• E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

×

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি- বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩
  • ১১৫ পড়েছেন

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ১৫ই আগস্ট (মঙ্গলবার) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিকাল ৪.৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ও মুখ্য আলোচক হিসেবে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী পট পরিবর্তন, তৎকালীন সময়ে কার কি ভূমিকাসহ বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিছক কোনো সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের প্রয়াস ছিল না। এটি ছিল বাঙালি রাষ্ট্রসত্তার মূলে কুঠার আঘাত ও এই জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠাতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার এক ঘৃণ্য প্রয়াস, যে পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র হয়তোবা লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটনাপূর্ববতী দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছিল। সময় এসেছে এটি সবার জানার যে, কি ষড়যন্ত্র ছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মমতার পেছনে। দায় শোধের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে সব সত্য সামনে আসা প্রয়োজন। এটি জাতির প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় যারা দণ্ডিত; তাদের বাইরে যারা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো, তাদের উদ্দেশ্য কি ছিলো- এসব বিষয়ে জানার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা জরুরি। না হলে দেশের মানুষ আর কখনও এই নির্মমতার মূলোৎপাটন করতে পারবে না। তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটনে তদন্ত কমিশন গঠনের জোরালো দাবি জানান।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু অমর ও অক্ষয়। তিনি আছেন আমাদের চিন্তায়, চেতনায়, মননে ও মানসে। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। তাঁকে হত্যা করলেই মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যাবে না।
বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুস। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিপ্লবী নেতৃত্ব, বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত উক্তি ও সংবাদ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রচন্ড ব্যক্তিত্বশালী ও নিরংহকারী মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় শোষিত মানুষের পক্ষে লড়াই করেছেন। তিনি অন্যায়-অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করতে চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, শুধু মুখে নয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের অন্তরে ধারণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করলে দেশে দুর্নীতি থাকবে না, বঞ্চনা থাকবে না, সুশাসন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে। তাই আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধুই হত্যাকাণ্ড নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে জাতিসত্তা, রাষ্ট্র ও চেতনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর সাথে উচ্চাভিলাষী অনেকেই জড়িত। হত্যাকাণ্ডে কার কি ভূমিকা তা নিয়ে অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন তাঁর নামের মতোই বিশাল। তাঁর স্বপ্ন-চেতনা ছিল বাংলার মানুষকে ঘিরে। তিনি বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তিনি একদিনে তৈরি হননি। তাঁর আদর্শ ধারণ করে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দক্ষ-দেশপ্রেমিক জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইলেক্ট্রনিক এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের প্রফেসর সেহরীশ খান।
সভার শুরুতে অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্ট, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং খুলনার জুডিশিয়াল সেক্টরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবসের কর্মসূচির শুরুতে সকাল ৯টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯.০৫ মিনিটে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের প্রাক্কালে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোকর‌্যালি শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে হাদী চত্ত্বর ঘুরে কালজয়ী মুজিব চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এসময় ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপরপরই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, বিভিন্ন স্কুল (অনুষদ), বিভিন্ন ডিসিপ্লিন (বিভাগ), বিভিন্ন হল, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ ও বিভিন্ন সংগঠন এবং কর্মচারীবৃন্দের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল ৯.৩০ মিনিটে চারুকলা স্কুলের শিল্পী শশিভূষণ পাল আর্ট গ্যালারিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফিতা কেটে চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। উদ্বোধনের পরে তিনি চিত্র প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শিল্পকর্মগুলো ঘুরে দেখেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, চারুকলা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. নিহার রঞ্জন সিংহ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, চারুকলা স্কুলভুক্ত ডিসিপ্লিনসমূহের প্রধানবৃন্দসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ওপর দিনব্যাপী ডকুমেন্টরি প্রদর্শন, বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় মন্দিরে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA