• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন

×

শোকাবহ আগস্টের চতুর্থ দিন আজ

  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ৫২ পড়েছেন

মোঃ জিলহাজ হাওলাদারঃ

যার মাথাতে বীরের মুকুট/ সে কি কভু থামে? মুষ্ঠি-তোলা শপথ আছে/ শেখ মুজিবের নামে।।হাজার বছর টিকে আছি/ সঙ্কটে সংগ্রামে, সামনে বিশাল মহাসড়ক/ শেখ মুজিবের নামে।

বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে শোকাবহ আগস্ট। বাংলা ও বাঙালির শোকের মাস আগস্টের চতুর্থ দিন আজ। বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে বহু জনপ্রিয় নেতার জন্ম হয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, জনপ্রিয়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশ শীর্ষে রয়েছেন। এর অনেকগুলো যুক্তিকতা রয়েছে; এর মধ্যে “সত্তরের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার শতকরা ৯০ ভাগের বেশি ভোটার বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দিয়েছেন। সামরিক সরকার ক্ষমতায় বহাল থাকা অবস্থায় একাত্তরের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ বিরোধীদলীয় নেতা শেখ মুজিবের নির্দেশে এ দেশ পরিচালিত হয়েছে। ২/৪ জন ছাড়া এদেশের প্রায় সবাই মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। শত্রুর কারাগারে বন্দি থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধের ৯ মাসে তার নামেই স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে এবং তার নামেই মুক্তিযোদ্ধারা হাসতে হাসতে জীবন উৎসর্গ করেছেন।” ৭৫’র ১৫ আগস্ট ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ঘাতক মেজর ডালিম ভোর ৬টার দিকে বেতার ঘোষণায় জানায়, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে এবং খোন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। সকাল প্রায় ৮টায় খোন্দকার মোশতাক বেতারে প্রদত্ত ভাষণে বলেন- “তার উপর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।” জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের লাশ ধানমন্ডির বাড়িতে পড়ে থাকে। হত্যাকাণ্ডের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য বাদে প্রায় সবাই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান এবং বিডিআর, পুলিশ, রক্ষী বাহিনী প্রধানরা পৃথকভাবে বেতারে খুনি সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর বিশাল দল, লাখো নেতাকর্মী, সরকার, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিডিআর সবাই ছিলেন। সবাই থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব ইতিহাসের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রতিবাদ হয়নি। ক্ষমতা দখলকারী খোন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর প্রায় চার দশকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু তাকে মাফ করে দিয়ে মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেন।

বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে ঘাতক মোশতাক কত সুবিধা নিয়েছে, তার একটি উদাহরণ হলো- বিখ্যাত ব্যাংকার খায়রুল কবীর ছিলেন খোন্দকার মোশতাকের হোস্টেল-মেট। তিনি বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠজনদের একজন। লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক আবদুল মতিনের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : মুক্তিযুদ্ধের পর’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ১৫২) খায়রুল কবীর স্মৃতিচারণে বলেছেন- “খোন্দকার মোশতাকের প্রতি বঙ্গবন্ধুর একটা দুর্বলতা ছিল। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বঙ্গবন্ধু খায়রুল কবীরকে টেলিফোন করে বলেছিলেন, ‘ মোশতাকের কিছু টাকা দরকার’; বিশ হাজার টাকা তাকে ধার দিবেন।’ যথাসময়ে মোশতাক কবীর সাহেবের সঙ্গে দেখা করেন। কবীর সাহেব তাকে বলেন, ‘তুমি নিজে না এসে বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে টেলিফোন করিয়েছ কেন?’ মোশতাক বলেন, ‘টাকা না হলে আমার বউ এর চিকিৎসা হবে না।’ তার স্ত্রীকে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়েছিল। খায়রুল কবীর বলেন, ‘তাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। ব্যাংকের টাকা দেইনি। কারণ সে ব্যাংকের টাকা ফেরৎ দিবে না।” হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী ও মন্ত্রীদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাই ঘাতক সরকারের মন্ত্রী হন। সেনাবাহিনী প্রধান কে এম সফিউল্লাহ ও উপপ্রধান জিয়াউর রহমান দু’জনকেই বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটি প্রমোশন দিয়ে মেজর থেকে মেজর জেনারেল বানিয়ে সেনাপ্রধান ও উপপ্রধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান সফিউল্লাহর বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে অদ্যাবধি কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া না গেলেও হত্যাকাণ্ডের পর কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হননি। অবশ্য তিনি গত সাড়ে চার দশকে বিভিন্নভাবে বলার চেষ্টা করেছেন- তার পদস্থ সহকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন আবার কেউবা প্রতিরোধের ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করেনি। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যার ১০ দিনের মাথায় সফিউল্লাহকে সরিয়েও দেয়া হয়। এটা এখন প্রমাণিত সত্য যে, “সে সময়ের সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। খুনিদের সঙ্গে সহযোগিতার পুরস্কার হিসেবে ১৫ আগস্টের ৯ দিন পরই জিয়াকে সেনাপ্রধান করা হয়। এর পর জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতিসহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন এই জিয়াউর রহমান। সেনাবাহিনীর তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের ভূমিকাও স্বচ্ছ ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর ঘাতক চক্রকে এই খালেদ মোশাররফ ট্যাঙ্কের গোলা সরবরাহ করেন।উল্লেখ্য, গোলা-বারুদ ছাড়াই খালি ট্যাঙ্ক নিয়ে ঘাতকরা ১৫ আগস্টের নির্মম ট্র্যাজেডি ঘটায়। সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করলেও তিন বাহিনীপ্রধান অর্থাৎ সমগ্র সেনাবাহিনী, শেষ পর্যন্ত ঘাতক চক্রকে সমর্থন করে। বঙ্গবন্ধু হত্যায় স্বাধীনতাবিরোধী চক্র খুবই উল্লসিত হয়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রবীণ জননেতা মওলানা ভাসানী সর্বাগ্রে ঘাতক মোশতাক সরকারকে সমর্থন দেন। তথাকথিত রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরিত তারবার্তায় নতুন সরকারের প্রতি অভিনন্দন ও তার পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান। মওলানা এই পরিবর্তনকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করে দেশ হতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অবিচার দূর করার আহ্বান জানান। ৭৫’র ১৫ই আগস্টের বর্বরচিত নৃশংস হত্যা কান্ডের বর্ণনা দিয়ে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, ’৭১-এর পরাজিত দেশী বিদেশী শত্রুরা এক হয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিলো। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলো এদেশের মানুষকে গোলাম আর মাটিকে তাদের চারণভূমি বানানোর জন্যে। ওই সকল চক্রান্তকারীরা জানতো বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে কখনও তাদের ওই দুরভিসন্ধি সফল হবে না। সে কারনেই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার নানা পরিকল্পনার ছক এঁকেছিলো। সেই ছকে খুনি খন্দকার মোস্তাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুরসহ কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যরা পা রেখে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। তিনি বলেন, শত্রুরা শুধু একজন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে নাই। তারা এদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তারা এদেশের উন্নয়নকে হত্যা করেছে, তারা এদেশের মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে।

তারা এদেশের মানুষে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা জানে না যে, জীবিত শেখ মুজিবের থেকে মৃত শেখ মুজিব বহুগুন শক্তিশালী। তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত তাদেরই যোগ্য উত্তরসুরি হয়ে দেশে আজ অগ্নিসন্ত্রাস এবং লাশের রাজনীতি শুরু করেছে। এদেশের আর ৭৫ সাল হতে দেয়া হবে না। এবার বাঙালি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে- তারা ওই সকল উন্নয়ন বিমুখ রাজনৈতিক দলকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সবাইকে শোকাবহ আগস্টে শোককে শক্তিতে পরিণত করে, সকল অভিমান ভূলে; শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে দেশী বিদেশি চক্রান্ত আর বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য রুখে দাঁড়াবার আহবান জানান তিনি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA