বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
এস এম মহিদার রহমান, সাতক্ষীরা :
সাতক্ষীরার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বহু অপকর্মের হোতা প্রধান শিক্ষক এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অবশেষে তাৎক্ষনিক বদলি করা হয়েছে। এর আগে বিদ্যালয়ের ১৯ জন স্বাক্ষরিত শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকবৃন্দ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, অনিয়ম, নারী লিপ্সা ও শিক্ষা পরিবেশ নষ্ট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু ও মহিলা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী পরিচালক মাধ্যমিক-১ দূর্গারানী শিকদার স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে তাৎক্ষনিকভাবে বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। এমনকি ওই বদলির আদেশে উল্লেখ করা হয় বদলির আদেশপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ১২ জুন রোজ বুধবারের মধ্যে বিমুক্ত হবেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন সাতক্ষীরা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১২ সালের ৭ জুলাই প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদান করার পর দীর্ঘ ১৩ বছর অনিয়ম, দূর্নীতি করে ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধবংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ে আবাসিক ভবন থাকা সত্তে¡ও অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ৩ তলায় তিনটি ক্লাসরুম দখল করে তিনি তার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ফলে রুম সংকটে ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।তিনি মোট ৪টি বিয়ে করেছেন। তবে বিদ্যালয়ে তিনি তৃতীয় স্ত্রী নিয়ে থাকেন। এই তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন তার সাবেক ছাত্রী। তিনি যখন জেলার তালা শহিদ আলী আহমেদ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে চাকুরী করতেন সেই সময়ে ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া উক্ত নাবালিকা ছাত্রীকে জোরপূর্বক বিয়ে করেছিলেন। তিনি যেমন অবৈধভাবে তিনটি ক্লাসরুম দখল করে থাকেন তেমনি একজন ছাত্রী অভিভাবিকাকে স্কুলের দুই তলায় থাকতে দেন। ওই অভিভাবিকা আবার বিউটি পার্লারে কাজ করেন। তার সাথে উক্ত প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক সম্পর্কের গুঞ্জন উঠলে বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য তাকে প্রতিষ্ঠানের বেসরকারী কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি যোগদানের আগে স্কুলে একটি পরিপূর্ন ল্যাব ছিল। তার যোগদানের পর অব্যবস্থাপনার কারণে ল্যাবটি সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি ওই ল্যাবে কম্পিউটার তো দুরের কথা চেয়ার টেবিল পর্যন্ত নেই। এদিকে স্কুলে নতুন শিক্ষিকা এলে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। এরুপ অবস্থার সম্মুখীন অনেক শিক্ষার্থীকেও হতে হয়েছে। ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে স্কুলের পুরাতন, চেয়ার, টেবিল, ফ্যান,বেঞ্জ ডায়াস সংরক্ষনের কোন রেজিস্টার করেন না। স্কুলের উক্ত দ্রবাদিসহ উদপাদিত ফলজ যেমন নারিকেল,আম কাঁঠাল রাতের আধারে ট্রাকে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বার্ষিক বরাদ্দ থেকে তিনি কোন খাতে কোন দ্রব্য ক্রয় করেন না। কেবলমাত্র ক্রয় ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিগত ১৩ বছরে ক্রয়ের কোন দ্রব্য স্কুলে নেই। তার ইচ্ছা খুশিমত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। স্কুল ক্যাম্পাসে ৫/৬টি অস্থায়ী দোকান ও সিড়ির নীচে একটি দোকান ভাড়া দিয়েছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এমনকি ওই ভাড়ার টাকা সরকারী খাতে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন বলেও অভিযোগ আছে। স্কুলের বেসরকারী ২০টি তহবিলের প্রত্যেকটির কমিটি থাকার কতা। কিন্তু তিনি ১৩ বছরে কোন কমিটি গঠন না করে নিজেই তহবিলের টাকা ব্যয় করেন এবং নিজে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ভর্তি বানিজ্য, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দূর্নীতি, ভ্যাট না দেওয়া, ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বানিজ্যে ঘুষ নিয়ে অদক্ষ শিক্ষক, কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক অর্থ কামিয়েছেন। তার এ ধরণের স্বেচ্ছাচারিতায় স্কুলটি ধবংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছায়েছে। তিনি যোগদান করার পর থেকে স্কুলের ফলাফলও ভালো না। এ বছরও স্কুল থেকে ১১ জন ফেল করেছে। তার ক্লাসগুলো না করে অন্য শিক্ষকের নিকট চাপিয়ে দিয়ে তিনি তার শয়ন কক্ষে অবস্থান করেন বলেও লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত নানাবিধ অভিযোগ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এনে স্থানীয় উক্ত দুই সংসদ সদস্যের নিকট লিখিত আকারে দেওয়ার পর তার তাৎক্ষকিক বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এদিকে তার বদলির বিষয়টি জানতে পেরে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী, অ.িাবকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও কর্মচারীরা জানান।এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুনের নিকট জানতে চাইলে তিনি ভুলত্রুটির উর্ধ্বে নয় বলে জানান। তবে তার বিরুদ্ধে ঢালাও যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেটা সঠিক নয়। তাৎক্ষনিক বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারী চাকুরী করলে বদলীতো হবেই।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA