• E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

×

শিবির ক্যাডার থেকে আ’লীগ নেতা এক আকাশের তারা

  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪
  • ১১৪ পড়েছেন

# যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করে জমির ব্যবসায় লগ্নি।
# সিটি আউটার বাইপাস সড়কের দুই পাশেই দখলকরা জমিতে বিশ্বাস প্রোপার্টিজ’র সাইনবোর্ড।
# অপকর্মে শীর্ষে তারা হত্যা ও তারেক ধর্ষণ মামলার আসামি।
# ৫দিনের রিমান্ড শেষে তারা বিশ্বাসকে জেল হাজতে প্রেরণ।

কাজী অনিরুদ্ধ: খুলনা মহানগরীর বয়রা এলাকার মূর্তিমান আতংক তারা ও তারেক। সম্পর্কে তারা আপন দুই ভাই। নগরীর রূপসা সেতু থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে শিরোমনি এলাকা পর্যন্ত সিটি আউটার বাইপাস সড়কের দুই পাশে তাকালেই চোখে পড়বে বিশ্বাস প্রোপার্টিজ’ ও ‘নিউ বিশ্বাস প্রোপার্টিজ’ নামের প্যানা ও বিল বোর্ড। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এক সময়ের ছাত্র শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা আজগর আলী বিশ্বাস তারা ও তার ভাই তারেক বিশ্বাস।
গত ৬ জুলাই রাত পেঁৗনে ১০টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবি নিহত হন। রবি হত্যা হত্যা মামলায় তারেক বিশ্বাস তারা গ্রেফতার হন। তার আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে তারেক বিশ্বাস গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জামিনে আছেন। ফলে এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, নিযার্তন, জমি দখল করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
একসময়ে নগরীর রায়েরমহল এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান তারা। সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন শত শত একর জমি দখল করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই সহোদর। এক সময়ের শিবির ক্যাডার আজগর আলী বিশ্বাস তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে জেলা কমিটির সদস্য লাভ করেন। এখন আওয়ামী লীগের বড় ডোনার এবং নেতা হিসাবেই পরিচিত। তার সকল অপকর্ম আড়াল করতেই সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া ডুমুরিয়া উপজেলা নিবার্চনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতাও করেন। ওই নিবার্চনে লাখ লাখ টাকা খরচ করেও তৃতীয় হন।
জমি ব্যবসার আড়ালে নগরীর রূপসা, জিরোপয়েন্ট, বয়রা, রায়েরমহল, আড়ংঘাটা, দেয়ানা, ডুমুরিয়ার বিল পাবলা, চর হাসান খালি, কৈয়াসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী। এদের হাতে সাধারণ কৃষক, মৎস্য চাষী ও জমির মালিকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সন্ত্রাসীদের হুমকি—ধামকি, অত্যাচার, নির্যাতনের কারণে নিজের জমি—জায়গা ফেলে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। ভয়ে তারা জমির ধারে কাছেও যেতে পারেন না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে রয়েছে তার সু—সম্পর্ক। মন্ত্রী, এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে সেলফি তুলে তিনি নিজের ফেসবুকে ও অনুসারীদের মাঝে প্রচার করে ক্ষমতার দাপট দেখাতেন। তার হঠাৎ বিত্তবৈভব ও ক্ষমতার দাপটে এলাকাবাসী আতংকিত থাকতো।
যেভাবে উত্থান তারা বিশ্বাসের উত্থান: বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরীর রায়ের মহল হামিদ নগর এলাকার বাসিন্দা হারেজ বিশ্বাসের দুই ছেলে আজগর আলী বিশ্বাস তারা এবং তারেক বিশ্বাস। হারেজ বিশ্বাস ছিলেন একজন ফড়িয়া। গ্রাম থেকে ধান সংগ্রহ করে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। আর তারা ও তারেক দুই ভাই বয়রা, মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করতেন। স্থানীয় পিএমজি স্কুল ও রায়ের মহল স্কুলে লেখাপড়া করার সময় ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তারা বিশ্বাস। সরকারি বিএল কলেজে অনার্সে পড়ার সময় তিনি শিবিরের শীর্ষ নেতাদের নজরে আসেন। যে কারণে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ছিলো ঘনিষ্ট সম্পর্ক। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা— ৫ আসনে জামায়াত নেতার পক্ষ হয়ে প্রচার—প্রচারণা করেন বলে স্থানীয়রা জানান। ওই সময় একটি জীবন বীমা কোম্পানির মাঠ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। একই সময় হামিদ নগর এলাকায় উদয়ন সমবায় সমিতি নামে একটি সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি গঠন করে সভাপতি হন। অভিযোগ রয়েছে ওই সমিতির সদস্যদের সঞ্চয়ের ৪ লাখ টাকা ও বীমা কোম্পানির গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে খুলনা থেকে লাপাত্তা হন। জোট সরকারের বিদায়কালে তিনি ঢাকায় গিয়ে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
জনশ্রম্নতি রয়েছে যে— শিবিরের ক্যাডার থাকার কারণে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাসিঁর দন্ডাদেশ হওয়া জামায়াতের শীর্ষ নেতা মীর কাশেম আলির সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। ওই সময় মীর কাশেম আলীর কয়েক কোটি টাকা তারা বিশ্বাসের কাছে গচ্ছিত ছিল্ মীর কাশেম আলি গ্রেফতার হওয়ার পর ওই টাকা আর ফেরত দেননি তারা বিশ্বাস। জনশ্রম্নতি রয়েছে যে ওই টাকা নিয়ে তিনি খুলনা ফিরে এসে জমির দালালী শুরু করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে জমির দালাল থেকে পর্যায়ক্রমে আবাসন ব্যবসায়ীতে পরিণত হন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আর্শিবাদে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লুফে নেন জেলা কমিটির সদস্যপদ। আলোচনায় চলে আসতে শুরু করেন অভিনব প্রচার—প্রচারণার মাধ্যমে। যশোর থেকে শুরু করে খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ মহাসড়কের দুপাশে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে নিজের ছবি লাগিয়ে বড় বড় বিলবোর্ড ও প্যানা লাগিয়েছেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একজন ডোনার হিসেবে পরিচিত। বিগত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে হামিদ নগরের একটি স্কুলের পাশে সৈয়দপুর ট্রাস্টের জমিতে বিশ্বাস প্রোপার্টিজের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দখল করেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডেও তৎকালীন কাউন্সির আনিছুর রহমান বিশ্বাস দখলদার উচ্ছেদ করতে গেলে তারা বিশ্বাস প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হুংকার দিয়ে আলোচনায় আসেন। ক্যাডার হিসেবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তার নাম।
জমি দখলের অভিনব কৌশল: পূর্ববিল পাবলা এলাকার নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আজগর বিশ্বাস প্রতারণার মাধ্যমে ০.২৫ একর জমি ৫০ লাখ টাকা দাম ঠিক করে নিজের নামে পাওয়ার দলিল করে নেন। সে সময় তিনি বলেন, জমি বিক্রি করে তোমাকে টাকা দিয়ে দেব। কিন্তু তিনি প্লট আকারে জমি বিক্রি করলেও আজ পর্যন্ত আমার পাওনা টাকা দেননি। আমি টাকা ফেরত পেতে মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারীর নিকট লিখিত আবেদন করে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার পাইনি। প্রতারক তারা বিশ^াস এখন বলছে তোকে আমি চিনি না। জমির দাম পেতে ওই ভুক্তভোগেী কয়েকদিন আগে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। আরেক মৎস্য ঘের ব্যবসায়ি মোল্লা জিহাদুল ইসলাম বলেন, চক আসানখালী মৌজায় আর এস দাগ নম্বর—১২৮২ ও ১২৮০ নম্বর দাগের ঘেরটি দখল করে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দিয়ে আমার মৎস্য ঘেরের ভেতরে বালু ফেলে ৫ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায় তারা বিশ্বাস। এ ঘটনায় অভিযোগ দেওয়া হলে আদালতের নির্দেশে বালু ফেলা বন্ধ রয়েছে। একইভাবে আশা, আলমগীর ও বাবুর ২৮ শতক জমি দখল করে নিয়েছে তারা ও তারেক বিশ্বাস। এছাড়া বয়রার আতিয়ার দারোগার ছেলে মনিরের বাঁশতলা এলাকার ৫০ শতাংশ জমি এবং রেললাইনের পাশে জমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সাজ্জাদ মীরের কৈয়া রায়েরমহল সড়কের মাদ্রাসার পাশে, কালাম কমিশনারের রায়েরমহল বাজার এলাকার ৫ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন ভুমিদস্যু তারা। হ্যাচারি রোডের স্কুলের পাশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মল্লিকদের ফসলি জমিতে বালু ফেলে দখল করে নিয়েছেন তিনি।
রায়ের মহল হাজি সুলতান মোল্লার ছেলে জাহিদ মোল্লা বলেন, হাসান খালি মৌজার জমি সামনের জমি কিনে তারা বিশ্বাস পথ আটকে দিয়েছেন। পেছনে মালিকদের জমি যেতে না দিয়ে কম দামে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে । বয়রা শ্মশানঘাট এলাকায় মাসুম খানের পাঁচ শরিকের জমি কিনে আর তারা বিশ্বাস একজনের জমি কিনে সবার জমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মাসুম খান। তারা বিশ্বাসের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পায়নি পুলিশের সদস্যরাও। ২০১৯ সালে পুলিশের এস আই মজিদ তারা বিশ্বাসের কাছে জমি কিনে আজ বুঝে পায়নি। আমরা তাকে (তারা বিশ্বাস) ফোন দিলে রিসিপ করে কখন বলে আমি মন্ত্রী সামনে আছি কখন বলে শেখ বাড়িতে এমপি সাহেব সামনে এখন কথা বলার সময় নেই। তারা বিশ্বোসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছিন্নমূল কাচাঁমাল বিক্রেতা, পত্রিকার হকাররাও। রায়ের মহল মোস্তর মোড় এলাকার চর হাসানখালী মৌজায় আজিবর মোল্লা, সেলিনা খাতুন, শামিমা, ফরিদা, মাহমুদ হোসেন, আসমা বেগম, মনোয়ার, ফারুক হোসেন, জসিমসহ ১৫ জন ছিন্নমূল মানুষ ৮৬ শতক জমি কেনেন। রাতের আধারে সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাদের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে জমি দখলে নেয়। পত্রিকা হকার আজিবর মোল্লা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই, অনেক কষ্ট করে এই জমিটি কিনেছি। ভেবেছিলাম আমাদের মাথাগোজাঁর ঠাই হবে। এখন আমাদেও নামে একটি মিথ্য মামলা দিয়ে জোড়পূর্বক জমি দখল করে নিয়েছে। ডুমুরিয়া ভূমি অফিস সূত্র জানায়, পূর্ব বিল পাবলার প্রাইমারী স্কুলের পাশে খাল দখল করে সাইন বোর্ড টাঙিয়েছেন বিশ^াস প্রোপার্টিস ও রউফ ঢালি। এভাবে বিশ্বাস প্রোপাটির জমি কিনে পথে বসেছে শত শত মানুষ। জীবনের নিরাপত্তা কারনে সব কিছু হারিয়ে অনেকেই কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে রয়েছে তার সু—সম্পর্ক। মন্ত্রী, এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে সেলফি তুলে তিনি নিজের ফেসবুকে ও অনুসারীদের মাঝে প্রচার করে ক্ষমতার দাপট দেখান। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভূমি (জমি) ব্যবসার আড়ালে নগরীর রূপসা, জিরোপয়েন্ট, বয়রা, রায়েরমহল, আড়ংঘাটা, দেয়ানা, ডুমুরিয়ার বিল পাবলা, চর হাসান খালি, কৈয়াসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী।
বাহিনী প্রধান মাইদুল: ভুক্তভোগেীদের অভিযোগ, তারা বিশ^াস ও তার জমি দখলের বাহিনী প্রধান মাইদুল। রাস্তার পাশে এক খন্ড জমি কিনে বালু ফেলে পেছনের জমি মালিকদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়ে কমদামে জমি বিক্রি করাতে বাধ্য করে। প্রতিবাদ করলে এবং কোনো কৃষক জমি দিতে না চাইলে তার বাহিনী প্রধান মাইদুলের নেতৃত্বে নির্যাতন এবং জোরপূর্বক জমি দখল করে নেয়। অভিযোগ রয়েছে বেসরকারী নর্দার্ন বিজনেস অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইউনির্ভাসিটির নির্মাণাধীন ভবনের পথ আটকিয়ে বন্ধ করে দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছিলো তারা। তবে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের হস্তক্ষেপে সে যাত্রা রক্ষা পায় ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে রূপসা, জিরোপয়েন্ট, বয়রা, রায়েরমহল, আড়ংঘাটা, দেয়ানা, ডুমুরিয়ার বিল পাবলা, চর হাসান খালি, কৈয়াসহ আশপাশের এলাকায় একসময় প্রচুর পরিমাণে ধান ও মাছ চাষ হতো। খুলনা শহর ও আশপাশের এলাকার মানুষ এ অঞ্চলের মাছ, ধান ও সবজির উপর নির্ভরশীল ছিলো। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সেই ধান ক্ষেত ও মৎস্য খামার আর নেই। সেখানে ধ’ ধু বালুর মাঠ। সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন শত শত বিঘা জমি দখল করে বিশ্বাস প্রেপাটিজের নামে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীদের সরকারি খাল দখলের কারণে শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে জবাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কৃষি ও জলা ভূমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, মৎস্য ঘের ও কৃষিজমি ভরাট করে যারা আবাসন বাণিজ্য করছে সে যতই প্রভাবশালী হোন না কেন— তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারী কেলেংকারীতে দুই ভাই: সম্প্রতি দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে তারার ভাই তারেক গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুই ভাইয়ের নারী কেলেংকারীর ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নগরীর একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারেকের দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিলি। তিনি ছিলেন এক কাস্টমস অফিসারের স্ত্রী। তাকে ফাঁদে ফেলে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন তারেক। ঘটনার এক মাস পর গত ২৫ মার্চ খুলনার আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন নিহতের মা সেলিনা বেগম। এতে তারেক ও তার প্রথম স্ত্রী নাসিমাসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে তারা বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রী সনিয়া মান্নান তন্বি ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। হতদরিদ্য পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। প্রথম স্ত্রী বেচেঁ থাকা অবস্থায় তারই বান্ধবী নাইরার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয় পরেন তারা বিশ্বাস। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ওই বান্ধবীকে আগের ঘরের সন্তানসহ বিয়ে করেছেন তিনি।
এদিকে তারা বিশ্বাস গ্রেফতার হওয়ার আগে তার কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কারো জমি জোর করে দখল করিনি। যারা জমি বিক্রি করতে আসছে তাই কিনতে পারছি না, জোর করে দখল করবো কেন। জলাশয় ভরাট প্রসঙ্গে বলেন, আমি কোনো সরকারি জমি ভরাট ও দখল করিনি। তবে ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি কিনে ব্যবসার জন্য ভরাট করছি। এ ক্ষেত্রে কারো আপত্তি থাকার কথা না। এছাড়া আমার সম্পর্কে অন্য যেসব অভিযোগ শুনছেন তা ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি আমাদের কাছে জমাজমি সম্পর্কিত তারা বিশ^াসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলো। পরবর্তী ওই বিষয়টি সমাধান হয়েছে বলে অভিযোগকারী জানিয়েছে। তারা বিশ্বাস ছাত্র শিবির থেকে অনুপ্রবেশকারী কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে এ অভিযোগটি আমিও শুনেছিলাম। কিন্তু বিএল কলেজে খেঁাজ নিয়ে জানতে পারি অভিযোগ সঠিক না।
আনিস বিশ্বাসকে হারিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে তারা বিশ্বাসের উল্লাস ঃ নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সির আনিছুর রহমান বিশ্বাস দখলদার উচ্ছেদ করতে গেলে তারা বিশ্বাস প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হুংকার দিয়েছিলেন তারা বিশ্বাস। ওই ঘটনার পর থেকে তারা বিশ্বাস ও আনিস বিশ্বাসের মধ্যে কোন্দল চরম আকার ধারণ করে। অভিযোগ রয়েছে এই দ্বন্দের কারণে তারা বিশ্বাস বিগত সিটি করপোরেশন নিবার্চনে আনিস বিশ্বাসের  বিপক্ষে কাজ করেন এবং কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢেলে আনিসকে হারিয়ে দেন। আনিস বিশ্বাস পরাজিত হলে ওইদিন রাতেই দুধ দিয়ে গোসল করে উল্লাস করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে ভাইরাল হয়েছিল তারা বিশ্বাস।
তারা বিশ্বাসকে বাঁচাতে প্যারিসের দৌড়—ঝাঁপ: ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি হত্যা মামলা গ্রেফতার হওয়া তারা বিশ্বাসকে এ মামলা থেকে রক্ষা করতে প্যারিস নামের এক যুবক পুলিশ প্রশাসন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার দ্বারে দ্বারে এমনকি মিডিয়া ম্যানেজ প্রজেক্ট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রবি চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডের দুইদিন আগে একই গাড়িতে তারা ও প্যারিসকে গভীর রাতে ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া ও কৈয়া বাজার এলাকায় দেখা গেছে। তারা অনুসারীরা প্রচার চালাচ্ছে প্যারিস ভাই সবকিছু দেখাশোনা করছে। কিছুদিনের মধ্যে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবে তারা ভাই।
তারা বিশ্বাসকে জেল হাজতে প্রেরণ ঃ গত ৬ জুলাই রাত পেঁৗনে ১০টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবি দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। রাত পেঁৗনে ১০টার দিকে তিনি খুলনা—সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় নামকস্থানে পেঁৗছালে দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে পেছন দিক থেকে ৫ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এলাকায় প্রভাব বিস্তার, রাজনৈতিক কোন্দল এবং ইউপি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনের বিরোধকে কেন্দ্র করে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। এ ঘটনার একদিন পর নিহত ইউপি চেয়ারম্যান রবির স্ত্রী শায়লা ইরিন বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭—৮জনকে আসামি করে ডুমুরিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, আসামি আজগর বিশ্বাস তারার নির্দেশ ও অর্থায়নে এবং উবাঈদ উল্লাহ ও তার ভাই ওয়ালী উল্লাহ অলির মদদে অজ্ঞাতনামা ৭—৮জন আসামি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গুলি করে হত্যা করে’। এ ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আজগর বিশ্বাস তারাসহ তিনজন রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। গতকাল রোববার ৫ দিন রিমান্ড শেষ হলে আদালত তারা বিশ্বাসসহ গ্রেফতারকৃতদেও জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA