• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ন

×

মাম পানি-আরসি কোলার কর ফাঁকি ২৯ কোটি টাকা

  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪
  • ৩০ পড়েছেন
ছবি সংগ্রহীত

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে, কিন্তু সেই কাঁচামালের একটি অংশ দেখানো হয়নি। দুই করবর্ষে বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল খোদ কোম্পানির নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে দেখানো হয়নি। এতে দুই করবর্ষে প্রায় ৫৯ কোটি টাকার কাঁচামালে আয়কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। কিন্তু বিক্রি দেখানো হয়েছে ব্যাংক জমার প্রায় অর্ধেক। এতে অপ্রদর্শিত আয়ে দেয়া হয়েছে করফাঁকি। পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেডের এই করফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে কর পরিদর্শন পরিদপ্তর। ফাঁকি দেয়া কর আদায় ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর অঞ্চল-৫-কে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানির ব্র্যান্ড মাম। আরও রয়েছে জনপ্রিয় কোমল পানীয় ব্র্যান্ড আরসি কোলা। দুটি পানীয় উৎপাদন করে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান পারটেক্স গ্রুপের পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেড।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেড কর অঞ্চল-৫, ঢাকার সার্কেল-৮৯ (কোম্পানি)-এর করদাতা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন যাচাই করা হয়েছে।

এতে ২০২২-২৩ করবর্ষের রিটার্নে দেখা গেছে, কোম্পানি ২০২২-২৩ করবর্ষে লোকসান দেখিয়েছে এক কোটি ৯৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯০ টাকা। আর নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে আয় দেখানো হয়েছে চার কোটি ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৭ টাকা। কোম্পানি মাম ব্র্যান্ডের পানি ও আরসি কোলা ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় উৎপাদন ও বিক্রি এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ওই করবর্ষে নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে যে কাঁচামাল আমদানি দেখিয়েছে, তাতে কর কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়।কর কর্মকর্তারা অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম থেকে প্রতিষ্ঠানের ২০২২-২৩ করবর্ষে আমদানি করা কাঁচামালের তথ্য যাচাই করেন। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান ওই করবর্ষে আমদানি করেছে ১১৩ কোটি সাত লাখ ৬৫ হাজার ২৮৮ টাকা। কিন্তু কোম্পানির নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে দেখানো হয়েছে ৮৫ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৭২৮ টাকা। অর্থাৎ প্রকৃত আমদানি গোপন করা হয়েছে ২৭ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬০ টাকা। প্রকৃত আমদানির চেয়ে কম আমদানি দেখিয়ে কোম্পানি করফাঁকি দিয়েছে। গোপন করা এই আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ হারে প্রযোজ্য কর হবে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৮ টাকা। আয়কর আইন, ২০২৩-এর ২০ ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করতে কর অঞ্চলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ২০ ধারায় আমদানি, রপ্তানি বা বিনিয়োগের ওপর করারোপের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ২০২২-২৩ ও ২০২১-২২ করবর্ষে প্রতিষ্ঠানটি উৎসে কর কর্তন দাবি করা হলেও তার কোনো প্রমাণ পাননি কর্মকর্তারা। সেই প্রমাণও যাচাই করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

২০২২-২৩ করবর্ষে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই করবর্ষে কোম্পানির মোট ব্যাংক হিসাব জমা হয়েছে ২৫৬ কোটি ৭১ লাখ আট হাজার ৪৪৫ টাকা। এর মধ্যে বিক্রয় দেখানো হয়েছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ২২ হাজার ২০২ টাকা। ব্যাংক জমার বাকি ১০৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৩ টাকা দেখানো হয়নি। এই বিপুল পরিমাণ পার্থক্যের মধ্যে ‘অপ্রদর্শিত’ আয় রয়েছে বলে স্পষ্টতই প্রতীয়মান। কর নির্ধারণী আদেশে ব্যাংক জমার বিশ্লেষণ যথাযথ নয়। অর্থাৎ এই বিপুল পরিমাণ টাকা প্রতিষ্ঠানের বিক্রি, যার ওপর কর পরিশোধ করা হয়নি। আইনের ৬৭(২) ধারা অনুযায়ী পুনঃপরীক্ষা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।অপরদিকে ২০২১-২২ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই করবর্ষে প্রতিষ্ঠান ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮২ টাকা লোকসান ও ১৫ লাখ ১০ হাজার ৭৮৪ টাকা আয় দেখিয়েছে। এই করবর্ষেও প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা কাঁচামাল নিয়ে সন্দেহ হলে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম হতে তা যাচাই করা হয়। এতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠান এই করবর্ষে আমদানি করেছে ১০৩ কোটি ৩৯ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু কোম্পানির নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে দেখিয়েছেন, ৭০ কোটি ৬৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৯১ টাকা। অর্থাৎ নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে প্রকৃত আমদানি ক্রয়ের চেয়ে কম দেখিয়েছে ৩২ কোটি ৭১ লাখ ৭২ হাজার ৯ টাকা, যার ওপর ৫০ শতাংশ হারে প্রযোজ্য কর ১৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার চার টাকা, যা কোম্পানি প্রকৃত আমদানির চেয়ে কম আমদানি দেখিয়ে করফাঁকি দিয়েছে। আয়কর আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী কোম্পানির বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করতে প্রতিবেদনে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

একইভাবে করদাতা কোম্পানির এই করবর্ষে মোট ব্যাংক জমা ও বিক্রির মধ্যে বিপুল পরিমাণ পার্থক্য পেয়েছেন কর্মকর্তারা। যাতে বিপুল পরিমাণ করফাঁকি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আয়কর আইনের ৬৭(২) ধারা অনুযায়ী পুনঃপরীক্ষা করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।এই বিষয়ে এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাঁচামাল আমদানি করে, অথচ প্রকৃত আমদানি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে দেখানো হয় না। কোম্পানি করফাঁকি দিতেই প্রকৃত আমদানি গোপন করে। আবার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক জমা আর বিক্রির মধ্যে বিপুল পরিমাণে পার্থক্য রয়েছে। এর অর্থ হলো, প্রতিষ্ঠান প্রকৃত বিক্রয় তথ্য প্রদর্শন করেনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী কর সার্কেল যাচাই করে ব্যবস্থা নেবে। তবে দেশের স্বনামধন্য এসব কোম্পানির করফাঁকি দেয়া উচিত নয়। কঠোর ব্যবস্থা নিলে অন্য কোম্পানি ফাঁকি দেয়ার সাহস পাবে না

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA