খুলনা নগরীতে পলাশ হাওলাদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসিরা। হত্যার এ ঘটনা খুলনা তালতলা হাসপাতাল এলাকায় ২০২২ সালের অক্টোবরে ঘটে। প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা ও পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার প্রতিবাদে এবং পিবিআই কর্তৃক সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক মূল আসামীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহত যুবকের মা ও স্ত্রী। রবিবার বেলা ১২ টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে নিহত পলাশের মায়ের পক্ষে পলাশের স্ত্রী কুলসুম বেগম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
বক্তব্যে বলেন, আমার ছেলে মো. পলাশ হাওলাদারকে (২০) গত ০৬/১০/২২ তারিখে সন্ত্রাসী মো. নুর আজিম, পিতা: শাহজাহান ও শানু মহুরী, আমার ছেলেকে প্রকাশ্য দিবালোকে তার বাহিনী নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডের ঘটনা নগরীর সকলেই অবগত। কিন্তু পুলিশ আমার ছেলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামী নূর আজিম তার বাহিনী নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বলছে নূর আজিম ভারতে আত্ম গোপনে রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দিন গত ০৬/১০/২০-২২ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে আমার ছেলে মোঃ পলাশ হাওলাদার লবনচোরা আশরাফুল সড়কের বাসা থেকে খুলনার নতুন বাজারে মাছ ক্রয়ের জন্য বের হয়। আমার ছেলে নতুন বাজার থেকে বাসায় ফেরার সময় তার বন্ধু সৌরভ (২২), পিতা-মোজাম্মেল গাজী, সাং- টুটপাড়া, বাইতুল আমান মহল্লা, থানা ও জেলা-খুলনার সাথে দেখা হয়। তারা দুইজনে বেলা অনুমান ১২.৩০টার সময় খুলনা থানাধীন হোল্ডিং নং-৩৫, দক্ষিণ টুটপাড়া, তালতলা হাসপাতাল রোড, বায়তুল মামুর মহল্লা, রানীর চায়ের দোকানের সামনে পাকা রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে চা পান করার সময় মোটরসাইকেল যোগে সন্ত্রাসী নুর আজিম বাহিনী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার ছেলে ও তার বন্ধু সৌরভকে ঘিরে ধরে এবং সন্ত্রাসী নূর আলিম তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে আমার ছেলের বন্ধু সৌরভকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথা লক্ষ্য করে কোপ দেয়। এ সময় আমার ছেলের বন্ধু তার বাম হাত দিয়ে ঠেকালে, উক্ত কোপ আমার ছেলের বন্ধুর বাম হাতের বাহুতে লেগে লুটিয়ে পড়লে আমার ছেলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে সন্ত্রাসী নুর আজিম বাহিনী আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে ধাওয়া করে। ধাওয়া করে টুটপাড়া তালতলা এলাকার বায়তুল মামুর এলাকার মুজিবর রহমানের বাড়ীর ফাঁকা জায়গায় পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা ঘেরাও করে এলোপাতাড়ি কোপ দেয়। আমার ছেলের মাথার তালুতে কোপ লাগলে লুটিয়ে পড়লে তারা এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজন চলে আসলে নুর আজিম বাহিনী পালিয়ে যায়। লোকজন আমার ছেলে ও তার বন্ধুকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলেকে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও পুলিশ মূল আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। র্যাবের হাতে অনেকে গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার দায়েরকৃত মামলায় আসামীরা হলো, (১) নুর আজিম (৩২), পিতা-শানু মহুরী, সাং-৮/১, দক্ষিণ সার্কুলার রোড, থানা ও জেলা- খুলনা। (২) বিসমিল্লাহ্ ৩৫), পিতাঃ মৃত আতিয়ার রহমান, মাতা-রাজিয়া বেগম, সাং-দক্ষিণ টুটপাড়া, জেলা: খুলনা, (৩) নয়ন শেখ (২৩), পিতা-নুলাই শেখ, সাং-টুটপাড়া, দারোগার বৃদ্ধি, থানা ও জেলা-খুলনা, ৪। নেওয়াজ ২৬), পিতা- সাঈদ মিয়া, জোড়াকল বাজার সার্কুলার রোড, থানা ও জেলা-ফুলনা, ৫। রকি (২৬), পিতা- শাহজাহান, ৮/১, দক্ষিণ পাড়াসহ আরো ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০ জন। মামলার এজাহার দাখিলের ৯ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। নিহতের মা ও স্ত্রী পিবিআই কর্তৃক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবী করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ছেলেকে বিভিন্ন সময়ে নুর আজিমের সাথে চলার জন্য কলতো। এক পর্যায়ে তাদের অত্যাচারে খুলনা ছেড়ে জাহাজে ক্লার্কের কাজ করতো আমার ছেলে। কিন্তু নূর আজিমের সাথে না চলার কারনে এ হত্যার শিকার হয় আমার ছেলে। আমার ছেলের মৃত্যুর সময়ে আমার নাতনীর ব্যাস ১ মাস ২০ দিন ছিলো। কিন্তু এই নুর আজিমকে গ্রেফতারে প্রশাসন নিরব। আমি পিবিআই কর্তৃক সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নুর আজিমসহ তার ক্যাডার বাহিনীর গ্রেফতারের জোড় দাবি জানাচ্ছি।
আমি আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনার সদর থানার এসআই উজ্জল সরকার বলেন, মূল আসামী আত্ম গোপনে রয়েছে। ৯ জন আসামী আত্ম সমার্পন করেছেন এবং ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।