কেএমপির অভিযানে ভেজাল শিশু খাদ্য জব্দ, চোরাই মোটরসাইকেল ও মাদক উদ্ধার হয়েছে। বৃহষ্পতিবার দুপুরে খুলনা সদর থানা প্রাঙ্গনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক। চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার অভিযান: খুলনা মহানগরীতে বিভিন্ন সময় চুরি হওয়া ছয়টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় মোটরসাইকেল চোর চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ৫ আগষ্ট নগরীর জাহিদুর রহমান সড়ক থেকে একটি এ্যাপাচি আর টি আর ১৬০ সিসির মোটরসাইকেল চুরি হয়। এই ঘটনায় গত ০৯ খুলনা থানায় একটি চুরি মামলা রুজু হয়। এই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা আল ফারুকী এলাকার বাসিন্দা মোঃ সবুজ শেখকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে আল ফারুকী এলাকার অপর এক বাসিন্দা সুমন মিস্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গোপালগঞ্জ এর মোকসেদ পুর এলাকার লিঠন শেখ এর বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া এ্যাপাচি আর টি আর ১৬০ সিসির মোটরসাইকেলসহ আরও পাঁচটি মটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। যা বিভিন্ন সময় খুলনা মহানগরী থেকে চুরি করে মটরসাইকেল চোর চক্র। এ সময় লিটন শেখকেও গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলগুলো হলো লাল রং এর পালসার ১৫০ সিসি, লাল ও কালো রং এর পালসার ১৫০ সিসি, নীল রং এর এ্যাপাচি আর টি আর ১৬০ সিসি, কালো রং এর এ্যাপাচি আর টি আর ১৫০ সিসি ও একটি লাল কালো রং এর ডিসকভার ১০০ সিসির মটরসাইকেল। গ্রেফতারকৃত সুমন মিস্ত্রী(৩৬) পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার গাউখালী গ্রামের কৃষ্ণ মিস্ত্রীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে একটি চুরি মামলা রয়েছে। অপর আসামী সবুজ শেখ (৩৩) পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর এলাকার চালিতাবাড়ি এলাকার আব্দুল হাই শেখ এর পুত্র। তার বিরুদ্ধে পূর্বের কোন মামলা আছে কিনা সে তথ্য দেয়নি পুলিশ। অপর আর এক আসামী লিটন শেখ (৪০) বাগেরহাট সদর এর নয় নং ওয়ার্ড এর শামছু শেখ এর পুত্র। তার বিরুদ্ধে পূর্বে পাঁচটি চুরি ও দুটি মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। ভেজাল খাদ্য জব্দ অভিযান: কেএমপির একটি টিম খালিশপুর থানাধীন বাস্তুহারা এলাকায় একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল ও ভেজাল খাদ্য সামগ্রী জব্দ এবং মাদক উদ্ধার হয়। বৃহস্পতিবার মেসার্স শারমিন ফুড প্রোডাক্টস ১২নং গলি বাস্তুহারা মেইন রোড, খালিশপুর এর দুইতলা বিশিষ্ট বাড়ির নিচতলার কারখানায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অননুমোদিত শিশু খাদ্য, মশলা এবং রন্ধন সামগ্রী জব্দ করে। জব্দকৃত ভেজাল সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ১) শাহী ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার, ২) শাহী স্বাদ—এ ম্যাজিক মশলা, ৩) শাহী বেকিং পাইডার, ৪) শাহী বেকিং সোডা, ৫) শাহী ইষ্ট, ৬) শাহী অরেঞ্জ পিৎজ্জা, ৭) শাহী জিঞ্জার পাউডার, ৮) শারমিনের শাহী ললি পপ চকলেট, ৯) বিভিন্ন মুদ্রার নকশাযুক্ত ক্যান্ডি চকলেট, ১০) শাহী হোয়াইট ভিনেগার, ১১) শাহী সয়া সস, ১২) শাহী হট টমেটো সস, ১৩) শাহী ললি পপ চকলেট, ১৪) শাহী ঘি ফ্লেভার এসেঞ্জ এবং ১৫) শাহী মসলা (চটপটি মসলা, বিরিয়ানি মসলা, চাট মসলা, মাংসের মসলা, বার বি কিউ মসলা, কালা ভুনা মসলা এবং খিচুরি মসলা) ইত্যাদি। তথ্য সূত্রে, প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী: শারমিন বেগম (২৭) এবং তার স্বামী—মো: শাহিন হোসেন (৩৬) দীর্ঘদিন যাবৎ লাইসেন্স ব্যতীত বিএসটিআই এর মানচিহ্ন ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে আসছিলেন। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত প্রতিষ্ঠানকে অননুমোদিত বিএসটিআই মানচিহ্ন ব্যবহারের জন্য বিএসটিআই আইন—২০১৮, ধারা—১৫/১৭ অনুযায়ী ১,০০০০০/— (এক লক্ষ) টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ (পনের) দিনের কারাদন্ড প্রদান করেন। এরপর উক্ত কারখানা সীলগালা করে দেওয়া হয়। মাদক বিরোধি অভিযানে: কেএমপি’র মাদক বিরোধী অভিযানে ০২ কেজি ১০০ গ্রাম গাঁজা এবং ১০৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ০৪ (চার) জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে কেএমপি পুলিশ। আটককৃত আসামীরা হলেন, ১) রুপিয়া(৩১), স্বামী—মুনিরুল ইসলাম, সাং—ভবানিপুর মাঝের পাড়া, থানা—সাতক্ষীরা সদর, জেলা—সাতক্ষীরা; ২) গোলাম সরোয়ার(২৮), পিতা—মৃত: ইছাহাক আলী শেখ, সাং—কাস্টম মোড়, থানা—খালিশপুর; ৩) মোঃ নাঈম শেখ(২৫), পিতা—মৃত: খলিলুর রহমান, সাং—গিলাতলা মধ্যপাড়া, থানা—খানজাহান আলী, এবং ৪) মোঃ মাসুদ রানা(৪২), পিতা—মৃত: শাহাদাৎ মিয়া, সাং—মশিয়ালী পূর্বপাড়া, থানা—খানজাহান আলী, খুলনা। তাদেরকে মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে। উপরোক্ত মাদক কারবারিদের নিকট হতে ০২ কেজি ১০০ গ্রাম গাঁজা এবং ১০৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। এ সংক্রান্তে গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় ০৪ টি মাদক মামলা রুজু করা হয়েছে।