বিশেষ প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশের নিট (প্রকৃত) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নির্দেশিত ১৪.৭ বিলিয়ন ডলার পার করতে চলেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বহুপাক্ষিক ঋণদাতাটি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়ার পর এই প্রথম সংস্থাটির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হচ্ছে নেট রিজার্ভ। রিজার্ভ গণনা চূড়ান্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক; যা ১৫ বিলিয়ন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ সংরক্ষণের যে আন্তর্জাতিক মানদন্ড, এটি তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম৬ অনুসারে, নেট রিজার্ভ গণনা করা হয়। গ্রস বা মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নেট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানা যায়। অর্থাৎ, গ্রস রিজার্ভে বর্তমানে কী পরিমাণ নগদ অর্থ আছে– তাই নির্দেশ করে নেট রিজার্ভ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়, ২৬ জুন পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ১৯.৪ বিলিয়ন ডলার। এই মাস শেষে তা বেড়ে ২২ বিলিয়ন ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির দ্বিতীয় মূল্যায়নের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন মাসের শেষে নেট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯.৬ বিলিয়ন ডলার, যা গত এপ্রিলে ১২.৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
এই প্রেক্ষাপটে, নেট রিজার্ভ জুনের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া আপাত অগ্রগতি মনে হলেও এটি অর্জিত হচ্ছে আমদানি সংকোচনের মাধ্যমে। যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও মন্থর করছে। আইএমএফকে দেওয়া এক চিঠিতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্বীকার করেছেন যে, ক্রমাগত আমদানি সংকোচন অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ধীর করে দিয়েছে; অন্যদিকে বিশ্ববাজারে পণ্যদ্রব্যের চড়া দাম এবং টাকার অবমূল্যায়ন মূল্যস্ফীতির হারকে উচ্চ অবস্থানে রেখেছে, যা দরিদ্রদের ওপর অসম বোঝা চাপিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশের আমদানি কমেছে প্রায় ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।এছাড়া, আইএমএফ থেকে ১১৫ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৯০ কোটি মোট ২০০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার ঘটনাও বাংলাদেশকে আইএমএফ নির্ধারিত নেট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে সহায়তা দিচ্ছে। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করাও সাহায্য করছে।
বিনিময় হারে নতুন ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা দেশের ইতিহাসে একদিনে টাকার সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন। ক্রলিং পেগ চালুর পর গত ৮ মে থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেয়। জ্বালানি আমদানি কঠোর করা ক্রলিং পেগ চালু এবং সরকারের আমদানি দায় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধের ঘটনায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বৈদেশিক পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে জ্বালানি আমদানি হ্রাসে বাধ্য হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত ১০ থেকে ১২ জুনের মধ্যে বিপিসি দৈনিক ২৫ মিলিয়ন (আড়াই কোটি) ডলার সরবরাহের অনুরোধ করে, তবে দৈনিক এ চাহিদার অর্ধেকেরও কম ডলার পেয়েছে। ফলে সময়মতো বিদেশি জ্বালানি সরবরাহকারীদের বিল পরিশোধ করতে পারেনি বিপিসি। গত ১৩ জুন পর্যন্ত সংস্থাটির অপরিশোধিত আমদানি দায় রয়েছে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন (২৫ কোটি) ডলারের। ১৬ থেকে ১৭টি কার্গোতে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টন পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত (ক্রুড) জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসি। এই হিসাবে, ২০২৪ সালে সংস্থাটির মোট ৬০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করার কথা।
তবে বিপিসির একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ বন্ধ করায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থা এখন আমদানি কমাতে বাধ্য হচ্ছে। জুনের পরিবর্তে জুলাইয়ে দুই কার্গো জ্বালানি তেল পাঠাতে বিপিসি তার সরবরাহকারীদের অনুরোধ করেছে বলেও জানান তিনি। এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় অনেক দেশই কম দামে বিপুল পরিমাণে কিনে তা মজুদ করছে। কিন্তু, অব্যাহত ডলার সংকটের কারণে এ সুযোগও নিতে পারছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে পেট্রোলিয়াম আমদানির প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ৮ শতাংশ হয়েছে, অথচ গত অর্থবছরের একইসময়ে তা ১৬ শতাংশ বেড়েছিল। জ্বালানি আমদানি কমায় সরকারকে নিকট ভবিষ্যতে এর দাম বাড়াতে হতে পারে। দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে এতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উপদেষ্টা সম্পাদক: আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক,মেয়র, খুলনা সিটি কর্পোরেশন। সম্পাদক: মো: মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ। আইটি ইনচার্জ : মোঃ নাঈমুজ্জামান শরীফ । প্রকাশনা, বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ: "জাহান মঞ্জিল" ৪০, সিমেট্টি রোড (বেণী বাবু রোড), ফুলমার্কেট, খুলনা। dailydeshsanjog@gmail.com, sohagkhulna@gmail.com, online.deshsanjog.news@gmail.com যোগাযোগ করুন: info@deshsanjog.com</p>
দৈনিক দেশ সংযোগ