খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার হড্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারটি পদে নিয়োগ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি পরস্পরযোগে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসকল পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও দূর্নিতী গোপন করতে রাতারাতি নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের। এ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীরা এ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত এবং স্বচ্ছ একটি কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন করার দাবী জানান। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জনবল কাঠামোর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন, কমিটির সভাপতি এবং সদস্যরা তৈরী করেন। যাদের কাছে থেকে টাকা নেয়া হয়েছে, তাদেরকেই পরীক্ষার প্রশ্ন আগে থেকে দেয়া হবে বলে অভিযোগ সূত্র বলছে। অভিযোগ সূত্রে, চলতি বছরের আগষ্ট মাসের ২৩ তারিখ কয়রার হড্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহকারী , নাইট গার্ড , পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং আয়া পদে জনবল নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই স্কুল কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক দফায় দফায় মিটিং করে দর কষাকষি শুরু করেন। এক পর্যায়ে টাকা হাতে পেয়েই আগামী ২১ই অক্টোবর শনিবার পরীক্ষার দিন নির্ধারন করেন প্রধান শিক্ষক। অভিযোগে রয়েছে, অফিস সহায়ক পদে আবেদনকারীর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের আত্মীয় রয়েছেন। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের ওষুধের দোকানের কর্মচারী এ নিয়োগ পরীক্ষায় ভিন্ন একটি পদে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও অন্য দুটি পদের জন্য মোটা অংকের অর্থ নিয়েছেন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তথ্য সূত্র বলছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কিছুদিন পরেই নাইট গার্ড পদের জন্য একজনের সাথে ৬ লক্ষ টাকা চুক্তি করা হয়। প্রথমে তার থেকে অগ্রিম ৩ লক্ষ টাকা নেয়া হয়। নিয়োগ পাওয়ার পর বাকী ৩ লক্ষ টাকা নেয়া হবে বলে চুক্তি হয় ওই প্রার্থীর সাথে। প্রধান শিক্ষক কিছুদিন পর আবেদনকারীকে ডেকে ৩ লক্ষ টাকা ফেরৎ দিয়ে বলেন, পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন হলে তোমাকে জানানো হবে। এরপর ওই প্রার্থী জানতে পারেন যে, ৮ লক্ষ টাকায় নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে অন্য একজনের সাথে চুক্তি হয় প্রধান শিক্ষকের। একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন, হড্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আর্থিক দূর্নিতীর সাথে অনেকেই জড়িত। যে বেশী টাকা দিবে, সেই চাকুরী পাবে এমন সুর অত্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়োগ পরীক্ষায় হড্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা দূর্নিতীগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। আর ১৮ই অক্টোবর সকলকে প্রবেশ পত্র পাঠিয়ে জানানো হয় যে ২১ তারিখ এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে বিরুপ মনোভব তৈরী হয়েছে। কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মমিনুর রহমান বলেন, এ পরীক্ষার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার বেশ কিছুদিন পূর্বে জানাতে হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি। তবে, অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এরকম একটি নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে এ ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না। আমি পরীক্ষার বিষয়টি জেনে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক কিছুদিন পূর্বে পরীক্ষার বিষয়ে জানিয়েছিলেন। তবে, পরীক্ষার তারিখ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানান। শফিকুল ইসলাম আরো বলেন, স্কুল সংশ্লিষ্টরা তাড়াহুরা করে পরীক্ষা নিচ্ছেন কাউকে না জানিয়ে। এ নিয়োগ পরীক্ষাটি স্বচ্ছ হচ্ছে না বলে তিনি দাবী করেন। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগাযোগের জন্য ফোন করলে, মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হড্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার বর্মন বলেন, এ নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হচ্ছে। এখানে কোন দুর্নিতীর সুযোগ নেই বলে তিনি জানান। স্কুল কমিটির সভাপতি নিরাকুল মন্ডলের মোবাইলে কল করলে, তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।