ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন হওয়ার পর পরই দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দরে অবস্থিত মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরা গাঁ ঢাকা দিয়ে আছেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ও সমর্থক। তারা কোথায় তা জানেন না পৌরসভার কর্মকর্তারা। এ এলাকায় ছাত্র আন্দোলন হয়নি, তারপরও একটি রাজনৈতিক সরকারের বিদায়ের সাথে সাথেই দায়িত্ব ছেড়ে কেন পলায়ন করলেন তা নিয়ে স্থানীয়রা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। একই সাথে তাদের ভোগান্তির কথাও জানান।
এদিকে গত ৫আগষ্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করার পর মোংলা পোর্ট পৌরসভায় মুল ফটকে হামলা চালায় বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। ওই সময় পৌরসভায় স্থাপনকৃত শেখ মুজিবের দুইটি প্রতিকৃতি ভেঙ্গে ফেলেন তারা। হামলা হয়েছে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের বাস ভবনেও।
সরেজমিনে রবিবার (১১আগষ্ট) পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, জনশূন্য পৌরসভায় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি। নাগরিকদের আগের মতো আনাগোনা নেই। এদিন কর সংগ্রহ, নাগরিক সনদপত্র প্রদাণ, ট্রেড লাইসেন্স ও জন্ম-মৃত্যু সনদসহ দৈনিন্দন কার্যক্রমে বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় সেবা গ্রহীতারা অনেকেই ফিরে গেছেন। এ অবস্থায় পৌরসভার হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়র-কাউন্সিলরা না থাকায় অসুবিধাতো হচ্ছেই। তবে এই মুহুর্তে আর কিছু বলা যাবেনা।
জানতে চাইলে, এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা অমল কৃষ্ণ সাহা বলেন, মেয়র-কাউন্সিলরা কোথায় আছেন জানিনা। আপনারা সবই জানেন, দেখছেন। এই মুহুর্তে কিছু বলা যাবেনা।
এদিকে পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যানজট দূর করতে নৌ স্কাউটসের স্বেচ্ছাসেবক কর্মিরা নিরলসভাবে কাজ করলেও বিভিন্ন সড়কে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার না করায় শহরের অলিগলিতে জমেছে ময়লার স্তুপ। পৌরসভার কর্মচারীদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে জানান পৌরসভার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ লিয়াকত হোসেন বলেন, মেয়র-কাউন্সিলরা পৌরসভায় থাকলে কর্মচারীরা ঠিকই ময়লা পরিস্কার করতো। এছাড়া কাউন্সিলরা এলাকাতে না থাকা ও ফোন বন্ধ থাকায় নাগরিক সনদপত্র নিতে পারছেন না তারা।
নাগরিক সনদপত্র নিতে পারছেন না উল্লেখ করে পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, তারা কি এমন করেছেন যে তাদের পালিয়ে থাকতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর শহরের একাধিক ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, মোংলায় গত পৌরসভার নির্বাচন যেভাবে হয়েছে তা ন্যাক্কারজনক। পৌরসভা সৃষ্টির পর এমন নির্বাচন দেখেননি তারা। কেউকে ভোট দিতে দেয়নি এই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। জোর জুলুম ও ভোট কেটে তারা নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সরকার পতনের পর পরই তারা পালিয়েছেন। এছাড়া তারা নানাভাবে দুর্নীতি ও লুটপাট করেছেন, সেজন্য তারা আসলেই সংক্ষুব্ধদের হাতে অপদস্ত হতে পারেন এমন শঙ্কায় পৌরসভায় কেউ আসছেন না বলেও জানান তারা।