• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন

×

খুলনায় ৩ বছরে ৯ তদারকি কর্মকর্তাকে ডিলারদের মারপিট

  • প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৫৬ পড়েছেন

# ওএমএস র্কমসূচীতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা 

# হয়রানির বিচার ও শাস্তি হয়নি

# ভয়ে তদারকি কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম

মোঃ শহীদুল হাসান :

খুলনায় সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে খাদ্য বিক্রির তদারকি কর্মকর্তাদের উপর ডিলার ও তাদের সহযোগীদের হামলা, মারপিট ও হয়রানির ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত তিন বছরে মহানগরীতে ওএমএস ডিলার ও তাদের সহযোগীদের হাতে ৯ জন তদারকি কর্মকর্তা মারপিট ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।এতে ওএমএস কর্মসূচীর খাদ্য বিক্রি কার্যক্রম তদারকিতে কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ভীতিকর অবস্থা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় প্রভাবে ওএমএস ডিলার নিয়োগ পাওয়ায় এসব ডিলাররা রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে তদারকি কর্মকর্তাদের উপর হামলা, মারপিটসহ নানাবিধ অত্যাচার-র্নিযাতন করে যাচ্ছেন। সরকার পরিবর্তনের পরও এসব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ওএমএস ডিলারদের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলে খুলনায় সরকারের অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য বান্ধব ওএমএস র্কমসূচীতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।  

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ গত ২৭ এপ্রিল বরাদ্ধকৃত চাউল ও আটা অর্ধেক পরিমান দোকানে না আনার প্রতিবাদ করায় খাদ্য পরিদর্শক নাজমুল হাসানকে মারপিট করেন ওএমএস ডিলার মেসার্স প্যারাডাইস অ্যান্ড কোম্পানির মালিক। বানরগাতী ডলফিন মোড়ে এ মারপিটের ঘটনায় ২৮ এপ্রিল মামলাও করেন পরিদর্শক নাজমুল হাসান। পরে এ মারপিটের ঘটনায় বিচার ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনসহ আন্দোলন করেন খাদ্য পরিদর্শক সমিতি। খুলনা বিভাগসহ সারা দেশে মারপিটের ঘটনার বিচার ও শাস্তির দাবীতে উত্তাল হয়ে ওঠে খাদ্য পরিদর্শকরা। খাদ্য দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিচার ও শাস্তির আশ্বাস দিলেও সরকার পরিবর্তনের পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এরআগে নিরাপত্তা প্রহরী হারান চন্দ্র বিশ্বাসকে ২০২২ সালের ৫ মার্চ বিগত সরকার দলীয় যুব নেতা পরিচয়ে মারপিট করে ওএমএস ডিলার আর.এম. এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদা খাতুনের স্বামী। এ ঘটনায় পরের দিন ৬ মার্চ লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও এ মারপিটের কোন বিচার হয়নি। এছাড়াও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় খাদ্য পরিদর্শক কাজল রহমানকেও মারপিট করেছিলেন একই ওএমএস ডিলারের স্বামী।

এছাড়া খাদ্য বিক্রয় কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অফিসার শেখ মিজানুর রহমান ও তদারকি অফিসার সাইফুল ইসলামকে দুই দফায় মারপিট করে ওএমএস ডিলার মেসার্স ইয়ার আলী এন্ড সন্সের মালিক হাফিজুর রহমান মিরাজ ও তার সহযোগীরা। একই সময়ে ওএমএসের খাদ্য বিক্রয় তদারকি অফিসার মাহমুদুল হাসানকে মারপিট করেন খালিশপুরের একজন নারী ওএমএস ডিলার।

এদিকে, ২০২৩ সালে ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাতে ওএমএসের খাদ্য বিক্রির তদারকির দায়িত্বে থাকা এক অফিসার মারপিটের শিকার হন। একই সালে খাদ্য পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম ও খাদ্য পরিদর্শক বায়েজিদ পৃথক ঘটনায় তদারকির দায়িত্ব পালনের সময় ওএমএস ডিলারের হাতে মারপিটের শিকার হন।

খাদ্য পরিদর্শক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আশরাফুজ্জামান জানান, সরকারের খাদ্য বান্ধন কর্মসূচীর অন্যতম ওএমএস কার্যক্রমের জন্য খাদ্য পরিদর্শকবৃন্দ খুবই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকেন। অনেক পরিদর্শককে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তারপরেও ওএমএস ডিলার, স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত তদারকি কাজে বাঁধা, হামলার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু খাদ্য পরিদর্শকরা কোন প্রতিকার ও সুষ্ঠ বিচার পাচ্ছেন না। এজন্য ঝুঁকি ও হুমকির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। খাদ্য পরিদর্শকরা হামলা ও মারপিটের কারণে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ওএমএস কার্যক্রমের তদারকি হুমকির মুখে পড়েছে। এতে ওএমএস কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি করছে ওএমএস ডিলাররা। এই অবস্থা চলতে থাকলে খুলনায় সরকারের এ কর্মসূচী ব্যথর্তায় পরিণত হবে। দ্রুত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিচার, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগকৃত ডিলারদের বাতিলের দাবী জানান তিনি।

একাধিক ওএমএস ডিলার ও নাগরিক সমাজের একাধিক প্রতিনিধি জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলীয় নেতা পরিচয় দিয়ে নিয়োগ পাওয়া ওএমএস ডিলাররা বিভিন্ন সময়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য পরিদর্শকসহ খাদ্য বিভাগের অফিসার ও কর্মচারীদের হুমকি-ধামকি, মারপিট ও লাঞ্ছিত করে চলেছেন। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না খাদ্য বিভাগ। যে কারনে খাদ্য বিক্রয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এসব ঘটনার বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করে ওএমএস কর্মসূচীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ পাওয়া সকল ডিলারদের ডিলারশীপ বাতিল করা উচিত।

খুলনা ওএমএস ডিলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, ওএমএস খাদ্য কর্মসূচির তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্তদের উপর হামলা, মারপিট ও লাঞ্ছিত করার ঘটনা নিন্দনীয়। এসব ঘটনা তারা সমর্থন করেন না। ওএমএস কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে যারা এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ করেছেন তাদের যথাযথ বিচার ও শাস্তির দাবীও জানান তিনি।

খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণক মো: তাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময়েই খাদ্য পরিদর্শকসহ খাদ্য বিভাগের লোকজন ওএমএস ডিলারদের হাতে মারপিটের শিকার ও হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেগুলোর বিচার ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হলেও যথাযথ তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় বিচারে অগ্রগতি হয়নি বা দাপ্তরিক কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। সবশেষ খাদ্য পরিদর্শক নাজমুলের ওপর হামলার ঘটনা তথ্য প্রমাণ রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে খাদ্য কর্মকর্তা ও তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্তরা ক্ষুব্ধ রয়েছেন। তারা হামলাকারী ওএমএস ডিলার ও সহযোগীদের বিচার ও শাস্তির দাবীতে আন্দোলনও করেছেন। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টির সন্তোষজনক বিচারসহ যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রত্যাশা করেন তিনি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA