খুলনায় মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা উপেক্ষা করে শিক্ষকদের জোর করে নিয়ে এসে মানববন্ধন করেছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক শেখ কাওসার আহমেদ স্কুলের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। নগরীর ডাকবাংলা সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে যশোর রোডে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ও পিডব্লিউডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন পল্লীমঙ্গল দিবা মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও খুলনা অঞ্চল কমিটির সভাপতি ধীমান চন্দ্র বিশ্বাস। মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন খুলনা অঞ্চল কমিটির সাধারন সম্পাদক ডা. গাজী মিজানুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিয়া তৌহিদুল ইসলাম, মহানগর কমিটির সাধারন সম্পাদক সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন শেখ, খুলনা কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিম, খালিশপুর থানা কমিটির সভাপতি শহীদ জিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলামসহ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। এ সময় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক ঢাকার যাত্রাবাড়ী সবুজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্থ আত্নসাতের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক শেখ কাওসার আহমেদকে সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, গত কিছুদিন আগে সারা দেশের মাধ্যমিক স্কুল সরকারীকরণের দাবীতে ঢাকায় মহাসমাবেশ ও অনশনসহ নানান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমেদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা দ্রুত কেন্দ্রীয় নেতা কাওসার আহমদের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল করার দাবী জানান।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি পিডব্লিউডি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত হোসেনসহ বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা থাকলেও তাদেরকে জোর করে মানববন্ধনে আসতে বাধ্য করেছেন। স্কুলে চাকুরী করার কারণে মানববন্ধনে যোগ দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে যাত্রাবাড়ীর সবুজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্থ আত্নসাতের অভিযোগে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে মানববন্ধনে অংশ নিতে বাধ্য করেছেন। যা শিক্ষকদের জন্য খুবই অপমানকর। এ ঘটনার তীব্র নিন্দাও জানিয়েছেন অনেকেই।
খুলনা মহানগর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখন খুলনার সকল মাধ্যমিক স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। মঙ্গলবার স্কুলের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা ছিল। সেটাকে উপেক্ষা করে কিছু জামায়াত-বিএনপি সমর্থক প্রধান শিক্ষক একজন দূর্নীতিবাজ ও স্কুলের অর্থ আত্নসাতকারী প্রধান শিক্ষকের পক্ষে মানববন্ধন করা শিক্ষকদের জন্য মানহানিকর। শিক্ষাখাতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সরকারী কর্মচারীদের ন্যায় বেতন দ্বিগুন করা ও ৫ শতাংশ ভাতা বাড়ালেও এই অসাধু ও দূর্নীতিবাজরা সেটার মূল্যায়ন না করে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম অপতৎপরতা চালাচ্ছে। স্কুল সরকারীকরণের দাবীতে আন্দোলনের নামে ঢাকায় গিয়ে মহাসমাবেশ ও অনশনসহ নানান অপতৎপরতা চালিয়েছে। যার অংশ হিসেবে খুলনায় লিয়াকত হোসেন ও আনোয়ার হোসেন গংরা সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমাজকে উসকানী দিয়ে যাচ্ছে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে ও ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার সময়ে শিক্ষকদের জোর করে নিয়ে এসে দূর্নীতিবাজ ও স্কুলের অর্থ আত্নসাৎকারীকে বাঁচাতে আন্দোলন করছে। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবীও জানান এই শিক্ষক নেতা।