বাগেরহাটের শরণখোরার ঘরে ঘরে জ্বরসহ ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। রবিবার (৯জুলাই) সকালে ডেঙ্গু আত্রান্ত হয়ে কৌশিক নন্দী (৪বছর ৭মাস) এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশু উপজেলার ধানসাগর গ্রামের বাসিন্দা ও রাজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমীর কুমার নন্দীর একমাত্র সন্তান। এছাড়া চলতি মাসে শরণখোলা হাসপাতালের পরীক্ষায় আরো ৫ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে।
নিহত শিশুর বাবা সমীর কুমার নন্দী জানান, গত শুক্রবার (৭জুলাই) রাতে তার ছেলের প্রচন্ড জ্বর ওঠে। সকালে প্রথমে উপজেলা সদরের হাসপাতাল গেটের মনোয়ারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা করানো হলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার সন্তানের মৃত্যু হয়।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে এক শ’র মতো জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গত ১জুলাই থেকে ৯জুলাই দুপুর ২টা পর্যন্ত ৫জন ডেঙ্গু রোগীসহ ৭২জন জ্বরের রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।
উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মল্লিক আরাফাত ও সোনাতলা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মো. রাসেল শরীফ জানান, তাদের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন জ্বরের রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এমনি করে চার ইউনিয়নের চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ১৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন একইভাবে জ্বরের রোগী আসছে।
উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজার ও হাসপাতালসংলগ্ন এলাকার মনোয়ারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রায়েন্দা নার্সিং হোম ক্লিনিক, রায়েন্দা ক্লিনিক ও সুন্দরবন ক্লিনিকেও প্রতিদিন অন্যান্য রোগীর সঙ্গে ১০ থেকে ১৫জন করে জ্বরের রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে এসব ক্লিনিকের পরিচালকরা জানিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. তাওহীদুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া শিশু কৌশিক নন্দী একদিনের জ্বর নিয়ে তার কাছে আসে। পরীক্ষা—নিরীক্ষা করে চিকিৎসা দেওয়ার পর শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার রক্তের প্লাটিলেট ছিল ৯৮ হাজার। তাতে মারা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু হঠাৎ এমন হবে তা বোঝা যায়নি।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সারা দেশের মতো আমরাও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজন্ক অবস্থায় আছি। ঈদের ছুটিতে ঢাকা ও অন্যান্য এলাকা থেকে লোকজন বাড়িতে আসায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগে মৌসুমি জ্বর ও ফ্লু আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনি অন্তত এক শ’ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও প্রচুর জ্বরের রোগী আসছে।
ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস আরো বলেন, শরণখোলা হাসপাতালে ডেঙ্গু আইসোলেশন সেন্টার রয়েছে। খুম কম খরচে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।