সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন

অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ করে কেডিএ-কে নার্স রোকেয়ার বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন

মো. শহীদুল হাসান :
  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪
  • ৩৮৯ পড়েছেন

# কেডিএ কর্তৃপক্ষের শোকজ

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) ডেপুটি নার্সিং সুপারিনডেন্ট রোকেয়া খাতুন। তিনি কেডিএ’র কোন ধরণের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করছেন বহুতল বিশিষ্ট ভবন। এ ঘটনায় নার্স রোকেয়া খাতুন ও মো: আজিজুল ইসলামকে শোকজ করেছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে নগরীর ইকবাল নগরের ওহাব এভিনিউ-এ অনুমোদন না নিয়ে বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে অবৈধ ভবনের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ থানা পুলিশকে অবৈধ ভবন উচ্ছেদে সহযোগীতার জন্যও চিঠি দিয়েছে কেডিএ কর্তৃপক্ষ।

কেডিএ’র শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) ডেপুটি নার্সিং সুপারিনডেন্ট রোকেয়া খাতুন নগরীর সদর থানার ইকবাল নগর এলাকার ওহাব এভিনিউতে কেডিএ’র অনুমোদন না নিয়ে অবৈধভাবে ৪ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ পেয়ে কেডিএ’র ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট ও অথরাইজড বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শনে অনুমোদনহীন অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের সত্যতা পায়। পরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী কেডিএ কর্তৃপক্ষ রোকেয়া খাতুন ও আজিজুল ইসলামকে অননুমোদিত স্থাপনার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা এবং ইতিপূর্বে নির্মিত অননুমোদিত অবৈধ ভবন কেন ভেঙে ফেলার আদেশ প্রদান করা হবে না, সে বিষয়ে ১৭ মার্চ তারিখের মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। অন্যথায় ১৯৫২ সনের সংশোধিত ইমারত নির্মাণ আইন (১৯৮৭ সনের ১২নং আইন) এর ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। একই সাথে ওজোপাডিকো খুলনার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্মাণাধীন ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার এবং খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে অননুমোদিত নির্মাণ কাজ বন্ধ ও অবৈধ ভবন অপসারণে সার্বিক সহযোগীতা করার জন্য বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওহাব এভিনিউ-এর কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নার্স রোকেয়া খাতুন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কেডিএ-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনুমতি না নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। এলাকাবাসীনেকেই তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করলেও কারো কথায় কর্ণপাত না করে তিনি ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ইকবাল নগরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিকে কিভাবে কেডিএ’র অনুমোদন ছাড়া বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে এলাকায়। ওই গলিতে একটি রিকশা প্রবেশের অবস্থা নেই, নেই কোন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অথবা এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের জায়গা। ফলে ওই গলিতে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা থাকবে না। সে কারণে রোকেয়া খাতুনসহ অনুমোদনহীন সকল ভবন মালিকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসি।

এ বিষয়ে অননুমোদিতভাবে নির্মিত ভবনের মালিক খুমেকের ডেপুটি নার্সিং সুপারিনডেন্ট রোকেয়া খাতুন দাম্ভিকতা দেখিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে দৈনিক দেশ সংযোগকে বলেন, ‘আমি কেডিএ’র অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছি। এ কারণে কেডিএ কর্তৃপক্ষ আমাকে শোকজ করেছে। আমি কেডিএকে যথাযথ জবাবও দিয়েছি। কেডিএ এখন তাদের আইনানুযায়ী যা ইচ্ছে তাই করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ নগরীতে অনেকেই কেডিএর অনুমতি না নিয়েই অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করছে। কেডিএ তাদের কিছুই বলছে না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, সব প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই। উল্লেখ্য, প্রথমে রোকেয়া খাতুন দৈনিক দেশ সংযোগের কাছে অসত্য তথ্য দিয়ে বলেছিলেন, “কেডিএ’র অনুমতি ছাড়া কেউ কি ভবন নির্মাণ করতে পারে? কেডিএ’র অনুমতি নিয়েই আমি এই বহুতল ভবন নির্মাণ করছি।” পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায় যে, রোকেয়া খাতুন আদৌ কেডিএ থেকে ভবন নির্মাণের কোন অনুমতি গ্রহণ করেন নি।

ওজোপাডিকো খুলনার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান ভূইয়া জানান, কেডিএ’র চিঠির বিষয়টি আমার স্মরণে নেই। তবে যদি কেডিএ আমাদের চিঠি দেয় তাহলে কেডিএ যখন অবৈধ ভবনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে শুধু তখনই আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি। এর পূর্বে আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি না বলে জানান তিনি।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) শবনম সাবা জানান, কেউ যদি কেডিএ আওতাধীন এলাকায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে কোন ভবন নির্মাণ করে তাহলে তাকে ১৯৫২ সনের সংশোধিত ইমারত নির্মাণ আইন (১৯৮৭ সনের ১২নং আইন) এর ধারা অনুযায়ী অননুমোদিত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা এবং অননুমোদিত নির্মাণ কাজ কেন ভেঙে ফেলা হবে না সে মর্মে ভবন মালিককে নোটিশ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে ভবন মালিককে ভবন ভেঙে অপসারণ করার নোটিশ দেয়া হয়। ভবন মালিক নিজে থেকে ভবন ভেঙে অপসারণ না করলে কেডিএ কর্তৃপক্ষ অননুমোদিত ভবন ভেঙে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেডিএর আওতাধীন এলাকায় অনুমতি না নিয়ে কেউ ভবন নির্মাণ করলে তার বিরুদ্ধে কেডিএ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখানে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।

খুলনার নাগরিক নেতা এডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, গৃহ নির্মাণ নীতিমালা ও কেডিএ-এর অনুমোদন ছাড়া যদি কোন জমির মালিক বা প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ করে তাহলে তা অবশ্যই অপরাধ। আর খুমেকের ডেপুটি নার্সিং সুপারিনডেন্ট রোকেয়া খাতুনের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় চাকুরী করা একজন এ ধরণের কাজ করবে এটা দুঃখজনক। ভবন নির্মাণে কেডিএর অনুমতি নিতে হবে এটা তিনি জানেন না এরকম কোন ব্যাপার না। সে জেনে বুঝে এ অপরাধ করার কারণে তাকে দেখে অন্যরাও এ কাজে উৎসাহী হবে। সন্দেহ নাই যে তার এ কাজের কারণে অন্যরাও আইন ভঙ্গ করবে, কেডিএ’র বিধান লঙ্ঘন করতে আরো উৎসাহী হবে। এক্ষেত্রে কেডিএ কর্তৃপক্ষের উচিত রোকেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। যাতে করে এ বার্তাটা সবার কাছে যায় যে, ক্ষমতাধর যেই হোক না কেন আইন লঙ্ঘন করে পার পাওয়া যায় না। এ ধরণের একটি ইতিবাচক বার্তা যেন সবার কাছে যায় তার ব্যবস্থা নেয়া। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে কেডিএ’র অনেক কঠোর পদক্ষেপ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। আশা করি এ ক্ষেত্রেও কেডিএ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। অনুমোদন না নিয়ে অবৈধভাবে ও অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে আধুনিক খুলনা সিটি গড়ার যে পরিকল্পনা তা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবে বলেও মনে করেন এ নাগরিক নেতা। ##

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu