেসক্লাব খুলনার নামে কিছু লোক জুয়ার আসর বসায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকজনকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারপরও কিছূ লোক আবারও জুয়ার আসর চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনা হবে। হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতেই অভিযান চালিয়ে জড়িতদেরকে আটক ও আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা অফিসে হামলা ও ভাংচুর এবং সম্পাদককে হত্যার চেষ্টার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন খুলনা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ। প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক মামুন রেজা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সাংবাদিক বান্ধব সরকারের সময়ে জামায়াত-শিবির ও দেশ বিরোধী চক্র এবং জুয়াড়ী-মাদক ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে একটি পত্রিকার অফিসে হামলা খুবই দু:খজনক। দিন দুপুরে সন্ত্রাসীরা একটি পত্রিকা অফিসে হামলা করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। অচিরেই এদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেৃতৃবন্দ দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা অফিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্য দিবালোকে একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা অফিসে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নগ্ন হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বোগ প্রকাশ করে বলেন, পত্রিকা অফিসে এধরনের হামলা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপের সামিল। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অতি দ্রুত হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। অন্যথায় সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের নিরাপত্তার স্বার্থে খুলনার সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। যার দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে। বিবৃতিদাতারা হলেন ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ, সহ-সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম ও আলমগীর হান্নান, যুগ্ম সম্পাদক নেয়ামুল হোসেন কচি, কোষাধ্যক্ষ দিলীপ বর্মণ, দপ্তর সম্পাদক শেখ আব্দুল হামিদ, প্রচার ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস এম মনিরুজ্জামান, নির্বাহী সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম কাজল, মিলন হোসেন ও শেখ জাহিদুল ইসলাম। খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মল্লিক সুধাংশু ও সাধারন সম্পাদক তারিকুল ইসলাম এক বিবৃতিতে দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকা অফিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ হামরার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবীও জানান তারা।