• E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

×

পাইকগাছায় লবন পনির চিংড়ি চাষে হুমকির মুখে প্রাণ-প্রকৃতি

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২২ মে, ২০২৪
  • ৮৪ পড়েছেন

দেশ প্রতিবেদক, পাইকগাছা :
পাইকগাছায় দীর্ঘ মেয়াদী লবন পনির চিংড়ি চাষের ফলে কৃষি, স্বাস্থ্য সুপেয় পানি ও প্রান-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত বিরুপ প্রভাবে মাত্রাতিরিক্ত লবনাক্ততা ও প্রচন্ড তাপদাহে পানি সংকটে এখন অধিকাংশ ঘেরে মড়ক লেগে ও ভাইরাসে চিংড়ি মরে সাবাড় হয়ে গেছে। এতে চিংড়ি চাষি ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মহ সংকটে। এ পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলের কৃষকরা লবন পানির চিংড়ি ঘেরের পরিবর্তে এখন মিষ্টি পানিতে ধান-মাছ চাষের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেছেন। জানাগেছে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নামে ৮০’র দশকে বহিরাগত ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উপকূলীয় এ এলাকায় লবন পানির চিংড়ি চাষ শুরু করেন। ঘের মালিকরা পানিউন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রাশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ ভাবে পাউবো’র বাঁধ কেটে পোল্ডার অভ্যন্তরের কৃষি জমিতে লবন পানি উত্তোলন করে চিংড়ি ঘেরের বিস্তার ঘটান। শুরুতে ব্যাপক লাভ জনক হলেও বর্তমানে চিংড়ি চাষ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। জমির হারী ও পোনার টাকা ও ব্যাংক ঋনে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন ঘের মালিকরা। এ অবস্থায় খোদ ঘের মালিক ও চাষীরা স্বীকার করছেন, চিংড়ি চাষ এখন অ-লাভজনক ব্যবসা। লবনাক্ততার কারনে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কৃষি ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি সুপেয় পানি সংকট, সবুজ গাছ পালা ও দেশীয় প্রজাতির মিষ্টি পানির মাছ উজাড় হয়েছে। অপর দিকে উপজেলার লবন পানি মুক্ত দেলুটি ও গড়ইখালী ইউনিয়নে আমন মৌসম শেষে রবি মৌসুমে ব্যাপক পরিমান তরমুজ, ঢেড়স, তিল, পালচিং পদ্ধতির মরিচ ও সবজি চাষ সহ বহুবিধ ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা সাফল্য দেখিয়েছে। এ মৌসুমের একজন সফল তরমুজ চাষী গড়ইখালী ইউপি’র বাইনবাড়ীয়া সুব্রত মিস্ত্রী জানান, আমি ৯ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বিঘা প্রতি ৭৫/৯০ হাজার টাকায় ক্ষেত বিক্রি হয়েছে। আর খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি ২৮/৩০ টাকা। পাইকগাছার রয়্যাল ফিস ট্রেডিং এর সত্ত্বাধিকারী ১৮শত বিঘার চিংড়ি ঘের মালিক গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবনাক্ততা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে চিংড়ির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ৩০/৪০ বছর ধরে লবন পানির চিংড়ি ঘেরের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়েছে এ পরিস্থিতিতে তিনি বর্ষ্যা মৌসুমে ঘেরে মাছের সাথে ফসল উৎপাদন জরুরী মনে করেণ। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, উপজেলায় এখন ১৭ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। লবনাক্ততা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে চিংড়ি চাষ ঝুকিপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বিপর্যয় এড়াতে পানি ব্যবস্থাপনা জরুরী মনে করে ঘেরের গভীরতা বৃদ্ধি’ র পরামর্শ দিয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ অসীম কুমার দাশ জানান, চিংড়ি ঘেরের জমিতে দীর্ঘদিন দিন লবন জল আটকে থাকায় মাটির গুনাগুন নষ্ট হচ্ছে। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি চলতি রবি মৌসুমে লবন পানি মুক্ত দেলুটি-গড়ইখালীতে বহুমুখী ফসল সহ ১৪শ ৪০ হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষেত থেকে প্রায় ১কোটি টাকা বিক্রয়ের চিত্র তুলে ধরেণ। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিষ চন্দ্র গোলদার জানান, লবনাক্ততার কারণে এলাকার মানুষ স্বাস্থ্য ঝঁকিতে। দেশের অন্যান্য হাসপাতালে চাকুরীর অভিজ্ঞতা বর্ননা দিয়ে তিনি আরোও বলেন, তুলনামূলক ভাবে এ এলাকার মায়েদের গর্ভকালীন জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ, জরায়ু ও স্ট্রোমার্ক ক্যান্সার, কিডনী, পানি বাহিত রোগের প্রকোপ বেশি। সুন্দরবন ও উপক‚ল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক নিখিল ভদ্র জাতীয় বাজেট উপক‚লীয় এলাকার মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দাবি করেন। লবন পানির চিংড়ি চাষের ফলে মানুষের জীবন জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য-সুপেয় পানির সংকট উত্তরণে তিনি সুনিদৃষ্ট পরিকল্পনা তৈরীর পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান জানান, উপক‚লীয় এলাকায় লবন পানির চিংড়ি চাষের ফলে কৃষি ও প্রাণ-প্রকৃতি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রীরর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্যের উদাহরণ দিয়ে তিনি আরোও জানান, খাদ্য নিরাপত্তা, সুপেয় পানি সংকট ও পরিবেশ বাঁচাতে আগামী বছর থেকে পাইকগাছা-কয়রায় লবন পানির চিংড়ি ঘেরের পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে ধান-মাছের ঘের হবে বলে ঘোষনা দেন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA