বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৪ অপরাহ্ন
দুই অর্থবছরে ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি
বিশেষ প্রতিবেদকঃ
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার গত দুই বছরে আড়াই লাখ টনের বেশি কমে গেছে দেশে। যদিও তার আগের তিন বছর দেশে এলপিজির ব্যবহার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এর কারণ হিসেবে মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হওয়ার মতো বিষয় সামনে এনেছেন অপারেটররা।
দেশে ২০২৩—২৪ অর্থবছরে এলপিজির বাজার ২০২২—২৩ অর্থবছরের মতোই ছিল। সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া না গেলেও অপারেটরদের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে এলপিজির বাজার ছিল ১২ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টনের কাছাকাছি। অর্থবছরের হিসাব শেষ হলে এ অংক কিছুটা কমবেশি হতে পারে।
দেশের জ্বালানি খাতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে তিন অর্থবছর ধারাবাহিকভাবে এলপিজি আমদানি বেড়েছে। কিন্তু শেষ দুই অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি কমে গেছে।
এলপিজি ব্যবসায়ীদের সংগঠন এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘দেশের বাজারে এলপিজি আমদানি কমে যাওয়ার প্রধানত দুটি কারণ। প্রথমটি ডলার সংকট; দ্বিতীয়টি মূল্যস্ফীতি। উচ্চ দামে এলপিজি আমদানি করে সেই দামে দেশের বাজারে সরবরাহ করলে তা কেনার সক্ষমতা ভোক্তার নেই। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম এতটাই ঊর্ধ্বমুখী যে এলপিজির মতো পণ্য কিনতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে।’
দেশে ২০১৯—২০ অর্থবছরে এলপিজির চাহিদা ছিল ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ টন। ২০২০—২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৪১ হাজার ২৮৭ টনে। আরো বেড়ে ২০২১—২২ অর্থবছরে দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৯১ টনে। কিন্তু পরের অর্থবছরে (২০২২—২৩) এলপিজির ব্যবহার প্রায় আড়াই লাখ টন কমে যায়। ওই অর্থবছরে ১২ লাখ ৯৪ হাজার টন এলপিজি ব্যবহার হয়। আর চলতি বছর তা আরো কমে দাঁড়াতে পারে ১২ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টনে। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে এলপিজির ব্যবহার কমেছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৯৯১ টন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়েছে। ফলে এলপিজির মতো জ্বালানি পণ্যের ব্যবহার কমেছে। গত দুই অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামা করায় এলপিজির বাজারও ওঠানামা করেছে। বেশির ভাগ সময় দেশের বাজারে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় অনেকে বিকল্প হিসেবে রান্নার কাজে এলপিজি ব্যবহার না করে ইলেকট্রিক চুলা ও হিটারের ব্যবহার বাড়িয়েছে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে এলপিজি ব্যবহারকারীদের অনেকেই কাঠখড়িতে ফিরে গেছে। এছাড়া বাজারে এলপিজি আমদানিতে নিয়মিত এলসি খুলতে না পারা এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মূল্য নির্ধারণে কিছুটা জটিলতা থাকার নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে এ খাতে।
এলপিজি অপারেটর ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে গেছে, দেশে এলপিজির বাজার এখন ৩৫ হাজার কোটি টাকার। ৯৮ শতাংশ এলপিজি আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ করছে বেসরকারি অপারেটররা। বর্তমানে ২৫—২৬টি কোম্পানি এলপিজি বাজারজাত করছে। এর মধ্যে ১৮টি কোম্পানি সরাসরি বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে।
মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) আবু সাঈদ রাজা বলেন, ‘গত দু—তিন বছরে এলপিজি ব্যবহারের যে গতি ছিল, সেটা শ্লথ হয়ে গেছে। মূলত যে হারে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছিল, সেটি এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দু—তিনটি কারণে এমনটা হয়েছে। প্রথমত, গত দেড় বছর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় করতে গিয়ে দেশের বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে মানুষ এলপিজির ব্যবহারও কমিয়েছে। বহু এলপিজির গ্রাহক খরচ সাশ্রয় করতে কেরোসিন ও ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করছে। গ্রামাঞ্চলে এলপিজির ভোক্তারা কাঠখড়িতে ফিরে গেছে। অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি থাকলে এলপিজির ব্যবহার স্থিতিশীল থাকবে। এখানে ব্যবসায়ীদের আমদানি কিংবা এলসি জটিলতা বড় ব্যাপার নয়।’
ওরিয়ন গ্যাসের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) প্রকৌশলী অনুপ কুমার সেন বলেন, ‘বাজারে এলপি গ্যাসের দাম গত দুই বছরে বেশির ভাগ সময় ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপে ভোক্তারা অনেকেই বিকল্প জ্বালানিতে ঝুঁকেছে। যেমন ইলেকট্রিক চুলার ব্যবহার গত বছর ব্যাপক হারে বেড়েছে। আবার অপারেটরদের অনেকেই আর্থিক সংকট থাকায় আমদানি কমিয়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA