• E-paper
  • English Version
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

×

ধান-মাছ চাষের দাবি জোরালো পাইকগাছায় লবন পানি ও মিষ্টি পানি ইস্যুতে মাঠ সরগরম হচ্ছে 

  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪
  • ২৭ পড়েছেন
স্নেহেন্দু বিকাশঃ
পাইকগাছায় মিষ্টি পানি ও লবন পানির চিংড়ি চাষ ইস্যুতে দু’পক্ষই এখন মাঠে নেমেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তীতে উপকূলীয় এলাকায় লোনা পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য-ফসল চাষ ও সুপেয় পানির দাবি জোরালো হয়েছে। খুলনা-৬ আসনের এমপি মোঃ রশীদুজ্জামান সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নির্বাচনী এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংশী লবন পানির ক্ষতিকারক দিক ও মিষ্টি পানিতে মৎস্য চাষ ও বহুমুখি ফসল উৎপাদনের যুক্তিকতা তুলে ধরলে সাধারন মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে লবন পানি নিয়ন্ত্রন ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন কমিটি গঠন করে জনমত গঠনে মাঠে নেমেছে।
অপরদিকে লোনা পানির চিংড়ি চাষ ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে এমন অভিযোগ এনে ঘের মালিকরা উপজেলা চিংড়ি চাষী সমিতির ব্যানারে পাল্টা অবস্থান নিয়ে ২৭ জুন মতবিনিময় সভা করে মাঠে নামার বার্তা দিয়েছেন। সভায় সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর ও উপদেষ্টা ঘের মালিক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু লবন পানির চিংড়ি চাষ আর্শীবাদ মনে করে অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার ঘোষনা দেন। নেতৃবৃন্দ সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামানের লোনা পানির  চিংড়ি ঘের বন্ধের ঘোষনা অশুভ তৎপরতা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের পেটে লাথি মারলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না বলে ঘোষনা দেন। বৃহস্পতিবারের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য এলাকার চা-স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। মিষ্টি পানির সমর্থকরা মতবিনিময় সভায় বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি-তর্ক তুলে ধরেছেন।
উপজেলা লবন পানি নিয়ন্ত্রন ও পরিবেশ সংরক্ষন আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ও নব-নির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল ওয়াহাব বাবলু বলেছেন, এখন সমাজের  বেশির ভাগ মানুষের দাবি পরিবেশ বিধ্বংশী লোনা পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে ধান-মাছ চাষের ক্ষেত্র তৈরী করা হোক। দেশের অর্থনীতিতে ২য় চিংড়ি খাত হিসেবে প্রচার করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তী ছড়ানো হচ্ছে।  সামাজের ধনী বা বড় জমির মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ শ্রেনী স্বার্থ রক্ষায় লবন পানির চিংড়ি ঘেরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কমিটির সাধারন সম্পাদক উদয় কুমার মন্ডল জানান, চিংড়ি চাষ শুরুতেই পরিবেশ বিপর্যয় ঘটায়। শুরুতে  ঘের মালিকরা  মৎস্য ঘেরে  কৃষকদের ধান লাগানোর সুযোগ দিত। এখন সে চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে ঘের মালিকরা ধান চাষ না করে নিজেদের মুনাফা লাভের আশায় সারা বছর জমিতে লবন পানি বদ্ধ করে ফসল হানি করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। পাউবোর বাঁধ কেটে ব্যক্তিগত ও সরকারি স্লুইস গেট দিয়ে পোল্ডারে লবন পানি উত্তোলন জনগনের সম্পদ ধ্বংশ করছেন। এতে যেমন  খাদ্য ঘাটতি,পরিবেশ বিপর্যয়সহ গাছ-পালা ও দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংশ হয়েছে। তিনি এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য লোনা পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য ও ফসল উৎপাদন লাভ জনক মনে করে সভা সমাবেশ করছেন।
পাইকগাছা প্রেসক্লাব সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাড, এফএমএ আঃ রাজ্জাক বলেন, ২০০/ ১০০ বা ৫০ বিঘার জমির ধনী পরিবার বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারী স্লুইস গেট ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থে লবন পানির চিংড়ি ঘের করে সমাজ নিয়ন্ত্রন করবে এটা হতে পারেনা, আর চলতে দেওয়াও ঠিক না।
তিনি আরোও বলেন, সাবেক এমপি মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু’ লবন পানি বিরোধী অবস্থানে ছিলেন। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত বৈঠকে  সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও চিংড়ি চাষি সমিতি ও ঘের মালিকরা ২৩ সালের পর থেকে লবন পানির চিংড়ি ঘেরের পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য ও ফসল উৎপাদন করবেন বলে  বলে ঐক্যমতে পৌছান। সেটা তারা ভূলে গিয়ে নতূন করে ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছেন কেন?
এ বিষয়ে দেলুটি ইউনিয়ন আ’ লীগের সাধারন সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক সময় লবন পানির চিংড়ি চাষ ইতিবাচক  হলেও এখন তা ঝুঁকিপূর্ণ ও অ-লাভজনক।  টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মান ও সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনার দাবি করে তিনি  কৃষিতে টিকিয়ে রাখতে   সমন্বিত চাষ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে আরোও বলেন, মিষ্টি পানিতে মৎস্য-ফসল উৎপাদন খুবই লাভ জনক যা দেলুটি ইউনিয়নের কৃষকরা আমন ও রবি মৌসুমে বহুমুখী ফসল উৎপাদন করে প্রমান দেখিয়েছে।
খুলনা-৬ আসনের এমপি মোঃ রশীদুজ্জামান জানান,এ পর্যন্ত  আমি কোথাও বলেনি ঘের হবেনা। শুধু লোনার পরিবর্তে মিষ্টি পানির চাষ পদ্ধতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেছি। নির্বাচনকালে ও পরবর্তীতে সংসদ থেকে শুরু করে মাঠে ময়দানে লবন পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য-ফসল উৎপাদনের উপর জোর দিয়েছি। এর সাথে টেকসই বেঁড়িবাঁধসহ সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনার কথা বলে আসছি। যা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীও অবহিত। অধিকাংশ মানুষের দাবিকে বাঁধাগ্রস্থ করতে এক শ্রেনীর ঘের মালিকরা ক্ষমতাবলে সরকারী সম্পদের ক্ষতি নিজেদের স্বার্থ হাসিলে মাঠে নামার  প্রছন্ন হুমকি দিচ্ছেন। কোথাও এক ইঞ্চি পতিত রাখা যাবেনা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ঘোষনা বাস্তবায়ন ও মিষ্টি পানিতে মৎস্য ও বহুমুখী ফসল উৎপাদন করতে পোল্ডারে  লোনা পানির বন্ধের ঘোষনা বাস্তবায়নের তিনি সর্ব সাধারণকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছেন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA