মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ অপরাহ্ন
যশোর প্রতিনিধিঃ
সারাদেশের মধ্যে মোট সবজির চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় যশোর জেলার কৃষি খাত থেকে। এ জেলার কৃষকেরা ধানের পাশাপাশি সারাবছরই বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেন। ফুল চাষেও প্রধান যশোর জেলা। বিএডিসি কৃষি ফসলের মধ্যে বিশেষ করে ধান চাষে সেচ প্রকল্প নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা থেকে পিছিয়ে রয়েছে যশোর জেলার সবজির খাত। তবে এবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়ে যশোরের কৃষকদের সবজি চাষে সেচ প্রকল্পের আওতায় সেচ পাম্প নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
একটি বেসরকারি সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন যশোর সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ‘জলবায়ু বান্ধব সবজি ও ফুলের ভ্যালু চেইন (বিডি-৭১)’ নামক সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার কাশিমপুর,কচিয়া ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নে মোট ৪টি পরিবেশবান্ধব সৌরশক্তি চালিত সেচ পাম্প স্থাপন করেছে। এতে সহোযোগিতা করেছে যশোর কৃষি বিভাগ। স্থাপিত সেচ পাম্পগুলো স্থানীয় নারী সমবায় সমিতির মাধ্যমে স্বল্প খরচে কৃষি উৎপাদনে সেচ কাজে পরিচালিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭জুন) বিকেলে সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ডহেরপাড়ায় নির্মান করা সেচ পাম্পের উদ্বোধন করেন উদ্যোগ গ্রহনকারী সংস্থা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
প্রকল্পের নির্মাণ প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাদিক জানান, সৌর বিদুৎ চালিত ৪টি সেচ পাম্পের একেকটির ক্ষমতা ৫ হর্সপাওয়ার এবং পানির ডেলিভারি ৩ ইঞ্চি। সেচ পাম্প থেকে ঘন্টায় ৩৬ হাজার লিটার পানি উঠবে, যা প্রায় ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ করতে পারবে। তবে কৃষকেরা প্রয়োজনে একেকটি সেচ পাম্পে অতিরিক্ত পাইপ লাইন করে প্রায় ৫০ বিঘা পর্যন্ত সেচ সুবিধা নিতে পারবে।
এদিকে সবজি চাষে স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসায় খুশি এ অঞ্চলের সবজি চাষীরা। তারা বলছেন সময়ের পাশাপাশি সবজি উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে আসবে।
ডহেরপাড়া গ্রামের কৃষক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, অনান্য সেচ পাম্প থেকে সেচ সুবিধা নিতে হলে আমাদের বিঘা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হতো। স্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিতে গেলে আমাদের প্রতি চাষে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। তবে সৌর বিদুৎ চালিত এ সেচ পাম্প পেয়ে আমরা উপকৃত। কারন আমাদের ৩০০ টাকায় জায়গায় ১০০ টাকায় আমরা সেচ সুবিধা পাচ্ছি।’
জিয়াউর রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন, মাথার উপরে সূর্য থাকলেই আমরা সেচ পাম্প থেকে পানি পাচ্ছি। বিদুৎতের কোন ঝামেলা নেই আবার খরচও কম। আমাদের সময়ের পাশাপাশি খরচ অনেক কমে যাচ্ছে ফলে আমরা সবজি চাষে লাভবান হতে পারব।’
হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নূরুননাহার বলেন, আমরা যখন যশোর অঞ্চলে আসি তখন আমরা লক্ষ্য করলাম এ অঞ্চলে সবজির অনেক ভালো চাষ হয়। তবে সেচ সমস্যার কারণে এ অঞ্চলে নারী,পুরুষ সবজি চাষীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কারণ কিছু কিছু সেচ ডিজেল ও বিদুৎ চালিত। যার ফলে এখানকার চাষীদের সবজি চাষে লাভের পরিমান কমিয়ে দেয় এবং খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ু বান্ধব সেচ পাম্পের প্রতি আগ্রহ আছে। সেই দিক বিবেচনা করে আমরা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা এই সৌর বিদুৎ সেচ প্রকল্প কৃষকদের মাঝে নিয়ে এসেছি।’
জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের পরিচালক (কর্মসূচী) কাজী মাজেদ নেওয়াজ বলেন, যশোর অঞ্চলের সবজি চাষ ও বিপননে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতা আজ নতুন একটি মাত্রা যোগ হলো এ অঞ্চলে সবজি চাষীদের জন্য। এ অঞ্চলের সবজি চাষীরা স্বল্প খরচে সৌর বিদুৎ চালিত সেচ পাম্প থেকে পানি নিয়ে সবজি চাষে ব্যবহার করতে পারবে। আমরা আশা করি এর মাধ্যমে সবজি উৎপাদনের সাথে জড়িত কৃষকেরা লাভবান হবেন।’
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালল ডা: সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, যশোরের কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করে থাকে, যা যশোরের চাহিদা মিটিয়েও বাহিরের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এই সবজি চাষে কৃষকের সবথেকে বড় চ্যালেন্জ কৃষি জমিতে সেচের পানির স্বল্পতা। এই সমস্যা দূর করতে হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন নামের দুটি সংস্থা এগিয়ে এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের এ কাজে সহোযোগিতা করেছে।’
তিনি বলেন, সৌর বিদুৎ চালিত একেকটি এই সেচ পাম্পের আওতাধীন ২০-২৫ বিঘা জমিতে সেচ সমস্যা ছাড়াই কৃষকেরা নির্বিঘ্নে সবজি উৎপাদন করতে পারবে। কৃষকেরা চাইলে কমিটির মাধ্যমে পাইপ সংযোজন করে ৫০ বিঘা পর্যন্ত সেচ নিতে পারবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকেদর নিরাপদ, বালাইনাশক ও পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে পরামর্শ দিয়ে সব সময় পাশে আছে এবং থাকবে।’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA