• E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

×

পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত; সংকটের শঙ্কা

  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ২৭ পড়েছেন

দেশ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:

ঢাকা কা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্লাবিত হওয়ার কারণে চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান আসা কমে গেছে। চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৯টি ডিপোতে কাভার্ড ভ্যানে রপ্তানি পণ্য আসা এক দিনের ব্যবধানে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত কোনো কোনো অংশ প্লাবিত হয়ে যান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। তাতে মহাসড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় পণ্য আনা–নেওয়া কমে গেছে।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির হিসাবে, গত বুধবার সকাল আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়ি এসেছে ৩ হাজার ১৮৮টি। সেখানে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ি এসেছে ২ হাজার ৬০টি।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশই ব্যবস্থাপনা করে চট্টগ্রামের বেসরকারি ডিপোগুলো। রপ্তানিকারকেরা কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে পণ্য এনে ডিপোর ছাউনিতে রাখেন। সেখানে কাস্টমসের শুল্কায়নপ্রক্রিয়া শেষে এসব পণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য বন্দর থেকে ডিপোতে এনে খালাস করা হয়।

জানতে চাইলে কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে সড়কপথে পণ্য আনা–নেওয়া কমে গেছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার—এই দুই দিনের হিসাবে, পণ্য পরিবহনকারী গাড়ির সংখ্যা এক হাজারের বেশি কমেছে।

এদিকে পরিবহনে অনিশ্চয়তার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকারকদের পণ্য ছাড় করাও কমিয়ে দিয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই যান চলাচল বন্ধ। সে জন্য গত দুই দিন কোনো পণ্যবাহী ট্রাক চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠাতে পারিনি। অবস্থা এতটা জটিল যে ফেনীতে ত্রাণ পাঠানোর জন্যও ট্রাকমালিকদের রাজি করানো যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত তিন দফায় পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলো। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা নতুন করে সংকটে পড়বেন।

সড়ক প্লাবিত, দীর্ঘ যানজট :

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনও কার্যত ভেঙে পড়েছে। গতকাল থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী শত শত গাড়ি আটকে পড়েছে। ফলে চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য নিয়ে যেতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় লাগছে। সাধারণত কাভার্ড ভ্যান, লরি, ট্রাকসহ বিভিন্ন ছোট-বড় যানবাহনে করে আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া কনটেইনারের ৯৬ শতাংশই ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করে আনা-নেওয়া করা হয়। বাকি ৩ শতাংশ রেলপথে ও ১ শতাংশের কম নৌপথে পরিবহন হয়। সড়কের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে রেলপথও ডুবে গেছে। ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বন্দর থেকে রেলপথে গত দুদিনে কোনো পণ্য পরিবহন হয়নি।

পরিবহন মালিক সমিতিগুলো বলছে, চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহন করে এমন পরিবহনের সংখ্যা তিন লাখের মতো। এর মধ্যে কিছু পরিবহন কনটেইনার ডিপোগুলোতে পণ্য নিয়ে আটকে আছে। আর কিছু গাড়ি আটকে আছে সড়কে। গত বৃহস্পতিবার অন্তত এক হাজার গাড়ি সড়কে আটকা পড়েছিল। তবে পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় এর মধ্যে কিছু পণ্যবাহী গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছেছে। তা সত্ত্বেও গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কয়েক শ গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আটকে ছিল।

চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ফেনীর লালপোল থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত সড়ক প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে পানি কিছুটা কমতে থাকায় আটকে থাকা গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছেছে। তবে পণ্য পরিবহনে বেশি সময় লাগছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার থেকে মহাসড়কে বিভিন্ন অংশে পানি আবার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আন্তজেলা মালামাল ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সহসভাপতি এ কে এম নবীউল হক। তিনি বলেন, পানি না কমলে ঝুঁকি নিয়ে কেউ পণ্য পরিবহন করবে না।

প্রভাব চট্টগ্রামের আশপাশেও :

বন্যার কারণে চট্টগ্রামের আশপাশের উপজেলাগুলোতেও ভোগ্যপণ্য পরিবহনে সংকট তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামের রাউজান, ফটিকছড়ি ও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি বন্যাকবলিত হওয়ায় এসব স্থানে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। এ ছাড়া কিছু সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় বেগ পেতে হতে হচ্ছে চালকদের।

জানা গেছে, বন্যার কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও ফটিকছড়ি-রামগড় সড়ক প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন অংশে হাঁটু সমান পানি। ফলে পণ্যবাহী যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করেছে। এ ছাড়া ফটিকছড়ি-রামগড় সড়কে শুক্রবার যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। কারণ, এদিন সকালেও এই সড়কে হাঁটুপানি ছিল।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান অ্যান্ড মিনিট্রাক মালিক গ্রুপের সহসভাপতি মো. এমদাদুল হক বলেন, বন্যার কারণে জেলার অভ্যন্তরে অনেক স্থানে পণ্য পরিবহনেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। খাগড়াছড়ির দিকে অনেক পরিবহন আটকা পড়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সময় লাগছে পণ্য পাঠাতে। অনেকেই পরিস্থিতির কারণে পণ্য পাঠাতে পারছেন না।

পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও। খাতুনগঞ্জে আমদানিনির্ভর অধিকাংশ পণ্যই আসে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে। হিলি, ভোমরা, সোনামসজিদসহ স্থলবন্দর থেকে এ বাজারে পণ্য আসে। এ ছাড়া কিছু আমদানি পণ্য আসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মঙ্গলবার স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আসা পণ্যবাহী গাড়ি বুধবার বাজারে এসে পৌঁছেছে। তা–ও হাতে গোনা কয়েকটি। বৃহস্পতিবার বাজারে নতুন কোনো পণ্যবাহী গাড়ি আসেনি। এদিকে ত্রাণসামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার এ বাজারে বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে। ফলে কয়েক দিন পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হলে সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদশ বলেন, বুধবার হিলি, ভোমরা, বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে যেসব গাড়ি রওনা হয়েছিল, সেগুলো গতকাল পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি। এদিকে ত্রাণের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে কিছু পণ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA