• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন

×

মোংলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেধাবী কন্যা’র সাফল্য

  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪
  • ২৭ পড়েছেন

দেশ প্রতিবেদক, মোংলা :
‘অন্ধজনের কিবা রাত্রি, কিবা আবার দিন, সুন্দর এই পৃথিবী হায়রে রইলো অচিন’। না ! পৃথিবী দেখা তার অচিন হলেও সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আলোকিত হওয়ার জন্য যুদ্ধে নেমে জয়ী হয়েছেন ঐতি রায় (১৮)। জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন। মায়ের শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পড়াশোনা ও একই এলাকার অষ্টম শ্রেণীর বিজয়া হালদার নামের ৮ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়। সোমবার (১৩মে) সরেজমিনে গিয়ে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকায় তার বাড়ীতে কথা হয় ঐতি রায়ের বাবা অনুপম রায়ের সাথে। আবেগ আপ্লূত হয়ে বলেন, জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন তার মেয়ে এই রেজার্ল্ট ভাবতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে তার মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহ ছিল। আমরা সেভাবেই তাকে যত্ন করে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করাই। একমাত্র মেয়েকে তার মা শংকরি রায় প্রথমে শ্রুতি লেখনির মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখায়। এভাবে করে এস এসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি রায় মুখস্থ বলতো আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা পরীক্ষার খাতায় লিখত। এভাবে সে সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেছে। ঐতির রায়ের মা শংকরি রায় বলেন, ছোটবেলা থেকে ঐতির পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। আমরা প্রচন্ড খুশি, স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। মেয়েকে অনেকদূর পড়াশোনা করাতে চান তারা। এজন্য ঐতির পরিবার সরকারের সহযোগিতা চান। এ বিষয়ে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এছাড়া সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাস করা ঐতি রায় বলেন, জন্ম থেকে আমি দৃষ্টিহীন। কিন্ত পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। সে অদম্য ইচ্ছে থেকেই আমার এই সফলতা। পড়াশোনার কাজে আমার মা আমাকে সহযোগিতা না করলে আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। মা পাশে বসে রিডিং পড়তো, আমি সেটা মুখস্থ করতাম। এভাবেই লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি। পড়াশোনা শেষ করে সরকারি একটা চাকরি এবং আবৃত্তির শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের কথাও বলেন ঐতি রায়। ঐতি রায়ের স্কুল হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ঐতির বাবা অনুপম রায় এবং আমি ছোট বেলার বন্ধু। সে তার দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। আমি তাকে বলি আমার স্কুলে (হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) দাও, বাকিটা আমি বুঝব। এরপর ঐতি রায়কে খুব যতœ করে ক্লাসে পড়াশোনা করাই। সে ক্লাশে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। আজ ঐতি ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘ এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাস করে আমার এবং স্কুলের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার এই রেজাল্টে দারুন খুশি। দোয়া করি ঐতি তার মেধা বিকশিত করে অনেক বড় হবে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA