• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১২ অপরাহ্ন

×

মোংলায় বিনামূল্যে তারা ফিরে পাচ্ছেন দুই নয়নের আলো

  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
  • ৩৫ পড়েছেন

বিশেষ প্রতিবেদক, মোংলা :
রাবেয়া বেগম (৫৫)। দীর্ঘদিন চোখে দেখতে পাননা ঠিকমত। অন্যের কাঁধে ভর করে চলাফেরা করতে হয় তাকে। চিকিৎসা করাতে পারলেই তিনি পুরোপুরি ফিরে পাবেন দুই নয়নের আলো। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে সেটি সম্ভব না। তবে বিনামূল্যে চোখের সকল প্রকার চিকিৎসা করাচ্ছেন লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। মাইকে প্রচারণার এমন খবর শুনে শুক্রবার (১৭মে) ভোরেই তার ছেলে মিকাঈল সরদারের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েন বাড়ী থেকে। এরপর বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার দক্ষিণ চাঁদপাই গ্রাম থেকে রামপাল উপজেলার বড়দিয়া এলাকায় ছুটে আসেন তিনি। এসে দেখেন তারমতো শতশত নারী-পুরুষ চোখের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ সময় তিনি দেখতে পান কয়েকজন তরুন চিকিৎসক যতœ করে রোগী দেখছেন। অন্যদিকে বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসা ও চিকিৎসাপত্রে ওষুধ লিখে নিয়ে চোখে-মুখে হাঁসি নিয়ে বাড়ী ফিরছেন কয়েকজন। তা দেখে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলেন এই নারী। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে রামপালের বড়দিয়া গ্রামে গেলে কথা হয় এই রাবেয়া বেগমের সাথে। এ সময় কথা হয় সখিনা বেগম (৬৬), রজ্জব আলী মোড়ল (৬৭), আবু বক্কর সিদ্দিক শেখ (৬৫), দীন মোহাম্মদ (৭৪), গোনজেরা বেগম (৭০)সহ বেশ কয়েকজন নারী পুরুষের সঙ্গে। যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ। এছাড়া এদিন সেবা নিতে আসা মানুষজনের মধ্যে ষাটোর্ধ রোগীর সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য। ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের উদ্যোগে এবং দৃষ্টি উন্নয়ম সংস্থা ও লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের সহযোগিতায় ৩হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ড. ফরিদুলের বাড়ীর পাশেই বড়দিয়া হাজী আরিফ (রহ:) মাদ্রাসার মাঠে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করা হয়। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও। এ সময় দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শতশত মানুষ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। স্বেচ্ছা সেবকেরা সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রত্যাশীদের নির্দিষ্ট বুথে পৌঁছে দিচ্ছেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে করা হচ্ছে মাইকিং। মোট ৪টি বুথে এই আই ক্যাম্পের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রামপাল উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হলেও পুরো রামপাল উপজেলা ছাড়িয়ে মোংলা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট জেলা, খুলনার দাকোপ থেকেও মানুষজন এসেছেন বিনামূল্যে চোখের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে। পাঁচজন চিকিৎসকসহ ১৫জনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম এখানে সেবা দিতে আসেন। এদিন উপস্থিত থেকে সেবা দেওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলামকে। তিনি এ সময় বলেন, আমার জীবনবোধের চিন্তাভাবনা থেকে এই সেবামূলক কার্যক্রম করছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এই পৃথিবীতে যখন এসেছি, একদিন আবার আমাকে চলে যেতে হবে। পরকালে আমার প্রত্যেকটা কাজের হিসেব দিতে হবে। তাই হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়ে একটু সেবামূলক কার্যক্রম করছি। তিনি এ সময় আরও বলেন, বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা দিতে আমরা এখন পর্যন্ত চারটি ক্যাম্প করেছি এখানে। এ উপজেলায় আরো দুইটি ক্যাম্প করার ইচ্ছে আছে আমাদের। তাহলে পুরো উপজেলার সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে বিনামূল্যের এই সেবা পৌঁছে যাবে। এই উপজেলায় অনেক অসহায় মানুষ আছেন- যারা জানেও না চোখের ছানির জন্য মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। চোখে কম দেখাসহ অনেকের চোখে সমস্যা রয়েছে কিন্তু তাঁরা বুঝতেও পারেন না চোখে সমস্যা আছে। এমন মানুষদের চোখকে সুস্থ রেখে তাদের মুখে হাঁসি ফোটাতে এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৬০হাজার মানুষের চোখের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ৬২০০জনকে চোখের অপারেশন করা হয়েছে বলেও জানান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। বিনামূল্যে উন্নত চোখের সেবা পেয়ে মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা গ্রামের রজ্জব আলী মোড়ল (৬৭) বলেন, অনেকদিন চোখ নিয়ে কষ্টে ছিলাম। টাকার জন্য ডাক্তার দেখাতে পারিনি। তারপর এখানে এসেছি। ডাক্তার সাহেবরা ভালোভাবে আমার চোখ দেখেছে। এখন বলেছে, আমার চোখের ছানি অপারেশন লাগবে। তারা নিজেরাই আমাকে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করিয়ে বাড়ী পৌঁছে দিবে। রামপাল উপজেলার মর্জিনা বেগম (৫০) বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনা। আজকে বড় ডাক্তাররা বিনা টাকায় সেবা দিছে, আবার ওষুধও দিছে। বাঁশতলী গ্রামের গোনজেরা বেগম (৭০) বলেন, চোখে ছানি পড়ছে। ডাক্তাররা বলছে, ঢাকায় নিয়ে অপারেশন করাবে। আমার বাড়িতে দিয়ে যাবে। সব খরচ তাদের। আমি তাদের জন্য দোয়া করি। চোখ নিয়ে অনেক কষ্টে ছিলাম। আই ক্যাম্পের চিকিৎসক এসএন সাহা বলেন, ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা এখানে এসেছি। আমরা দেশের অনেক জায়গায় আই ক্যাম্প করেছি। তবে রামপাল উপজেলায় বেশি সাড়া পেয়েছি। চিকিৎসা নিয়ে এ এলাকার মানুষের আগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে দেশের অন্য কোথাও কেউ ডাক দিলে আমরা সেখানে আই ক্যাম্প করতে যাবো। আজকের ক্যাম্পে যেসব রোগীদের অস্ত্রোপচার দরকার-তাদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়েছে। ওইসব রোগীকে ‘ঢাকা দৃষ্টি আই’ হাসপাতালে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করানো হবে। তাদের আসা-যাওয়াসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ব্যয়ভার বহন করবে ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি লায়ন ড. ফরিদুল ইসলাম।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA