• E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১০ পূর্বাহ্ন

×

বিগত সরকারের অবৈধ কাজের জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে- মো: ফয়জুল করীম

  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪
  • ২৮ পড়েছেন
খবর বিজ্ঞপ্তিঃ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই জুলাই বিপ্লব এবং ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন,আহত হয়েছেন প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা ও সহমর্মিতা জানিয়ে বলেছেন, জাতির এই গৌরবম-িত আন্দোলনে যারা যেভাবেই অংশ নিয়েছেন তাদের অবদানের কথা কোনো দিন ভুলবে না। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গত ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব নোভেল জয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।
ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ধারাবাহিক ভূমিকা পালনকারী এবং ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ ও জনগণের কল্যাণে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি এবং অর্থনীতি পুনর্গঠনে আমরা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করে যেতে চাই। সে ক্ষেত্রে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে দেশের শান্তিকামী জনগণ এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুর ১২টায় পুরানা পল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকারের পতন পরবর্তী দেশের চলমান পরিস্থিতি এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কার্যক্রম বিষয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের  যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, সহকারি মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ষক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাক মুফতী এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইয়াকুব আলী, অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, জিএম রুহুল আমিন, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, হাফেজ মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস গত ১৮ আগস্ট বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে বলেছেন,পাঁচটি খাতে সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম এই পাঁচটি ক্ষেত্রে আমূল এবং ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
আমরাও মনে করি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। কারণ, বিগত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রতিষ্ঠানগুলো কতদিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবে তা নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে,অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরণ ও প্রক্রিয়া কি হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।
জুলাই বিপ্লব এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরসরকারের পেটোয়া বাহিনী পুলিশ, বিজিবি এবং আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, ছাত্র লীগের নৃশংস আক্রমণে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা শাহাদাত বরন করেছেন। প্রায় ৩০ হাজার আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন কয়েক হাজার যাদের মধ্যে অনেক শিশু-কিশোরও রয়েছে। যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো সঠিক চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছেন। আমরা ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করে এমন দুঃসহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি।
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দিয়েছিল আন্দোলনে আহতদের সরকারী খরচে চিকিৎসা দেয়া হবে। কিন্তু আমরা এর দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। আমরা সরকারের প্রতি আহতদের দ্রুত চিকিৎসার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
পতিত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ৩টি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন করেছে। এসব একতরফা, ভুয়া, পাতানো ও ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করেছে। যারা তাদের এসব অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচনে সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে তারাও সমান অপরাধী। ৩টি অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনাকারী ৩টি নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা তাদের অবৈধ কাজেরকুশিলব ছিল, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ নির্বাচনের সাহস না করে। পাশাপাশি আমরা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিদায় পূর্বক বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চাই।
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর ও নৃশংস আওয়ামী দুঃশাসন উৎখাতের সংগ্রামের সূচনা করেছে আমাদের গর্ব শিক্ষার্থী সমাজ। তাদের অসীম সাহস, ত্যাগ ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব জাতিকে গর্বিত করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছে। গত ১৯ জুলাই আমরা পরিস্কার করে জানিয়েছি যে, সরকারের পদত্যাগই একমাত্র সমাধান। শুরু থেকেই নানা মাত্রায় ও নানা ধরণে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সেজন্য আমরা গর্ব বোধ করি যে, নৃশংস এক জালিমের পতনের মহান বিপ্লবে আমরা ভূমিকা রাখতে পেরেছি। আমাদেরও অনেক ভাই জীবন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠনের সারা দেশে মোট শাহাদাত বরণ করেছেন ১৮ জন। আহত হয়েছেন সহ¯্রাধীক। এর মধ্যে গুরুতর আহত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৫০ জনেরও অধিক।
স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। এখন সময় দেশ গড়ার। এখন সময় সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণের। তবে এই যুগ সন্ধিক্ষণে আমাদেরকে দেশের শত্রু এবং জণগণের শত্রুদের চিহ্নিত করে জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। গণদুশমন, গণহত্যাকারী, লুটেরা, দুর্নীতিবাজ আর ভোট চোরেরা যাতে আগামীতে পূণর্বাসিত হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
এতে কতিপয় দাবি পেশ করা হয়, গ্রহনযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইবুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে, একই সাথে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে, এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
তদন্ত সাপেক্ষে বিগত বছরের সকল দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিগত বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগোষ্ঠির চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে।আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গ্রাম পুলিশকে জাতীয়করণ করে তাদের সম্মানজনক বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন হত্যা, লুটতরাজ ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের বিরুদ্ধে ছিলো। শিল্প ও কল-কারখানা ধ্বংসের বিরুদ্ধে ছিলো না, ছিল না সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ।
সেজন্য আমরা বিশ্বাস করি, যারা লুটতরাজ, দখলদারী-অরাজকতা ও সংখ্যালঘুদের উপর কোন রকম হুমকি সৃষ্টিকারী কার্যকলাপে লিপ্ত, তারা এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত কেউ না বরং তারা সুযোগ সন্ধানী। সুতরাং আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই সকল অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান করছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, দেশের সকল নাগরিক সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রাপ্ত। ধর্মের কারণে কাউকে আঘাত করা বা কাউকে প্রতিপক্ষ বানানোকে ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় আইনও সমর্থন করে না। আমাদের আন্দোলনের চেতনাও তা সমর্থন করে না। সেজন্য বলবো, দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতিটি উপসানালয়ে ও ধর্মীয় স্থাপনায় সিসি ক্যামেরারব্যবস্থা করুন।
কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, ২১ থেকে ৩১ আগস্ট দেশের সকল জেলা-মহানগরে তৃণমূল দায়িত্বশীল সম্মেলন। ১ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর দেশের সকল থানায় থানায় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA