• E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন

×

পাউবোর ব্যর্থতায় সহস্রাধিক মানুষের সেচ্ছাশ্রমে মেরামতের পর পরই ভেঙে গেল কয়রার বেঁড়িবাঁধ

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪
  • ৫৩ পড়েছেন

কয়রা(খুলনা) প্রতিনিধিঃ

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর মিথ্যা আশ্বাস আর নয়। এবার স্থায়ী সমাধানের বাঁধ চাই। আর চাই না ভাসতে, এবার দিন বাঁচতে। উপকূলের কান্না কী সরকার শুনতে পান না। হাজারোও মানুষের চেষ্টার পরও শেষ রক্ষা হলো না। এতে আবার হাজারও কৃষকের স্বপ্ন চোখের পলকে ভেসে গেল। আমাদের জননেত্রী মানবতার মা শেখ হাসিনা আসার আগে মন্ত্রী মহোদয়কে পাঠিয়েছিলেন । তিনি এসেছিলেন কিন্তু হেলিক্যাপ্টারে উড়ে দেখে কয়রা সদরে গিয়ে নেমে মতবিনিময় করে চলে গেছেন। শুনছিলাম মন্ত্রী মহোদয় বেঁড়িবাঁধে আসবেন আমাদের কথা সরাসরি শুনবেন। তাই সবাই চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে ছিলাম এবং আনন্দে বাঁধে কাজ করছিলাম আর ভাবছিলাম তিনি স্বচক্ষে আমাদের ভাঙা বাঁধ ও পানিবন্দী মানুষের দুঃখ দেখে গিয়ে সরকারকে জানাবেন। কিন্তু সেটা আর হলো না, আরে কানার তো রাত আর দিন সমান। আফসোফ তিনি ভেঙে যাওয়া বাঁধে না এসে চলে গেলেন। এমন হতাশার বিভিন্ন কথাগুলো বলছিলেন কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামে সেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করতে আসা উপকূলে সহস্রাধিক তরুন ও স্থানীয় লোকজন। উপজেলা সিপিপি টিম লিডার জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুনের ডাকে ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে এসে উপজেলার কপোতাক্ষ নদের ভাঙা বেঁড়িবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করছিলেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ।

গতকাল (২৯ মে) বুধবার সকালে দশালিয়ার কপোতাক্ষ নদের ্ওই বাঁধ হাজারোও মানুষ জড়ো হয়ে মেরামত করেন তারা। কাজ শেষে হতেই চলে আসে সেই অসনি প্রবল জোয়ার। বাঁধের পাশে দাড়িয়ে থাকতেই নির্মাণ করা বাঁধের উপর দিয়ে ছাপিয়ে জোয়ারের পানি যেতে থাকে। এরপর দেখতে পায় জোয়ারে বাাঁধের আরেক পাশ ভেঙে গেছে। এতে আবারও দশালিয়া গ্রামে লোনা পনি প্রবেশ করেছে।আবারও পানিবন্দী হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নদীর লোনা পনিতে ডুবন্ত জনপদে পরিণত হয়েছে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া সহ কয়েকটি গ্রাম। নদের পাড়ের চিংড়ি ঘেরগুলোর অস্বিত্ব আর নেই। পানি ঢুকে পড়েছে বসতি জনপদে।বারবার একই স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ব্যর্থতাকেই দুষছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের অভিযোগ গত বছর এই বাঁধ নির্মাণ করার পরই নিচু হয়ে যায় এবং বালি ভর্তি জিও বস্তা সরে চলে যায়। এমনকি সেখাতে ভাঙতে ভাঙতে ওয়াদা সরু হয়ে যায়। বারবার অনুরোধ করার পরও সেটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মজবুত করার ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো কতৃপক্ষ। এতে দূর্বল বাঁধ আবারও ভেঙেছে।সকালে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে সেচ্ছাশ্রমে কাজ করছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, পাউবো কর্মকর্তা সোলায়মান আশ্বাস দিয়েছিলেন বাঁধ নির্মাণের সমস্ত উপকরন আমরা যোগান দেব, আপনার যদি লোক দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে পারেন। সেই আশ্বাসে আমদের সিপিপি টিম লিডার আব্দুল্লাহ আল মামুনের ডাকে আমরা হাজারো মানুষ সেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মানের কাজে ঝাপিয়ে পড়ি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁশ, বস্তা পেরেক দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু বালি আটকাবার জন্য বলগেট জিও বস্তার টপ দেয়ার কথা থাকলেও বলে আপনারা কাজ করেন ও গুলো আসতেছে। আমরা বাঁশ দিয়ে ক্লোজারে খাঁচা করে বস্তায় মাটি ভরে ফেলতে থাকি কিন্তু তারা শুধু বলছে বলগেট ও জিও বস্তা ট্রলারে করে আসতেছে। দুঃখের বিষয় শেষ পর্যন্ত আর ওই বালি আটকাবার জন্য বলগেট আর বাঁধের পাশে পৌছায় নি। যদি বলগেট আসত তাহলে বাঁধে টিউবে বালি ভরে টিউব দিতে পারলে পুনরায় আর বাঁধ ভাঙত না। একই গ্রামের স্বপন কুমার মিস্ত্রী বলেন, এই বাঁধ কতবার ভাঙবে আর কতবার সেচ্ছাশ্রমে ঠিক করব বুঝতে পারছি না।

প্রতিবার ভাঙনের পর পাউবোর কর্মকর্তা সহ অনেক বড় বড় ব্যক্তি পরিদর্শনে আসেন, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়ে চলে যান। পওে আর তাঁদেও খোজ থাকে না। সরকারিভাবে এখনো বাঁধ রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে গ্রামবাসীর উদ্যোগে বাঁধ রক্ষায় কাজ করেও বাঁধ টিকিয়ে রাখা যায় নি।উপজেলা সিপিপি টিম লিডার জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কর্মকর্তাদে বাঁধ মেরামত কাজের সমস্ত উপকরন দেওয়ার কথা ছিল। সে আশ্বাস পেয়ে এলাকায় সেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ অব্যহত রেখেছিলেন  সাধারণ মানুষকে নিয়ে। কিন্তু টিউবে বালি ঞার বলগেট না আসায় কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সরঞ্জাম দিয়েছিল সেটা যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট মানুষ থাকার পরেও নদীতে প্রবল জোয়ার থাকায় আজ আর বাঁধ টেকেনি। প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় নদীর পানি অনেক বাড়ছে। এতে দশালিয়ার যে বাঁধটি মেরামত করা হচ্ছিল, তা আবার ভেঙে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা সুলায়মান বলেন, প্রাথমিকভাবে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের মাধ্যমে পানি আটকানোর জন্য মানুষ কাজ শুরু করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডেও পক্ষে বস্তা বাঁশ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু বলগেট ঠিক করা ছিল, কোন কারনে আসতে পারি নি। আর অস্বাভাবিক প্রবল জোয়ারে এক পাশ থেকে বাঁধ ভেঙে যায়।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA