গত ২৬ শে জুন খুলনার রেলষ্টেশন এলাকা থেকে বনমালী নামে একজন ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার হয়। বনমালী নিখোজ হওয়ার পর থেকে নানান ধরনের হয়রানির শিকার হয় পরিবারের লোকজন। পুলিশকে জানালেও সঠিক সময়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। অবশেষে ৩রা জুলাই নিহতের বড় ভাই কেশব মণ্ডল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
দায়েরকৃত মামলায় আসামীরা হলেন, ১। অমিত ঘোষ (৫০), মালিক ঘোষ ট্রেডার্স, পিতা-অজ্ঞাত, ২। মিঠু ঘোষ (৪০) পিতা-অজ্ঞাত, ৩। মিতা (৩৫), স্বামী-অমিত ঘোষ, ৪। সঞ্জিব ঘোষ (৪৫),পিতা-অজ্ঞাত ৫। মোঃ মিন্টু (৩৫) পিতাঃ অজ্ঞাত সর্ব সাং- ঘোষ ট্রেডার্স কদমতলা ষ্টেশন রোড, খুলনা সদর খুলনা, ৬। সাধন ঘোষ (৫৫), পিতা- অজ্ঞাত, প্রোপাইটর কপোতাক্ষ ভান্ডার কদমতলা ষ্টেশন রোড, বড় বাজার খুলনাসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন।
এজাহার সূত্রে, নিহতের নাম বনমালি মন্ডল(৩৫), পিতা- মৃত: যতিন মণ্ডল সাং-০৬ নং কয়রা, থানা-কয়রা, জেলা- খুলনা। তিনি ঘোষ ট্রেডার্স’র মালিক অমিত ঘোষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতনে দীর্ঘদিন প্রায় ১১ বছর চাকুরী করতেন। এরপর অমিত ঘোষের প্রতিষ্ঠান হতে কাজ ছেড়ে দিয়ে নিজেই কদম তলা স্টেশন রোড এলাকায় পদ্মা ভান্ডার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা- বানিজ্য করতে থাকেন। বনমালী গত ইংরেজী ২৫/০৬/২০ তারিখে বিকাল অনুমান ৩.০০ থেকে ৩.৩০ ঘটিকার সময় প্রতিদিনের মতো তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে না পৌছাইলে তার ম্যানেজারসহ বনমালীর স্ত্রী বার বার ফোনে কল দিতে থাকেন। কিন্তু রিং হলেও বনমালী ফোন ধরেন নাই। হঠাৎ করে সন্ধ্যা অনুমান ৭টা ১১ মিনিটে বনমালীর মোবাইল নাম্বার থেকে তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হেমন্ত বাবুর মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ আসে। ম্যানেজার হেমন্ত বাবু উক্ত মেসেজটি পড়ে বনমালীর স্ত্রীকে ম্যাসেজের ব্যাপারে জানান। ম্যাসেজটি হলো- HEMENTO BIKALA 4.30 POR KARA JANO AMAKA CHOK BADHA ATKA RAKASA. ANDOKAR GORER MODDA. AMAR PHONE SILINT CILO TAI NITA PRANI. ORA BOLSA KHULNA SARBI NAHOLE MARA FALA HOBA. AMI KUB KOSTO KORE PHONTA BER KORE TOMAKE JANILAM. KOTHA BOLLA DORA PORA JABO, PASA LOK BOSA. TOMEDER SATHA HOITO R DHAKA HOBA NA. DULA BAIKA BOLO AMI BIPODA ASI. তখন বনমালীর স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে ঘোষ ট্রেডার্স এর মালিক অমিত ঘোষের স্ত্রীকে ফোন করে বলে আমার স্বামীকে এবারের মত ছেড়ে দিন। আমি আমার বাচ্চা, স্বামী সহ আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুছিয়ে খুলনা হতে চলে যাবো। তখন অমিত ঘোষের স্ত্রী মিতা ঘোষ বলেন, তোমার স্বামীর শাস্তি পাওয়ার দরকার আছে। এ বলে মোবাইল ফোনটি কেটে দেন। এরপর সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশকে জানালে তারা অবহেলা করে এবং অপেক্ষা করতে বলেন।
কেশব মন্ডল বলেন, বনমালী পদ্মা ভান্ডার নামে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার ফলে ঘোষ ট্রেডার্সের মালিকসহ অনান্যদের সাথে ব্যবসায়িক মনোমালিন্য হতে থাকে। এরই সূত্রে, তারা আমার ভাইকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হয়রানী করার চেষ্টা করছিলো। বিষয়টি নিয়ে সুরাহা হওয়ার আগেই এই ঘটনা ঘটে। তিনি আরো বলেন, বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজসে আমার ভাইকে হত্যার করার উদ্দেশ্যে অপহরন করেন। তাকে রেলওয়ে ষ্টেশনের পশ্চিম মাথায় ফাঁকা ইয়ার্ডে নিয়া পরিকল্পিতভাবে পূর্ব শত্রুতার কারনে খুন করে ফেলে রাখে। রেলওয়ে থানার পুলিশ আমার ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে পোষ্ট মডাম শেষে আমাদের নিকট হস্তান্তর করে। তার দেহের সৎক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনের সহিত আলাপ আলোচনা করে মামলা দায়ের করেছি।
অমিত ঘোষের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে, অমিত ঘোষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাকে পাওয়া যায়নি।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক জানান, সোমবার রাত ১২টার দিকে নিখোঁজ ব্যাবসায়ীর দোকানের ম্যানেজার থানায় এসেছিলেন। সঙ্গে ঐ ব্যবসায়ীর কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিল না। বিষয়টি ভালোভাবে না বলতে পারায় ও সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় না হওয়ায় তাকে আমরা অপেক্ষা করতে বলি। তবে, তাদের অভিযোগটি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এটি সঠিক নয়।