বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৩ অপরাহ্ন
ড. সাঈদুর রহমানের কলামঃ
সেমিফাইনালেই স্বপ্নযাত্রা থেমে গেল আফগানিস্তানের। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তারা শুধু হেরেই যায়নি বরং অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। ক্রিকেট যে কতটা মস্তিষ্কের খেলা, এই ম্যাচে সেটা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করা গেল। টসে জয়লাভ করেছিলেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান। টসে জিতে তিনি প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার সেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে আফগানিস্তানের কাছে। ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমি স্টেডিয়ামের উইকেট যে এতটা বোলিং ফ্রেন্ডলি হতে পারে, সেটা রশিদ খান বিন্দুমাত্রও অনুমান করতে পারেননি। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করামও তা অনুমান করতে পারেননি। কারণ টসের সময় মার্করাম বলছিলেন যে, টসে জিতলে তিনিও আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিতেন। এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে সেরা উদ্বোধনী জুটি রহমানুউল্লাহ গুরবাজ-ইব্রাহিম জাদরান জুটি। তাদের দুজনেই গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল ম্যাচে ব্যর্থ হলেন। গুরবাজ ০ রানে এবং ইব্রাহিম জাদরান ২ রানে আউট হওয়ার পর আর কোন ব্যাটসম্যানই হাল ধরতে পারেননি। এক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানেরা ব্যর্থ হয়েছেন বলার চেয়ে বরং বলা উচিত, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলাররা যেমন স্যুইং পেয়েছেন, তেমনি স্পিনাররাও টার্ণ পেয়েছেন। ফলে ব্যাটসম্যানদের খুব বেশি কিছু করার ছিল না। আবার পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ব্যাট করতে নেমেছে, তখন কিন্তু আমরা দেখেছি যে উইকেট যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক হয়ে গিয়েছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের স্ট্রোক খেলাও সহজ হয়ে গেছে। আফগানিস্তান দল সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও এবারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠেই তারা ইতিহাস রচনা করেছে। আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা এমনিতেই অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। এবারের বিশ্বকাপের সাফল্য নিঃসন্দেহে তাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে। দলীয় সাফল্য ছাড়াও তাদের ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগতভাবে এবারের বিশ্বকাপে চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য দেখিয়েছে। বোলিং এবং ব্যাটিং দুই বিভাগেই শীর্ষ দুই ক্রিকেটার আফগানিস্তানের। শুধু তাই নয় শীর্ষ তিন জনের মধ্যে দুজনই আফগানিস্তানের ক্রিকেটার। রাহমানুল্লাহ গুরবাজ এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ২৮১ রান এবং ইব্রাহিম জাদদান করেছেন ২৩১ রান। বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও শীর্ষ পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই আফগান বোলার। ফজলহক ফারুকী ১৭ উইকেট নিয়ে সবার উপরে, রশিদ খান ১৪ উইকেট নিয়ে রয়েছেন ৩ নম্বরে এবং ১৩ উইকেট নিয়ে নাভিন-উল-হক রয়েছেন পঞ্চম স্থানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কথাও অবশ্যই কিছুটা বলতেই হয়। এবারের বিশ্বকাপে তারা দুবার হোঁচট খেতে খেতে বেঁচে গেছে। নেপালকে তারা হারিয়েছে ১ রানে এবং বাংলাদেশকে হারিয়েছে ৪ রানে। অপরাজিত দল হিসেবে তারা উঠে এসেছে ফাইনালে। এর আগে দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং ৫ বার ওডিআই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে একবারের জন্য ফাইনালে উঠতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই গেরো একবার যখন তারা খুলতে পেরেছে, আমার মনে হয় তারা যদি শিরোপা জেতে তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। একাধিকবার ভাগ্যের কাছে তারা মার খেয়েছে। তবে এবার হয়তো ভাগ্য তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। সেমিফাইনালে দুর্দান্ত বল করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের বিন্দুমাত্র সুযোগ দেয়নি হাত খোলার। মার্কো ইয়ানসেন অসাধারণ বোলিং করেছেন। একাধিকবার লাইনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও কিভাবে ড্রিম ডেলিভারি দেয়া যায় সেটা এই ম্যাচে তিনি করে দেখিয়েছেন। কাগিচ্ছসো রাবাদাও এই ম্যাচে অসাধারণ বল করেছেন। আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা স্পিন ভালো খেলেন। তারপরও তাবরাইজ শামসিও দারুণ বল করে তিন তিনটে উইকেট তুলে নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারে সবাই ক্লিক না করলেও কিংবা দ্রুত একটা বা দুটো উইকেট পড়ে গেলেও তারা কিন্তু খুব ভালো কাম ব্যাক করতে পারছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মত এই রকম একটা পেশাদার দল কেন এত বছরে একবারও বিশ্বকাপের কোন শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি, সেটা কিন্তু একটা বড় রকমের গবেষণার বিষয় হতে পারে।
লেখক: জাতীয় ক্রীড়া ভাষ্যকার, বেতার ও টেলিভিশন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA