বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনা সরকারী মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৃশংস হামলার শিকার হয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় খুলনা ছাড়েন ছাত্রদল নেতা রায়হান বিন কামাল। ক্যাডার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ১৪ বছর পালিয়ে বেড়িয়েছেন ভুক্তভোগি। ৫ই আগষ্ট সরকার পতনের পর ২০১০ সালের হামলার ঘটনায় গত ২৯ শে অক্টোবর নিজে বাদী হয়ে খুলনা সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি। ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ১০/১৫ জন অজ্ঞাত আসামী করে বাদী রায়হান বিন কামাল এ মামলাটি করেছেন। এ মামলার আসামীরা হলেন ১) বি এম মহিম, রিপন করিব, ২)রিপন কবির, ৩) সবুজ হাজরা, ৪ রেজা, ৫) শেখ হাদী উজ্জামান সাদি, ৬) এস এম জমিরুল হক মিন্টু, ৭)অমিতাভ ঘোষ, ৮) ফয়জুল ইসলাম টিটু, ৯) দেবদুলাল বাড়ই বাপ্পি, ১০) রনবীর বাড়ই সজল, ১১) মেহের হোসেন সাব্বির, ১২) শওকত আলী হাসান, ১৩) শফিকুর রহমান পলাশসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জন। মামলা সূত্রে জানা যায়, মামলার বিবাদীরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে তৎকালীন সময়ে খুলনা মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাদী রায়হান বিন কামালকে একাধিকবার হামলা করে। যার ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ৮ই মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় বাদী রায়হান বিন কামালকে নগরীর পি.টি.আই মোড়ের অগ্রনী ব্যাংকের সামনে থেকে অনুসরণ করে সংগীতা হলের সামনে থেকে বাদী রায়হান বিন কামালকে বিবাদীরা অপহৃন করে। পিটিআই মোড় থেকে রায়হান বিন কামাল পিতার চিকিৎসার জন্য অগ্রনি ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। তখন সঙ্গীতা হলের কাছে বেবি ট্যাক্সি পৌছালে তৎকালীন সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ১নং আসামী বি.এম মহিমের নেতৃত্বে ১৪/১৫ টি মোটর সাইকেল এসে বাদীর বেবী ট্যাক্সি ঘিরে ফেলে থামিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডার ২ নং আসামী রিপন বাদীর বাম পাশে উঠে বসে এবং একটি পিস্তল বাদীর পেটে ঠেকিয়ে ধরে আর ডান পাশে ছাত্রলীগ ক্যাডার ৪ নং আসামী রেজা বাদীর হাত ধরে মারধর করে এবং ৬ নং আসামী জমিরুল পিস্তলের বাট দিয়ে বাদীর মাথায় আঘাত করে। তখন আশেপাশের লোকজন জড়ো হলে ১ নং আসামী মহিম ও ২ নং আসামী রিপনের নির্দেশে বেবী ট্যাক্সি ড্রাইভারকেসহ বাদীকে সংগীতা হলের সামনে থেকে শেখ পাড়ার ভিতর দিয়ে ময়লাপোতা ফরাজিপাড়াস্থ সাবেক স্পিকার এ্যাডঃ শেখ রাজ্জাক আলীর বাড়ীর সামনে নিয়ে যেয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার ও মাদক ব্যাবসায়ী ৫ নং আসামী সাদী বাদীর ব্যবহৃত মোবাইল মটোরোলা এল ৬ ও নোকিয়া ১১০০ এবং বাদীর কাছে থাকা তার পিতার চিকিৎসার জন্য পিটিআই মোড়ের অগ্রনি ব্যাংক থেকে উত্তোলিত ৫০,০০০/— (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জোর করে ছিনিয়ে নেয়। তখন বাদী রায়হান বিন কামাল বাধা দিলে ৫ নং আসামী সাদির হাতে থাকা ছুরি দিয়ে বাদীর বাম হাতে আঘাত করে। এরপর বেবী ট্যাক্সিসহ বাদীকে ১ নং আসামী মহিমের নেতৃত্বে ফুলমার্কেট নিয়ে যায়। সেখানে ১৩নং আসামী শফিকুর রহমান পলাশ ও ৮ নং আসামী ফয়জুল হক টিটু এবং ৯ নং আসামী দেবদুলাল বাড়ই বাপ্পী আগে থেকে উপস্থিত ছিলো। তারা বাদীকে মারার জন্য নির্দেশ দিলে ছাত্রলীগ ক্যাডার ৩নং আসামী সবুজ হাজরা বাদীর মাথার বাম পাশে চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। ১ নং আসামীর মহিমের হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে বাদীর বাম হাতে কোপ দিলে বাদীর বাম হাতের রগ কেটে যায় এবং ২নং আসামী রিপন হাতে এবং শরীরে কোপ দেয়। এরপর ৯নং আসামী দেবদুলাল বাড়ই বাপ্পী হাতে থাকা লোহার পাইপ দিয়ে বাদীর মাথায় আঘাত বাদীর মধ্যমা আঙ্গুল ভাঙ্গিয়া চার টুকরা হয়ে যায়। ১০নং আসামী সজলের হাতে থাকা লোহার রড দিয়া বাদীর বাম পায়ে আঘাত করলে বাদীর বাম পা ফেটে যায়। এক পর্যায়ে বাদী রাস্তায় পড়ে গেলে ১১ নং আসামী সাব্বির, ৭ নং আসামী অমিতাভ, ১২নং আসামী হাসানের হাতে থাকা লোহর রড দিয়ে বাদীর পিঠে এলোপাতাড়ি আঘাত করিলে বাদীর পিঠ ও ঠেঁাটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে যায়। তখন বাদীর মৃত্যু হয়েছে ভেবে আসামীরা পালিয়ে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন ও দোকানদার বেবী ট্যাক্সিতে করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া শুরু হলে আসামীরা খবর পেয়ে পুনরায় হাসপাতালে যেয়ে হামলা করে। পরিবার এবং সহকর্মীরা বাদীকে কোন রকম উদ্ধার করে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালের আইসিইউতে ২ দিন রাখার পরে শরীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হইলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে নিয়ে ভর্তি করা হয়। মামলার বাদী রায়হান বিন কামাল বলেন, ঐ সময় হামলার কারনে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বর যখম ও ভেঙ্গে যায়। যা এখনো দৃশ্যমান ও চিকিৎসাধীন। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের চিহ্নিত ক্যাডার এবং মাদক ব্যবসায়ীরা হামলা করে। আমি সুস্থ হয়ে তখন মামলা করতে চাইলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি এবং আমার পরিবারের ক্ষতির হুমকিও দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এতোদিন আইনের কোন সঠিক প্রয়োগ ছিলো না। ৫ই আগষ্ট সরকার পতনের পর মনে হয়েছে এখন সুবিচার পাবো। এজন্য মামলা দায়ের করেছি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া নৃশংস এ ঘটনার বিচার চাই। সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালের একটি হামলার ঘটনায় রায়হান বিন কামাল বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আমরা গ্রহণ করেছি। তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA