• E-paper
  • English Version
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

×

পিতা মৃত্যুর ৭ দিন পর মেয়ের পিতা হত্যার দায় স্বীকার

  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪
  • ২৬ পড়েছেন

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

খুলনার দৌলতপুরে বাবাকে হত্যার ৭ দিন পর দায় স্বীকার করে থানায় হাজির ছোট মেয়ে সুমাইয়া । থানা সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১২জুলাই) সকাল সাড়ে ১১ /১২ টার দিকে মেয়ে দৌলতপুর থানায় হাজির হয়ে নিজ মুখেই পিতা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। সুমাইয়া জানিয়েছে দৌলতপুর বাজারের ঔষধের ফার্মেসি থেকে ১৮০ টাকা দিয়ে ১ পাতা ঘুমের ঔষধ কিনে খাবারের মধ্যে মিশিয়ে বাবাকে খাইয়ে দিয়েছি। তারপর বাবার বুকের উপর ওঠে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছি। তাছাড়া তার হাতেও কামড় দিয়েছে।

এলাকাবাসি সুত্রে জানা যায়, গত ৫ জুলাই দৌলতপুরস্থ দেয়ানা উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ হুমায়ুন কবির (৫২) মৃত্যু বরণ করেন। প্রতিদিনের ন্যায় রাতের খাবার খেয়ে তিনি তার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে তার স্ত্রী ও মেয়েরা ঘুম থেকে ডেকে তুলতে না পেরে নিশ্চিত হন তিনি মারা গেছেন।হুমায়ুনের মৃত্যুর খবরে আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজন ছুটে আসেন। তখন মৃত হুমায়ুনের হাতে কামড়ের দাগ, হাতে ও পড়নের লুঙ্গিতে রক্ত, সমস্ত শরীর নীল বর্ণ দেখে অনেকের সন্দেহ হয়। তখন তার মৃত্যু নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন শুরু হয়। প্রথম দিকে অনেকেই ধারণা করে ছিলেন যে তাকে হয়তো সাপে কেটেছে। সব জল্পনা কল্পনা উপেক্ষা করে পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে তার দাফন করা হয়।

কিন্তু মৃত হুমায়ুনের বড় মেয়ে মরিয়ম পিতার এমন হঠাৎ ও অস্বাভাবিক মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। সে কারণে তিনি ৯৯৯ ফোন করে পিতার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের সহায়তা চাইলেন। ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে দৌলতপুর থানা পুলিশ মৃত হুমায়ুনের বাড়িতে ছুটে আসেন।

দৌলতপুর থানার তদন্ত ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, ৫ জুলাই দেয়ানা উত্তর পাড়ায় হুমায়ুন করির নামে এক ব্যাক্তি মারা যান। তার বড় মেয়ে ৯৯৯ ফোন করে হুমায়ুনের মৃত্যুর ব্যাপারে জানান। ৯৯৯ এর ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরা মৃত হুমায়ুনের বাড়িতে ছুটে যাই । গত ১২ জুন শুক্রবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১/১২ দিকে সুমাইয়া বিনতে কবির নামে এক কিশোরী থানার বারান্দায় এসে কান্না জড়িত কন্ঠে জানায়, আমি আমার বাবাকে মেরে ফেলেছি, আমাকে সাজা দেন। তখন থানা পুলিশ কিশোরী সুমাইয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অপকটে তার পিতা হত্যার দায় স্বীকার করে। সে পিতার চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়।তখন থানা কর্তৃপক্ষ কিশোরীর মা, বোন সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খবর দেয়। খবর পেয়ে সুমাইয়ার পরিবারের লোকজন থানায় ছুটে আসেন। তখন বিষয়টি তাদেরকে জানানো হয়। থানার পক্ষ থেকে মৃত্যু হুমায়ুনের ময়না তদন্তের জন্য পরিবারের সদস্যদের লিখিত অভিযোগ করতে বললে তারা চিন্তা ভাবনার জন্য সময় চেয়ে নেন । মৃত হুমায়ুনের ৩ কন্যা সন্তানের মধ্য সুমাইয়া ছোট। বিয়ের সুবাদে বড় বোন শশুর বাড়িতে থাকেন। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ৫ জুলাই মৃত শেখ হুমায়ুন কবির দৌলতপুরের দেয়ানা উত্তরপাড়ার মৃত শেখ ইসহাক এর ছোট ছেলে। সে নামাজী, পরহেজগার, অত্যান্ত নম্র, ভদ্র, সদালাপি ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। কিন্তু তার ২ মেয়ে উশৃংখল জীবন যাপন করতেন। মেয়েদের উশৃংখল কর্মকান্ডে ও স্বাধীনতায় বাঁধা দেওয়ায় পিতাকে হত্যা করেছে এমনটি ধারনা এলাকাবাসীর। এদিকে হুমায়ুনের স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর সঠিক রহস্য উদঘাটন না করে, হত্যার সাথে কাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং কেন তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হলো, সেগুলো কারণ ও সত্যতা যাচাই না করে, স্বামীর হত্যার বিচার না চেয়ে বরং স্বামীর মৃত্যুর রহস্য ধামাচাপা দেওয়ার পায়তারা করছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। হুমায়ুনের প্রতিবেশী ও একই মসজিদের মুসল্লি হুমায়ুনের চাচাতো ভাই এস এম মঈনুল ইসলাম জানান, হুমায়ুন আমার চাচাতো ভাই, ভাই অনেক নম্র, ভদ্র ও নামাজী লোক ছিলো। ভাইয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সে স্টক করে মারা গেছে। মেনে নিলাম সে স্টক করে মারা গেছে। স্টক করে যদি মারা যাবে তাহলে হাতের বাহুতে ২ টি ছিদ্র হলো কি করে। তার হাতের বাহুর ছিদ্র দেখে মনে হয় এটা স্বাভাবিক মৃত্যু না। এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু। এই মৃত্যুর সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হোক ও সত্য ঘটনা বেড়িয়ে আসুক এটা আমরা চাই।

প্রতিবেশি জানান হুমায়ুনের মৃত্যুর রহস্য একটা ধুম্রজালের মধ্য রয়েছে। তার এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হওয়া দরকার। প্রতিবেশি শ্রমিক ইব্রাহিম শেখ জানান, হুমায়ুনের মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হয়নি। তার হাতে দুটি ছিদ্র ছিলো তার শরীরে আর কোন সমস্যা দেখা যায়নি। আশপাশের লোকজনের ধারণা তাকে সিরিঞ্চ পুশ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, সেদিন হুমায়ুনের পরিবারের সদস্যদের মাঝে কোন শোকের ছায়া ছিল না। তাদের দেখে মনে হয়নি বাড়িতে অভিভাবক মারা গেছে। তার মৃত্যুর কোন একটা রহস্য রয়েছে। সুমাইয়া এ বছর দৌলতপুর মুহাসিন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করেছে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, শিক্ষকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমাদের বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে এস এস সি পাশ করে যাওয়া সুমাইয়া বিনতে কবির তার পিতা হুমায়ুন কবিরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং এই মৃত্যুর সাথে নাকি সুমাইয়া জড়িত। সুমাইয়ার স্কুলের শ্রেনী শিক্ষক সুমিতা মল্লিক আমার স্কুলে ৫ বছর যাবত পড়ালেখা করেছে, তার ভিতর কখনো অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। শিক্ষকদের সাথে ভাল ব্যবহার করতো সালাম দিতো। তাছাড়া, তাকে দেখে কখনো মানষিক সমস্যার রুগি বলে মনে হয়নি। দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান সুমাইয়ার কথা বার্তা অসংলগ্ন। একেক সময় একেক কথা বলছে। কখনো বলছে আমি বাবাকে হত্যা করেছি আবার কখনো বলছে আমার ঘাড়ে জ্বীন আছে।তাছাড়া তিনি বলেন, সুমাইয়ার বড় বোন আদালতে গিয়ে ছিলো। এখনো কোন অভিযোগ বা মামলা দায়ের হয়নি। আদালতের নির্দেশ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি সুমাইয়ার মা ও বোন কে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সুমাইয়া এখন কেএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছে। হুমায়ুনের বড় মেয়ে মরিয়মের সাথে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার পরে ফোন রিসিভ করে বলেন, বাবার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে আছি, আমি কোর্টে মামলার জন্য কাগজপত্র সম্পন্ন করেছি । সোমবার কোর্টে গেলে মামলা রুজু করা হবে। আমি না যেতে পারলে মামলা হবে না। আমি অনেক চাপের মধ্যে আছি। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই। আমি এখন অসুস্থ কথা বলতে পারবো না বলে ফোন কেটে দেন। এলাকাবাসী বলছেন, মৃত্যু হুমায়ুনের মেজ মেয়ে ও ছোট মেয়ে এবং হুমায়ুনের স্ত্রী মিলে পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যা করেছে। যেহেতু তারা তিন জনই ঐরাতে বাড়ীতে ছিল। ছোট মেয়ে সুমাইয়ার থানায় গিয়ে দায় স্বীকার করাও পরিকল্পনার একটি অংশ। যদি এই হত্যার প্রকৃত বিচার না হয় তাহলে সমাজ কলুষিত হয়ে যাবে। এলাকাবাসী এই হত্যার সাথে পরিবারের সদস্য সহ যারা সহযোগীতা করেছে তাদেরকে দ্রুত আটক করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান। হুমায়ুন কবিরের মৃত্যু সাত দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোন মামলা হয়নি।

এলাকাবাসীর মাঝে গুঞ্জন, দৌলতপুর থানা পুলিশের সাথে হত্যাকারী পরিবারের সদস্যদের সাথে রফা দফা হয়েছে। যার কারনে পুলিশ এই হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে গরিমসি করছে। বড় মেয়ে মরিয়ম খুলনা কোর্টে বাবার হত্যার বিচারের দাবিতে মামলা করতে গেলেও দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর নির্দেশে কোর্ট থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মামলা বাদীকে কোর্ট থেকে থানায় ডেকে এনে আটক করে রাখে।

জু/হা

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA