• E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

×

সারাদেশে ডিম সংকট, বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে আড়ৎদাররা

  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১২ পড়েছেন

দেশ প্রতিবেদকঃ

খুলনা জেলা ও মহানগরীতে প্রতিদিন ২লাখ ২৫ হাজার পিচ ডিমের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন ৪ লাখ পিচ ডিমের চাহিদার বিপরিতে বাজােও যোগান মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার পিচের মতো। এতো পরিমাণ ঘাটতি থাকায় প্রতিটি ডিমের বাজার মূল্য ১৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাগেরহাট ও রাজশাহী থেকে ডিম এনেও এ ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না। ফলে খুচরা বাজারে ডিমের দাম বেড়েই চলেছে। এদিকে সংকট ও উচ্চমূল্যেও কারণে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে পোল্টি্র মালিক সমিতির মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, খুলনা নগরীতে বাজার ব্যবস্থাপনা নেই। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি, বন্যার ভাঙ্গনে পাইগাছা উপজেলার ৬০ টি মুরগীর ফার্ম পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিদিন খুলনাসহ ৯টি উপজেলায় ৪ লাখ ডিমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ডিমের উৎপাদন কম। খুলনা বিভাগের বাইরে থেকে সোয়া ২ লাখের মতো ডিম বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। বাগেরহাট ও রাজশাহী থেকে ডিম এনেও ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছেনা। ফলে বাজােও দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিমের পাশাপাশি লেয়ার মুরগীর বাচ্চার দাম বেড়েছে। আগে ১ দিনের বাচ্চা ক্রয় করা হতো ৩০—৩২ টাকায় এখন তা ক্রয় করতে হচ্ছে ৭৫—৮০ টাকা। আবার ওই একদিনের বাচ্চা কোম্পানী থেকে ক্রয় করতে ৩—৪ মাস অপেক্ষা করতে হয়। এস এম সোহরাব হোসেন আরও বলেন, মুরগীর খাবারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য দেশী ও বিদেশী কয়েকটি কোম্পানীকে দায়ী করেছেন তিনি । এ সকল কোম্পানী দেশে বাচ্চা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারগুলোতে ডিমের সরবরাহ করে থাকে। তারা ইচ্ছামতো ডিমের দাম বাড়াচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তারা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ—সুবিধা পেয়ে থাকেন যেটি আমাদের মাঠ পর্যায়ের খামারীরা পান না। তারা স্থানীয় খামারীদের সাথে একটা প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম দেশে আমদানি করা হয়েছে। তার একটিও খুলনায় আসেনি। ডিমের মূল্য কমানোর জন্য তিনি খাবার ও বাচ্চার দাম কমানোর তাগিদ দিয়েছেন। বর্তমানে তার খামার থেকে পাইকারীতে ১০০ ডিম ১২৭০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, সরকার যেমন কৃষকদের সার ও ডিজেল ভতুর্কি দেয় সেরকমের সাহায্য করলে তরুণ সমাজ ডিম উৎপাদনে আগ্রহী হবে। ডিম উৎপাদনকারী ফার্মের সংখ্যা বাড়লে চাহিদা অনুযায়ি সরবরাহ বাড়বে এবং এ পণ্যের দাম কমবে।পাইকগাছা উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার খামারী প্রতিষ রায় বলেন, বেশিরভাগ ডিম খুলনায় সরবরাহ করা হয় এখান থেকে।

মাঝে বন্যার কারণে এ এলাকার বেশিরভাগ ডিম উৎপাদনকারী ফার্ম পানিতে তলিয়ে যায়। মাচা তৈরি করে সেখানে মুরগী রাখা হয়েছে। খাবারের মূল্য প্রতিবস্তায় ১ মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া ১ দিনের মুরগীর বাচ্চা ৯০—৯৫ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। যা ডিমের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন। নগরীর নিউমার্কেট কাঁচা বাজারে ক্রেতা স্কুল শিক্ষক মজিবর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারত থেকে ডিম আমদানি করে লাভ কী? খুচরা দোকানগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাদামি রঙের ডিম ১৫ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। জানতে চাইলে খুচরা ডিম বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডিমের বাজার চড়া। দাম কমছেই না। আমাদেরকে কখনও ১৩ টাকা, কখনো ১৪ টাকা, কখনো ১৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডিম কিনতে হচ্ছে। খুচরা বাজােও আমরা ৫০ পয়সার বেশি লাভ করতে পারছিনা। ৬০ টাকা ডিমের হালি দাম চাইলে অনেকেই ক্ষেপে যায়। সিন্ডিকেট ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে ডিমের বাজার চড়া। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মানুষের জীবন এখন অনেক সহজ হয়ে গেছ। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্ডিকেট চক্র দাম নির্ধারণ করে, যাতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের ডিম কিনে আনা এবং বিক্রি করার মূল্য খতিয়ে দেখতে হবে এবং পাইকারি ও খুচরা বাজারে সমানতালে অভিযান পরিচালনা করতে হবে বলে এ ব্যবসায়ী মনে করেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে সরকার প্রতিপিচ ডিম নির্ধারণ করে দেয় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। কিন্তু এ নির্দেশ মানা হচ্ছে না। খুলনায় খুচরায় প্রতিপিচ ডিম ১৪ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে দীর্ঘদিন পর গত শনিবার (১২ অক্টোবর) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট মীর আলিফ রেজার নেতৃত্বে একটি টিম বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে চাল, আলু, ডাল, আটা, কাঁচামরিচ, শাক—সবজি, ইলিশসহ বিভিন্ন রকমের মাছ ও মুরগির বাজার তদারকি করা হয়। টিমের সদস্যগণ বিভিন্ন দোকানের মালিকদের সতর্ক করে দায়সারা কার্যক্রম শেষ করেন। এরপর তাদের কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি।

ঢাকার পাইকারি আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধঃ ফার্মের মুরগির ডিমের বাড়তি দামের মধ্যে বাজারে ডিমের সরবরাহে সমস্যা শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রোববার রাতে তেজগাঁও আড়তে ডিমের কোনো ট্রাক আসেনি। শনিবার রাতেও খুব কম পরিমাণে ডিম বিক্রি করেছেন আড়তের বিক্রেতারা। তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তাঁদের ডিম কিনতে হচ্ছে। কিন্তু কেনা দামের ভিত্তিতে তা বিক্রি করতে পারছেন না। সরকার নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তাই ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানার ভয়ে তাঁরা মুরগির ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। ফলে গতকাল রাতে তেজগাঁওয়ে ডিমের কোনো গাড়ি আসেনি; কোনো ডিমও বিক্রি হয়নি। রাজধানীতে ডিম বিক্রির অন্যতম বড় পাইকারি বাজার হচ্ছে তেজগাঁও আড়ত। দেশের বিভিন্ন স্থানের খামার থেকে ট্রাকে করে এখানে ডিম আসে। এরপর তেজগাঁও থেকে ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া—মহল্লায় ডিম সরবরাহ হয়। ফলে তেজগাঁওয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ রাখলে সাধারণত খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ে। রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে সোমবার খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম ১৮০ টাকা ও সাদা ডিম ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের সরবরাহ তুলনামূলক কম বলেও জানান বিক্রেতারা। ডিমের পাশাপাশি ফার্মের মুরগির দামও চড়া। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০—২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০—২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হাইব্রিড ধরনের সোনালি মুরগির দাম এখন ২৬০—২৭০ টাকা কেজি। দুপুরে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই বাজারের কোনো দোকানে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে না। শুধু একটি দোকানে কয়েকটি লাল ও দুই ডজনের মতো সাদা রঙের ডিম পাওয়া গেছে। এসব ডিমের ডজন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। যদিও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই লাল ডিমগুলো বিক্রি হয়ে যায়। ওই দোকানের ডিম বিক্রেতা ফজুলল হক বলেন, ‘ফার্মের মুরগির যে ডিম দেখছেন, তা গতকালের। তা–ও কাঁঠালবাগান বাজার থেকে আনা হয়েছে। তেজগাঁও ডিমের আড়ত থেকে গত দুই দিনে কোনো ডিম কিনতে পারিনি।

এর মধ্যে গত রাতে সেখানে ডিম বিক্রি বন্ধ ছিল; আর তার আগের রাতে সরবরাহ ছিল খুবই কম।’অভিযানের ভয়ে বিক্রি বন্ধ ঃ গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে তা ১১ টাকা ৮৭ পয়সা হওয়ার কথা। সে হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এখন ১৭০—১৮০ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে। ডিমের এমন উচ্চ দাম বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিম উৎপাদক ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেই তারা ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করেছিল। সরকার নির্ধারিত এই দাম বাস্তবায়ন করতে ডিমের বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যৌক্তিক মূল্যে ডিম বিক্রি না করলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করছে। মূলত অভিযানের ভয়েই ডিম বিক্রি বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ জানান, সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিমের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনছেন তাঁরা। এ কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গতকাল রাতে তাঁরা পাইকারিতে ডিম বিক্রি করেছেন প্রতিটি ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এই ডিম তাঁরা কিনেছেন ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ২০ পয়সা দরে। আমানত উল্লাহ আরও জানান, তেজগাঁওয়ে দৈনিক ১৪—১৫ লাখ ডিম আসে। ঢাকায় ডিমের চাহিদা এক কোটি। তেজগাঁওয়ের বাইরে কিছু জায়গায় অনেকে ঠিকই উচ্চ দামে ডিম বিক্রি করছেন। কিন্তু বাড়তি দামে কেনাবেচার কারণে শুধু তাঁদের দায়ী করা হচ্ছে, অভিযান চালানো হচ্ছে। এ জন্য ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তাঁরা। ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরও বলেন, ‘সরকারের নিয়ম না মানলে জরিমানা ও শাস্তি হতে পারে। তাই এখন বিক্রি বন্ধ রেখে কী করা যায়, সে উপায় খুঁজছি।

আজকে (সোমবার) সকালে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে সভা থাকায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। বিকেলে আবার কথা বলতে যাব।’ তবে তেজগাঁও থেকে নিয়মিত ডিম কেনেন এমন কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা প্রথম আলোকে জানান, তেজগাঁওয়ে ডিমের গাড়ি না ঢুকলে তা শহরেরই ভিন্ন এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়। আজ ভোরে এমন কিছু জায়গা থেকে খুচরা বিক্রেতারা ডিম কিনেছেন। তবে এ বিষয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA